স্টাফ রিপোর্টার:
আজ থেকে শুরু হচ্ছে চাঁদপুরে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। ইতোমধ্যে মেলার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ। আগামী ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবস হলেও বিজয়ের আনন্দে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চার করার লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও পহেলা ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে মেলাটি। গতকাল ৩০ নভেম্বর বুধবার বাদ মাগরিব বিজয় মেলা মাঠে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সর্বশেষ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজয় মেলার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ হামিদ মাস্টারের সভাপতিত্বে ও বিজয় মেলার মহাসচিব শহীদ পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আজকে যে উন্মুক্তভাবে আলোচনা করা হয়েছে এতে করে সকলের মন থেকে রাগ-অভিমান দূর হয়ে গেছে। আমরা চাই, স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা যেনো উদ্যাপন করা হয়ে থাকে। আরো বক্তব্য রাখেন বিজয় মেলার চেয়ারম্যান অ্যাডঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, অ্যাডঃ দেবাশীষ কর মধু, তপন সরকার, হারুন আল রশীদ, ইয়াহিয়া কিরণ, বিএম হান্নান, সোহেল রুশদী, শাহ মোঃ মাকসুদুল আলম, গিয়াসউদ্দিন মিলন, শরীফ চৌধুরী, রহিম বাদশা, ফেরদৌস মোর্শেদ জুয়েল, মানিক পোদ্দার, রফিকুল ইসলাম বাবু, কে এম মাসুদ প্রমুখ।
আজ সন্ধ্যায় বিজয় মেলা মঞ্চে ২৫টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে মেলার শুভ সূচনা হবে। এই শুভ সূচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর ম-ল। বিশেষ অতিথি থাকবেন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল ও বিজয় মেলা স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ।
১৯৯২ সালে শুরু হওয়া মেলাটি এ বছর উদ্যাপন করতে যাচ্ছে রজত জয়ন্তী। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতি বিজড়িত হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ। গত ৩ নভেম্বর থেকে এ মাঠে শুরু হয় মঞ্চ, বাণিজ্যিক স্টল ও বিভিন্ন সাজসজ্জার কাজ। মেলার ভেতরে ও বাইরে সকল কাজই সম্পন্ন করেছে মাঠ ও মঞ্চ কমিটি।
১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নির্দেশে চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতি কর্মী, নাট্যকর্মী ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সমন্বয়ে এ বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। তারপর থেকে মেলা কর্তৃপক্ষ ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করে আসছে মেলাটি। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাণিজ্যিক চিন্তাধারা ও অশালীনতার কারণে দেশের বহু স্থানেই মেলা আয়োজন করেও তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু চাঁদপুর বিজয় মেলা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে সমন্বয়, সাংস্কৃতিক ও সংবাদকর্মীদের সহায়তা ও আন্তরিকতায় অত্যন্ত সাফল্যের সাথে আজ ২৫ বছরে পা রেখেছে। প্রতি বছর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনও সর্বাত্মক সহোযোগিতা করে থাকে এ মেলাকে সার্থক করার জন্য। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও মেলার দর্শনার্থীদের সামগ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থে ভেতরে ও বাইরে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কটি যানজট মুক্ত রাখতে এবং দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তার দু’পাশের ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী মিনি স্টলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। গত বছরের মেলায় যে সকল ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কথা মাথায় রেখে এ বছর পূর্বের দোকানদারদেরকেই স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে সকল স্টল আসেনি তাদের স্থানে নতুন কোনো ব্যক্তিকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য এ বছরও থাকছে পুতুল নাচ, নাগরদোলার মত আয়োজনগুলো। চাঁদপুরের পুতুল নাচ বিগত বছরগুলোতে যে সুনাম কুড়িয়েছে তা এ বছরও ধরে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন মেলা কর্তৃপক্ষ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেলায় পুতুল নাচের নামে যে অশ্লীলতা প্রদর্শন হয় চাঁদপুর বিজয় মেলা তার চেয়ে ব্যতিক্রম। এখানে বাদ্যের তালে বাংলার ঐতিহ্যের প্রকৃত পুতুলকেই নাচানো হয়।
বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সাংস্কৃতিক ও নাট্য উপ-পরিষদ। এ বছর ৪০টি সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠন অংশ নিচ্ছে মেলার বৈকালীন ও সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে। এ বছর উপজেলা পর্যায়ের কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি মেলায় অনুষ্ঠানের জন্য। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা দলগুলোই মঞ্চ মাতিয়ে রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে সাংস্কৃতিক ও নাট্য উপ-পরিষদ। এ বছর ৮টি নাট্য সংগঠন ও ৩২টি সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নিচ্ছে মেলায়। নাট্য সংগঠনগুলোর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ হিরণ-কিরণ থিয়েটার, নারায়ণগঞ্জ সংশপ্তক থিয়েটার, অনন্যা নাট্য গোষ্ঠী, বর্ণচোরা নাট্য গোষ্ঠী, চাঁদপুর ড্রামা ও মেঘনা থিয়েটার উল্লেখযোগ্য। ৩২টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে সংগীত নিকেতন, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র, উদয়ন কচি-কাঁচার মেলা, সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়, উদয়ন সংগীত বিদ্যালয়, নৃত্যাঙ্গন, অগি্নবীণা সাংস্কৃতিক সংগঠন, রঙ্ িমিউজিক্যাল গ্রুপ, চাঁদপুর ললিত কলা, উদীচী জেলা সংসদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট উল্লেখযোগ্য। এ বছর মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে ১শ’ ৩৪টি বাণিজ্যিক স্টল। মঞ্চের বাঁ পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি বৃহত্তর স্মৃতি সংরক্ষণ স্টল। এ ছাড়াও দাপ্তরিক কাজ, আইনশৃঙ্খলা, লাকী কুপন ও ফায়ার সার্ভিসের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১টি করে স্টল। মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে প্রধান গেইট ছাড়াও নির্মাণ করা হয়েছে অতিরিক্ত আরও ৩টি গেইট। এ বছর মেলায় মোট ১৯ দিন থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। এ ১৯ দিনের মধ্যে প্রতিদিনই বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের গৌরবের বিজয় অর্জনের অজানা তথ্যগুলো নতুন প্রজন্মকে জানান দিবে।