চাঁদপুর প্রতিনিধি :”এসো মিলি মুক্তির মোহনায়” এ শ্লোগানকে ধারণ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চাঁদপুরবাসীর প্রাণের উৎসব মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা আজ ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হলেও এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসে। সন্ধ্যায় মাসব্যাপী বিজয় মেলার কার্যক্রমের সূচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আজ প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে মেলার কর্মকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন। এ ছাড়া সম্মানিত বিশেষ অতিথি থাকবেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদসহ রাজনৈতিক, পেশাজীবী এবং মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বিজয় মেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্বোধন করবেন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ৮নং সেক্টর কমান্ডার ও জেলা পরিষদের প্রশাসক লেঃ কর্নেল (অবঃ) আবু ওছমান চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য অঙ্গীকারের পাদদেশে সকাল ১০টায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন, পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিঃ মমিনুল হক, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইউসুফ গাজী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, জেলা ন্যাপ সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কালাম পাটোয়ারী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি নিরোধ বরণ অধিকারী, জেলা গণফোরাম সভাপতি অ্যাডঃ সেলিম আকবর।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ আব্দুল লতিফ শেখের সভাপ্রধানে সম্মানিত অতিথি থাকবেন বিজয় মেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার ও অ্যাডঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম এবং সাবেক মহাসচিব অ্যাডঃ তোফায়েল আহমেদ ও অ্যাডঃ একেএম সলিম উল্যাহ সেলিম। মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে দেশবরেণ্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ‘৭১-এর পটভূমি নিয়ে স্মৃতিচারণ। এ ছাড়া চাঁদপুর জেলার এবং জেলার বাইরে থেকে প্রায় ৬২টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এবং দেশের লোকজ সংস্কৃতি নিয়ে সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক এবং আবৃত্তি অনুষ্ঠান। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিজয় মেলার আয়োজনে থাকছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দুর্লভ স্মৃতি সংরক্ষণ প্রদর্শনী স্টল।
শিশুদের বিনোদনের জন্যে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বিজয় মেলা মাঠে থাকছে গ্রাম বাংলার লোকজ পুতুল নাচ ও নাগরদোলা এবং হসত্দ ও কুটির শিল্পের হরেক রকম আইটেম। ১৯৯২ সালে চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হয়ে এখনো ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। সর্বজনীন উৎসব হওয়ার সুবাদে মুক্তিযুদ্ধের সকল রাজনৈতিক দল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং সকল পেশার মানুষজন এবং চাঁদপুরের প্রশাসনের ঐকানত্দিক সহযোগিতায় এটি এখন স্থায়ীভাবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।
এ বছর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা গৌরবের একুশ বছরে পা রেখেছে। চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের সর্বজনীন প্রাণের উৎসবকে ঘিরে চাঁদপুর শহরটি পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়ে থাকে উৎসব মুখর। চাঁদপুর জেলা শহরের প্রায় ৫০টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এখন এ উৎসবকে সামনে রেখে প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে ওঠেছে। বিজয় মেলার অন্যান্য কর্মসূচির পাশাপাশি এ বছরও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাহসিকতার জন্যে চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া এ বছর নতুন সংযোজন হতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিতর্ক প্রদর্শনী, বিজয় মেলার আর্থিক সহযোগিতার জন্যে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ১০ টাকা মূল্যের কুপন ছাড়া হয়েছে। প্রথম পুরস্কার ৫০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশ ক’টি পুরস্কার রাখা হয়েছে। ড্র অনুষ্ঠিত হবে মেলার শেষ দিন।
চাঁদপুরের স্বনামধন্য মা ডেকোরেটরের মালিক স্বপন কুমার সাহার সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রায় ১ মাস যাবৎ মেলার বিশাল কর্মযজ্ঞের কাজ শুরু হয়েছে। যা শেষ হচ্ছে ৩০ নভেম্বর। অত্যনত্দ সুন্দর ও মনোমুগ্ধকরভাবে এ বছর বিজয় মেলার সাজসজ্জা ডেকোরেটরের কর্মীরা সাজিয়েছে। মেলার মাঠে শুরু হয়ে গেছে স্টল সাজানোর কাজ এবং দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা স্টল মালিকরা তাদের স্টলের সরঞ্জামাদি নিয়ে মাঠে প্রবেশ শুরু করে দিয়েছে। মাঠে সার্বিকভাবে এ সকল কাজগুলো মনিটরিং করছেন মাঠ ও মঞ্চ ব্যবস্থাপনা পরিষদের আহ্বায়ক হারুন আল রশিদের নেতৃত্বে উপ-পরিষদের সদস্যরা। এ ছাড়া পুরো বিজয় মেলার প্রস্তুতি নিয়ে যোগাযোগ এবং তদারকি ও মিটিং সিটিং চালিয়ে যাচ্ছেন বিজয় মেলার নির্বাহী পরিষদের মহাসচিব অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরণ।