চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
আজ ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। এদিনটি বাঙ্গালি জাতির জন্যে অত্যন্ত শোকাবহ একটি দিন। এদিন রচিত হয়েছিলো ইতিহাসের ঘৃণ্য কলঙ্কিত এক অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অমানিশায় হায়েনারা বেরিয়ে গেলো। সপরিবারে সংহার করলো ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। সেদিন দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে চেয়েছিলো একটি আদর্শকে হত্যা করতে। কিন্তু না, তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বাঙালি জাতির হৃদয়ে যে আদর্শ গেঁথে আছে, সে আদর্শকে হত্যা করতে পারে নি ঘাতকরা। তাই বঙ্গবন্ধু মরেনি। বাঙালির হৃদয়, মননে তিনি অবিনশ্বর, অবিনাশী।
যদি রাত পোহালেই শোনা যেতো/বঙ্গবন্ধু মরে নাই/যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই/তবে বিশ্ব পেতো এক মহান নেতা/আমরা ফিরে পেতাম জাতির পিতা। সত্যি, বাঙালির হৃদয়ে, মননে এমন ইচ্ছা জাগে অবিরত। ১৯৭৫ সালের পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। আর তখনি এ দিবসটিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে এদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এভাবেই চলে ২০০১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটিসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালনের বিষয়টি বাতিল করে দেয়।
এরপর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালে মহামান্য হাইকোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসটি সরকারি ছুটিসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে ঢাকাস্থ ধানম-ির ৩২ নম্বর বাড়িতে হঠাৎ প্রবেশ করে সে সময়কার কিছু সংখ্যক উচ্চাভিলাষী বিপথগামী সেনা অফিসার। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও বিদেশীদের চক্রান্তে এবং নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের সেদিন ওই হায়েনারা নৃশংসভাবে গুলি করে বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। বিশ্ব ইতিহাসের কলঙ্কিত এ হত্যাযজ্ঞের নেপথ্য নায়ক ছিলো সে সময়কার আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও বাংলার মীরজাফর খন্দকার মোশতাক আহমেদ। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয় নি, এ হত্যাকা-ের যেনো বিচার না হতে পারে সে জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোনো সভ্য জাতির ইতিহাসে বিরল।
বাংলার সেই মীরজাফর খন্দকার মোশতাককে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নিন্দা ও ঘৃণা জানিয়ে এসেছে বাঙালি জাতি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে যায়। কারণ, বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন এ দেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে। আর সেই মহান নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ জাতির ললাটে কলঙ্কের তিলক পড়ে যায়। সেই তিলক দীর্ঘ ষড়যন্ত্র ও ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির মধ্য দিয়ে মুছে ফেলা হয়।
জাতীয় শোক দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলায়ও নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি।
জেলা প্রশাসন, চাঁদপুর
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : আজ সোমবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন, সকাল ৯টায় চাঁদপুর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ অঙ্গীকারের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষের পুষপস্তবক অর্পণ, সকাল সাড়ে ৯টায় হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে শোক র্যালী বের হয়ে জেলা শিল্পকলা একডেমী মিলনায়তনে এসে র্যালী সমাপ্ত, সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য ভিত্তিক আলোচনা সভা, একই সময় জেলা ও উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্ব স্ব ব্যবস্থাপনায় জাতির জনকের জীবন আদর্শ নিয়ে আলোচনা সভা, শোক দিবসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কবিতা পাঠ, রচনা, চিত্রাঙ্কন,
হামদ্-নাত প্রতিযোগিতা, দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত, সকাল ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বাদ আছর ও সুবিধাজনক সময়ে জাতির জনকের আত্মার শান্তি কামনায় সকল মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়া, সুবিধাজনক সময়ে মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা এবং সুবিধাজনক সময়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন। এছাড়া আজ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চাঁদপুর স্টেডিয়ামের ডিআইপি প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনালেখ্য প্রদর্শনী।
আওয়ামী লীগ
বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনার্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে আজ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলনসহ দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণ, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, দলীয় কার্যালয়ে দিনব্যাপী কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল, শোক র্যালীতে অংশগ্রহণের জন্যে সকাল ৮টার মধ্যে সকল ওয়ার্ড থেকে ব্যানারসহ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় সম্মুখে জমায়েত, প্রত্যেক মসজিদ, মন্দির, গীর্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা ও তবররুক বিতরণ, বাদ জোহর চাঁদপুর ক্লাবে মিলাদ দোয়া ও তবররুক বিতরণ, প্রত্যেক ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং ইউনিটে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার, দোয়া অনুষ্ঠান ও তবররুক বিতরণ।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে জেলা, সদর উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিত থাকার জন্যে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উদ্যাপনে ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে সকল কর্মসূচি পালনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্যে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন জেলা নেতৃবৃন্দ।