আজ ১০ মহররম ১৪৩৫ হিজরী বৃহস্পতিবার পবিত্র আশুরা। প্রতিবছর আরবী মাস ঘুরে ঘুরে আমাদের মাঝে এ দিন আসে। ইসলামী ঐতিহ্য ও ইতিহাসে আশুরার পরিচিতি সূদুর প্রসারী। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত হোসাইন (রাঃ)-এর কারবালার বিয়োগান্তক স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় এই আশুরা। আশুরার দিনের পূর্বে মাসের মহররম মাসের ২য় তারিখে ইমাম হোসেন তাঁর সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে কারবালা নামক প্রান্তরে উপণীত হন।
সেখানে শত্র“পক্ষের সহিত বাদানুবাদে ১সপ্তাহ কেটে যায়। মহররমের আজ ৯ তারিখ। ইমাম শিবিরে পানি নেই কয়দিন থেকেই। একদিকে মরুভূমির উত্তপ্ত হাওয়া, তপ্ত বালুকা, তদূপরি পানি অভাব, পিপাসায় সকলের কণ্ঠতালু শুকিয়ে গিয়েছে। শিবিরের অভ্যন্তরে কচি বালকগুলো তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পানি পানি করে চিৎকারে আকাশ-বাতাস মুখরিত করছে। ধীরে ধীরে ৯ মহররমের সূর্য পশ্চিম দিকে অস্তমিত হলো। দেখতে দেখতে ১০ মর্হরম শুক্রবার রক্ত¯œাত প্রভাত-সূর্যটি পূর্বাকাশে উদিত হলো। আমর ইবনে সায়াদ আর কালক্ষয় না করে। বিশ সহ¯্রাধিক সৈন্য নিয়ে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনী উপস্থিত হলো। নবী বংশের আপনজনেরা দ্বীনের স্বার্থে নূরনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)Ñএর প্রিয় দৈহিত্র হযরত হোসাইন (রাঃ) তাদের সাথে বীরের মতো নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে জান্নাতবাসী হয়ে গেলেন। ইমাম হোসাইন নিজেকে উৎসর্গ করেছেন সত্যের পক্ষে, মিথ্যার বিরুদ্ধে। মুসলিম জাতি কখনো শিরকে নিচু করেনা বাতিলের সামনে সে শিক্ষার সুমহান আদর্শ দেখিয়েছেন ইমাম হোসাইন। তাই কারবালার এ স্মৃতি বিজড়িত নির্মমভাবে ইমাম হোসেনকে শহীদ করা নবী বংশের বিরুদ্ধে কুচক্রি ইয়াজিদ ও সীমোর চিরকালই ইসলামের কালো অধ্যায়ে ঘৃণাভরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। ইসলামে চার মাস সম্মানিত; তন্মোধ্যেÑ মহররম মাস অন্যতম। কেননা, শুধু মহররমের ১০ তারিখে কারবালার ঘটনা নয় এছাড়াও আদম (আঃ) সৃষ্টি, দুনিয়ায় পাঠানো, হযরত ইদ্রীছ (আঃ)-কে বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি, হযরত নূহ (আঃ) ও তার সঙ্গী-সাথীদের প্রলয়ঙ্কারী তুফান হতে রক্ষা, ইবরাহীম (আঃ)-কে অগ্নি হতে রক্ষা, মুসা (আঃ) ও ফেরাউনের ঘটনাসহ যাবতীয় প্রেক্ষাপট রয়েছে এ মহান আশুরার দিনে।
এদিন অত্যন্ত পবিত্র দিন। এদিনে এবং এর পূর্বের দিনে অর্থ্যাৎ, মহররমের ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখার ব্যাপারে সহীহ হাদিস বর্ণিত রয়েছে। ইসলামী ধর্মীয় সাংস্কৃতির অনুকূলে আশুরাকে বিভিন্নভাবে পালন করা যায়। যেমন- নফল রোজা রাখা, নামায পড়া, নবী বংশের উসিলা দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করাসহ আরোও বিভিন্ন বিষয় বিদ্যমান। তবে এদিনকে কেন্দ্র করে আতশবাজী, শরীরকে রক্তাক্ত ও যখম করা, হায় হোসেন! হায় হোসেন বলে নিজের উপর প্রচণ্ডভাবে আঘাত করা, বুকে উপর দু’হাতে আঘাত করাসহ যাবতীয় কাজ শরীয়ত সমর্থিত নয়। কেননা, কারবালা আমাদের জন্য ত্যাগ শিক্ষা দিয়েছে; ভোগ নয়, সত্যের উপর অবিচল থাকার বাস্তবতা দেখিয়েছে; নিজেকে বিক্রি হয়ে যেতে নয়, দ্বীনের উপর অটল থাকার ধৈর্য্য শিখিয়েছে; ভেঙ্গে যেতে নয়। তাই এ আদর্শ মানার মধ্যে সার্থকতা বিদ্যমান।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।