মিজান লিটন=
হারিয়ে গেছে হলুদ খামের চিঠি
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিস্তারের প্রভাবে হারিয়ে গেছে হলুদ খামের চিঠির যুগ। হারিয়ে যাচ্ছে ডাক বিভাগের পুরনো জৌলসও। টাকা লেনদেনের জনপ্রিয় ‘মানিঅর্ডার’ হারিয়ে যেতে যেতে মাঝখানে ইলেকট্রনিক মানি অর্ডারের প্রবর্তনে বেশ ঝলছে উঠেছিল। এখন আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চাপে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডাক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘পোস্টাল নেটওয়ার্ক : স্টে কানেক্টেড’। কিন্তু আজ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কোনো কর্মসূচি নেই। এবার পোস্টার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকার আহ্বান জানানো হলেও মোবাইল ফোন আর ভিডিও নেটওয়ার্কের এই সময়ে ব্যক্তি পর্যায়ের যোগাযোগ রক্ষায় চিঠি লেখার চল প্রায় উঠেই গেছে। সেজন্য হলুদ খামের চিঠি আর কেউ লেখে না এখন। এমনকি হারিয়ে গেছে পোস্ট কার্ডও।
কমছে ডাকসেবা : সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘরে বিস্তৃত ডাক নেটওয়ার্কে বর্তমানে অবিভাগীয় শাখা কর্মীসহ মোট ৩৯ হাজার ৮৮৭ জন কর্মী কাজ করছেন। বিস্তৃত নেটওয়ার্কের পরও নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলাতে হিমশিম খাচ্ছে এখন ডাকবিভাগ। ২০০৩ সালের পর গত ১০ বছরে নতুন কোনো শাখা ডাকঘর খোলা হয়নি। শাখা ডাকঘরের কর্মীদের বেতন-ভাতাও অনেক কম। গত আগস্টে ২৫ শতাংশ বেতন বাড়ার পরও শাখা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টারসহ অন্যদের বেতন দাঁড়িয়েছে ১১৩০ টাকা থেকে ১৬৫০ টাকা। কর্মীদের এই অল্প টাকার বেতনে কী ডাকসেবা দেবে ডাকবিভাগ ডাক কর্মকর্তারা বলেছেন, অধিকাংশ শাখা ডাকঘর থেকে বেতনের সমপরিমাণ আয়ও হয় না। এদিকে চিঠিসহ অন্যান্য সেবা সংকুচিত হয়ে পড়ায় ডাক বিভাগের বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।
কমছে মানিঅর্ডার : এরই মধ্যে ২০১০ সালের ৫ মে ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএস) অর্ডারের চালু করে ডাক বিভাগ বেশ সাড়া ফেলেছিল। তিন বছরে ১ কোটি ১০ লাখ মানি অর্ডার করেছে তারা। এ খাতে কমিশন বাদে নিট ৬৭ কোটি টাকা মুনাফাও করেছে। কিন্তু মাঝখানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কারণে ডাকের ইএমটিএস কমে গেছে। ২০১১-১২ সালে দিনে ১৮ হাজার মানি অর্ডার হতো। এখন সেই মানি অর্ডার দিনে ১০ হাজারে নেমে এসেছে। শুরুতে ডাক বিভাগ এককভাবে ইএমটিএস চালু করে। এরপর বাজারে প্রতিযোগী চলে আসে। তখন গ্রাহক ভাগ হয়ে যায়। অন্যদিকে বিকাশসহ অন্যরা যেখানে সারাদিন সার্ভিস দিতে পারছে সেখানে ডাক বিভাগের সার্ভিস প্রতিটি কর্মদিবসে অফিস সময়ের মধ্যে সারতে হয়। ডাটা সেন্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল আল মাহবুব বলেন, আমরা অন্য সার্ভিসগুলোর মতো দিনের যে কোনো সময় টাকা লেনদেন করতে পারি না। এ জন্য পিছিয়ে পড়ছে ডাকবিভাগ। ইএমটিএস আমরা আংশিকভাবে আউটসোর্সিং করার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে আরও বেশি সময় ধরে টাকা লেনদেন করা যাবে।
কমছে হলুদ চিঠি : মুঠোফোনের সহজলভ্যতার এই সময়ে আঙ্গুল টিপে মুহূর্তেই খুদে বার্তা পাঠিয়ে চিঠির কাজটি সেরে ফেলা যায়। ফলে, হলুদ খামের ব্যক্তিগত চিঠি এখন আর লিখে না মানুষ। হারিয়ে গেছে বহুল ব্যবহৃত পোস্ট কার্ডও। ডাক বিভাগের নতুন প্রজন্মের কর্মীদের অধিকাংশই এখন পোস্ট কার্ড চেনে না। কিনতে চাইলে দেশের অধিকাংশ শাখা ডাকঘরের কর্মীরা জানতে চান, পোস্ট কার্ড কী এদিকে বছর দশেক আগেও ডাক বিভাগ বছরে প্রায় ২২ কোটি চিঠি পরিবহন করত। এর মধ্যে হলুদ খামের ব্যক্তিগত চিঠির পরিমাণ ছিল বেশি। বর্তমানে চিঠির পরিমাণ বছরে ১২-১৪ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। ডাক কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্যক্তিগত হলুদ খামের চিঠি কমে গেলেও ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের বিকাশে অফিসিয়াল চিঠির পরিমাণ বেড়েছে।
কর্মসূচি নেই : বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে আজ ডাক বিভাগের কোনো কর্মসূচি নেই। সংস্থার মহাপরিচালক নায়েব দেলোয়ার হোসেন প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে ঝিনাইদহে গেছেন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রভাষ চন্দ্র সাহা জানান, কাল বৃহস্পতিবার ডাকভবনে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন প্রধান অতিথি থাকবেন।