মুহাম্মদ আবদুর রহমান গাজী
আজ ১৩ জুন (১৪ শাবান) শুক্রবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত। হিজরী সালের অষ্টম মাসের নাম শাবান। এ মাস রমজানের আগমনের বার্তা বহনকারী মাস। এ ছাড়া এ মাস কবরবাসী আত্মীয়-স্বজনের মাগফিরাতের নিমিত্তে দোয়া-দরুদ নফল ইবাদতের মাস এবং মানবের ভাগ্য বন্টনের মাস বলে অন্য মাসের তুলনায় এর মর্যাদা অনেক।
হাদীস শরীফে রাসূলে করীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, আমি হুজুর পাক (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা রমজানের রোজা রাখার নিমিত্তে শাবান মাসের রোজা দ্বারা নিজেদের শরীরকে পবিত্র কর। যে ব্যক্তি শাবান মাসের তিন দিবস রোজা রাখবে তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (ইবনে মাযাহ)
শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে ফজর পর্যন্ত) এ শুভ রজনীতে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বান্দাদিগকে আহবান করে বলে থাকেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো আমার নিকট তওবা করবে? আমি তার তওবা কবুল করবো। কে আছো আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করবে? আমি তাকে দান করবো। এ মহান রজনীতে আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট জীবের ভাগ্য বন্টন করেন। এ ছাড়া এ রাতে আল্লাহ তা’য়ালা সাত ব্যক্তির গোনাহ তাওবা ব্যতীত ক্ষমা করবেন না। তারা হলো : (১) যাদুকর (২) মদখোর (৩) জ্বেনাকারী (৪) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (৫) মুনাফেক (৬) আত্মীয়তা বিচ্ছিন্নকারী ও (৭) মুসলমান একে অপরের সাথে গোস্বা ভরে তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথা বলা ত্যাগ কারী। (ইবনে মাযাহ)
পবিত্র শবে বরাতের বরকত লাভের প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের ন্যায় বাংলাদেশে তথা চাঁদপুরের পাড়া-মহল্লায় মসজিদ ও বাসা-বাড়িগুলোতে মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবে এবং শহরের মসজিদগুলোতে আলোকসজ্জা ও আলোচনা, মিলাদ মাহফিল করবে।
এ রাতের আমল : এ রাতে হক্কানি ওলামায়ে কেরাম যেভাবে রাত জাগরণ করে ইবাদত বন্দেগী ও দান সদকা করেছেন তা হলো : ১৪ শাবান মাগরিব নামাজের আগে (অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে) লা হাওলা ওয়ালা কুওআতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিউল আযিম ৪০ বার পড়া। মাগরিব নামাজ আদায়ের পর দু রাকায়াত করে ছয় রাকায়াত আউয়াবিন নামাজ পড়লে ১২ বছরের নফল ইবাদতের ছাওয়াব আমলকারী ব্যক্তির আমলনামায় লিখা হয় (আবু দাউদ শরীফ)। অতঃপর নামাজ আদায় করে সমস্ত কবরবাসীর রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করে কিছু সময় জিকির আজকার করা। এশার নামাজের পর সূরা ইয়াছিন ৩ বার ও সূরা দোখান ৭ বার তেলাওয়াত করা। সূরা ইয়াছিন তেলাওয়াতকারীর মৃত্যুর যন্ত্রণা লাঘব হবে, কবরের আযাব কম হবে ও রুজি-রোজগার বৃদ্ধি পাবে। আর সূরা দোখান তেলাওয়াতকারীর ৭০টি মকসুদ পূর্ণ হবে। শবেবরাতের নামাজ কমপক্ষে ১২ রাকাত পড়তে হয়। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা ইখলাছ তিনবার করে অথবা যে কোনো সূরা মিলিয়ে শবেবরাতের নামাজ পড়া যায়। অতঃপর গভীর রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করা যেতে পারে। মূলত এ রাতটিতে যতো নফল ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকা যায় তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।