চাঁদপুর নিউজ=
আজ ২৬ রমজান পবিত্র শবে ক্বদর। আজ রাতে পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরীফ নাজিল হয়।
পবিত্র রমজান মানুষের ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির দিকদর্শন আল-কোরআন নাজিলের মাস। রমজান মাসের শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত ‘আল-কোরআন’ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর কাছ থেকে জিব্রাইল
ফেরেশতা মারফত সুদীর্ঘ ২৩ বছরে অবতীর্ণ হয়। এটি মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি বা পথপ্রদর্শক। মাহে রমজানে আল-কোরআনকে সর্বকালের সর্বলোকের জীবনবিধান ও মুক্তির সনদ হিসেবে পাঠিয়ে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
মাহে রমজানে শুধু কোরআন শরিফই নয়, বরং অন্যান্য আসমানি কিতাব এবং বহু সহিফাও নাজিল হয়েছে। মাহে রমজানের সঙ্গে আসমানি কিতাবের বিশেষ সম্পর্ক আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের প্রথম রাতে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ওপর সহিফাগুলো নাজিল করা হয়েছিল। রমজান মাসের ৬ তারিখ দিবাগত রাতে হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর ‘তাওরাত’ নাজিল করা হয়েছিল। রমজান মাসের ১২ তারিখ হজরত দাউদ (আ.)-এর ওপর ‘যাবুর’ নাজিল করা হয়েছিল এবং এ মাসের ১৩ তারিখ হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর ‘ইঞ্জিল’ নাজিল করা হয়েছিল এবং মাহে রমজানের এক বরকতময় রাতে, অর্থাৎ ২৭ তারিখ কদরের রাতে আল-কোরআন নাজিল করা হয়েছিল।’ (মুসনাদে আহমাদ, তাবারানি)
‘আল-কোরআন’ নাজিল হওয়ার কারণে রমজান মাসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা এত বেশি। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব এবং মুসলমানদের অনুসৃত প্রধান ধর্মগ্রন্থ ‘আল-কোরআন’ দুই পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আল্লাহর আরশে অবস্থিত লওহে মাহফুজ বা রক্ষিত ফলক থেকে সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একসঙ্গে লাইলাতুল কদরে দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমান ‘বায়তুল ইজ্জাত’ তথা ‘বায়তুল মামুরে’ অবতীর্ণ হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি (আল-কোরআন) কদরের রাত্রিতে নাজিল করেছি।’ (সূরা আল-কদর, আয়াত-১) দ্বিতীয় পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ওহি হিসেবে প্রয়োজনমতো বিভিন্ন ঘটনা ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নবুওয়াতের ২৩ বছর ধরে ধীরে ধীরে আল-কোরআন নাজিল হয়।
নবী করিম (সা.)-এর ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ‘লাইলাতুল কদরে’ হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকাকালে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.)-এর মারফত আল্লাহর কাছ থেকে প্রত্যক্ষ ওহিযোগে প্রথম ‘আল-কোরআন’ অবতীর্ণ হয়। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.)-এর প্রতি সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে ওহি অবতরণের সূচনা হয়েছিল। অতঃপর তাঁর মধ্যে নির্জনে উপাসনা করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তখন তিনি হেরা গুহায় রজনীর পর রজনী আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। এ অবস্থায় মাহে রমজানের এক বিশেষ রজনীতে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) কর্তৃক তাঁর কাছে পাঁচটি আয়াত প্রথম অবতীর্ণ হয়, ‘পড়ো! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে এঁটে থাকা বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন। পড়ো! আর তোমার প্রতিপালকই সর্বাধিক সম্মানিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সূরা আল-আলাক, আয়াত: ১-৫) দশম হিজরিতে বিদায় হজের সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সর্বশেষ ওহি অবতীর্ণ হয়, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম পূর্ণাঙ্গ করলাম আর তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৩)