বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম
জন্মবার্ষিকী আজ ১৭ মার্চ। এ দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালিত হয়ে
আসছে। এবার এর সাথে যোগ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী। জাতির এই
মাহেন্দ্রক্ষণকে মুজিববর্ষ হিসেবে উদ্যাপন করবে দেশবাসী। অর্থাৎ ১৭ মার্চ
২০২০ থেকে আগামী ১৭ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত এক বছরের সময়কালকে মুজিববর্ষ হিসেবে
উদ্যাপন করা হবে।
মুজিববর্ষকে ঘিরে সরকারিভাবে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল। সে
আলোকে চাঁদপুরেও ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল। যেমন বৃহৎ পরিসরে শিশু
সমাবেশ, চাঁদপুর স্টেডিয়ামে মুজিব মেলাসহ আরো নানা কর্মসূচি। কিন্তু সব
কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়েছে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক করোনা ভাইরাসের কারণে।
জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সকল পর্যায়ের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা
হয়েছন। বিশেষ করে জনসমাগম ধরনের সকল কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মের ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ
গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে
শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফুর রহমান ও
মাতার নাম সায়েরা খাতুন। জন্মের পর তাঁর আকিকা অনুষ্ঠানে নানা শেখ আবদুল
মজিদ নাতির নাম রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। নাম রাখার সময় নানা ওই বাড়ির
অন্যদের বলেছিলেন, আমার দেয়া এ নামটি এক সময়ে বিশ্বে আলোচিত এবং খ্যাতি লাভ
করবে।
বঙ্গবন্ধুর শৈশব কেটেছিলো টুঙ্গিপাড়ায়। খেলাধুলায়ও তিনি বেশ ভালো ছিলেন।
শিশু বয়সে বাড়ির গৃহশিক্ষকদের কাছে তাঁর লেখাপড়া শুরু। এরপর পূর্বপুরুষদের
গড়ে তোলা গিমাডাঙ্গা টুঙ্গীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর স্কুলজীবন শুরু।
পর্যায়ক্রমে গোপালগঞ্জের মিশনারী স্কুল ও মাদারীপুর স্কুলে লেখাপড়া করেন।
ছাত্রজীবনে তাঁর ফুটবল খেলার প্রতি ছিলো যথেষ্ট আগ্রহ। ওই আগ্রহের সূত্র
থেকে গোপালগঞ্জের ফুটবল টিমে তিনি অংশ নেন। গোপালগঞ্জের স্কুল থেকে মেট্রিক
পাস শেষে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে তিনি ভর্তি হন। বেকার হোস্টেলে থাকার
সুবাদে সে সময় বঙ্গবন্ধু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। জড়িয়ে
যান হলওয়ে মনুমেন্ট আন্দোলনে। শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী ও রাজনৈতিক জীবন। ১৯৪৬
সালে তিনি বিএ পাস করেন।
পাকিস্তান-ভারত বিভক্ত হওয়ার সময়ের দাঙ্গা দমনে বঙ্গবন্ধু সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মানুষের মাঝে মিশে গিয়ে তিনি কাজ করতেন। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে সেখানকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি রাজপথে নেমে পড়েন। ওই সময় সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট চলাকালীন তিনি প্রথম গ্রেফতার হন। কিছুদিন জেলে থাকার পর মুক্তি পান। এদিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন, ‘উর্দুই হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। সে সময় বাঙালিরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ছাত্রসমাজের আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৪৯ সালে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পর আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। এরপর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ৬ দফা আন্দোলন। ৬ দফা আন্দোলনের এক দফা ছিলো বাঙালি জাতির স্বাধীনতা। বলা বাহুল্য, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে গণতন্ত্রকে কখনোই স্থিতিশীল হতে দেয়া হয়নি। সে থেকে সোচ্চার হয়েছিলো বাঙালি জাতি। ১৯৫৮ সালে সেনাপ্রধান আইয়ুব খান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন এবং বাঙালি জাতিকে শাসন ও শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত করবার জন্যে যে স্বৈরতন্ত্রের পত্তন করেছিলেন, তারই বিরুদ্ধে বাংলার জনগণ দীর্ঘদিন রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়েছিলো। ওই সময় আইয়ুববিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক অত্যাচার, নির্যাতন, জেল, জুলুম ও মিথ্যা মামলায় হয়রানি ভোগ করতে হয়েছে। সে সময় জাতির এই মহান নেতা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অকুতোভয়ে দেশ ও জাতির মুক্তির সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিলেন বলেই তাঁর আজীবনের স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আজ বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার জন্যে অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচি দিয়ে দেশকে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও গড়ে তুলতে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ এ স্বাধীন দেশে তখনও আইয়ুব-ইয়াহিয়ার দোসররা দেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, জনগণের অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা, নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও সময়োচিত পদক্ষেপ সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে দেশকে সঠিক গণতন্ত্রের পথে যখন তিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই ওই ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর উপর চরম আঘাত হানে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ওই ষড়যন্ত্রকারীরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যাযজ্ঞ গোটা জাতিকে স্তব্ধ ও বিস্মিত করে তোলে।
আজ জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর শততম জন্মবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে। সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে।
জেলা প্রশাসনের কর্মসূচি : ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষের কর্মসূচি শুরু হবে। তোপধ্বনি হবে অঙ্গীকার পাদদেশে এবং অঙ্গীকারের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। গতকাল ১৬ মার্চ থেকে আজ ১৭ মার্চ সকল সরকারি বেসরকারি ভবন আলোকসজ্জা। এছাড়া বিগতদিনের কর্মসূচি ছাড়াও নতুন কিছু জনহিতকর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচি :
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আজ ১৭ মার্চ ভোর সাড়ে ৬টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় সম্মুখে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, এরপর অঙ্গীকারের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিকেল ৫টায় দলীয় কার্যালয়ে কেক কাটা, আলোচনা ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। রাত ৮টায় দলীয় কার্যালয়ে আতশবাজি হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অংশ নেয়ার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী।