চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
আজ ১৭ মার্চ বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৪তম শুভ জন্মদিন। জাতীয় শিশু দিবস ও আজ সরকারি ছুটির দিন। ১৯৯৭ সাল থেকে বর্তমান সরকার এ দিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপনব করে আসছে। দিবসকে ঘিরে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফুর রহমান। জন্মের পর তাঁর আকিকা অনুষ্ঠানে নানা শেখ আবদুল মজিদ নাতির নাম রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। নাম রাখার সময় নানা ওই বাড়ির অন্যদের বলেছিলেন, আমার দেয়া এ নামটি এক সময়ে বিশ্বে আলোচিত এবং খ্যাতি লাভ করবে। বঙ্গবন্ধুর শৈশব কেটেছিলো টুঙ্গিপাড়ায়। খেলাধুলায়ও তিনি বেশ ভালো ছিলেন। শিশু বয়েসে বাড়ির গৃহশিক্ষকদের কাছে তাঁর লেখাপড়া শুরু হয়। এরপর পূর্ব পুরুষদের গড়ে তোলা গিমাডাঙ্গা টুঙ্গীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর স্কুল জীবন শুরু। পর্যায়ক্রমে গোপালগঞ্জের মিশনারী স্কুল ও মাদারীপুর স্কুলে লেখাপড়া করেন। ছাত্রজীবনে তাঁর ফুটবল খেলার প্রতি ছিলো যথেষ্ট আগ্রহ। ওই আগ্রহের সূত্র থেকে গোপালগঞ্জের ফুটবল টিমে তিনি অংশ নেন। গোপালগঞ্জের স্কুল থেকে মেট্রিক পাস শেষে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। বেকার হোস্টেলে থাকার সুবাদে সে সময় বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। জড়িয়ে যান হলওয়ে মনুমেন্ট আন্দোলনে। শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক জীবন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাস করেন।
পাকিস্তান-ভারত বিভক্ত হবার সময়ের দাঙ্গা দমনে বঙ্গবন্ধু সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মানুষের মাঝে মিশে গিয়ে কাজ করেন। পাকিস্তান হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজপথে নেমে পড়েন। ওই সময় সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট চলাকালীন তিনি প্রথম গ্রেফতার হন। কিছুদিন জেলে থাকার পর মুক্তি পান। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন, ‘উর্দুই হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। সে সময় বাঙালিরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ছাত্র সমাজের আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৪৯ সালে গ্রেফতার করে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বন্দী রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পর আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে। এরপর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬ দফা আন্দোলন। ৬ দফা আন্দোলনের এক দফা ছিলো বাঙালি জাতির স্বাধীনতা। বলা বাহুল্য, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে গণতন্ত্রকে কখনোই স্থিতিশীল হতে দেয়া হয়নি। সে থেকে সোচ্চার হয়েছিলো বাঙালি জাতি। ১৯৫৮ সালে সেনা প্রধান আইয়ুব খান অবৈধ ক্ষমতা দখলের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন এবং বাঙালি জাতিকে শাসন ও শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত করবার জন্যে যে স্বৈরতন্ত্রের পত্তন করেছিলেন তারই বিরুদ্ধে বাংলার জনগণ দীর্ঘদিন রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়েছিলো। ওই সময় আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক অত্যাচার, নির্যাতন, জেল, জুলুম ও মিথ্যে মামলায় হয়রানি ভোগ করতে হয়েছে। সে সময় জাতির এই মহান নেতা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অকুতোভয়ে দেশ ও জাতির মুক্তির সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিলেন বলেই তাঁর আজীবনের স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আজ বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার জন্যে অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচি দিয়ে দেশকে যুদ্ধের ধ্বংসসতূপের মধ্যে গড়ে তুলতে নতুন দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ এ স্বাধীন দেশে তখনও আইয়ুব-ইয়াহিয়ার দোসররা দেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, জনগণের অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা, নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও সময়োচিত পদক্ষেপ সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে দেশকে সঠিক গণতন্ত্রের পথে যখন তিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই ওই ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর ওপর চরম আঘাত হানে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাযজ্ঞ গোটা জাতিকে বিস্মিত করে তোলে।
আজ জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ৯৪ তম শুভ জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে। সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপনবকল্পে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা শিশু একাডেমী, শিশু সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে পৃথক কর্মসূচি।
জেলা প্রশাসনের কর্মসূচি
শিরোনাম:
বুধবার , ২৬ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১২ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।