আজ ১৭ রমযান ঐতিহাসিক বদর দিবস। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ এবং মুসলমানদের প্রথম বিজয়। ইসলামকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলীন করে দেয়ার জন্য বার-বার অপচেষ্টা চালিয়েছে অবিশ্বাসী কাফির মুশরিকরা। আর তার মোকাবেলায় মুসলমানদেরকে হাতে নিতে হয়েছে নাঙ্গা তরবারী। পান করতে হয়েছে শাহাদাতের অমৃত শরাব। বিশেষত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মাতৃভূমি ছেড়ে মদীনায় হিযরত কারার পর মক্কার কাফেররা ইসলামের পতাকা ধ্বংস কারার জন্য পাঁয়তারা করেছে। মুসলমানদের সাথে প্রত্যক্ষ মোকাবিলা হয়েছে দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমযান, বদর নামক প্রান্তরে। সংক্ষিপ্ত বিবরণ: আবু সুফিয়ান, মাখরামা এবং আমেরসহ ত্রিশ চল্লিশজনের একটি কাফেলা মক্কা থেকে শামে গিয়েছিল ব্যবসার উদ্দেশ্যে। হযরত নবী করীম (সাঃ) তাদেরকে বাধা দেয়ার জন্য ‘জুল উশায়বাহ’ নামক জায়গায় গেলেন। কারণ এই কুরাইশ কাফিররা মুসলমানদেরকে বাড়ি ভিটা হতে উৎখাত করে লুটে নিয়েছে সমস্ত সহায় সম্বল। তারা আবার বাণিজ্যের জন্য মদীনার পাশ দিয়ে শামে যাবে, আর শক্তি সঞ্চার করে মদীনা আক্রমণের ষড়যন্ত্র করবে। তাই তিনি সাহাবায়ে কেরামকে বদলা আদায়ের জন্য উৎসাহ দিলেন। এদিকে সংবাদ আসল শাম হতে প্রত্যাবর্তন করে তারা মদীনার নিকটবর্তী হয়ে গেছে।
কোন পূর্ব প্রস্তুতী ছাড়া প্রায় বিনা অস্ত্রে ৩টি ঘোড়া ও ৭০টি উটে করে ৩১৩ মুজাহিদ নিয়ে রওয়ানা হলেন তাদেরকে প্রতিরোধ করতে। মসজিদে নববীর ইমমতির দায়িত্ব দেয়া হলো অন্ধ সাহাবী হযরত ইবেন উম্মে মাকতুম (রাঃ)-কে। অন্যদিকে গুপ্ত সাংবাদিক দমদম ইবনে আমল আল গিফারী মক্কায় গিয়ে বাতনে ওয়াদীতে আরোহন করে উটের পিঠে দাঁড়িয়ে নিজের জামামা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে চেচিয়ে চেচিয়ে ঘোষণা দিল যে, আবু সুফিয়ানসহ তোমাদের সব মালামাল মুসলমানেরা হস্তাগত করে ফেলেছে। সাহায্য চাই! সাহায্য চাই! ঘোষণা শোনার সাথে সাথে আবু লাহাব ছাড়া বড় মাফের সব নেতাদের নেতৃত্বে তৈরি হলো সহস্রাধিক সৈন্যের বিশাল বাহিনী। দ্রুত গতিতে তারা পৌছে গেল মদীনার নিকটবর্তী বদর নামক স্থানে। অপর পক্ষে মুসলমানদের সামরিক প্রস্তুতী মোটেও ছিলনা। তবুও মহান আল্লাহ নির্দেশে মহানবী (সাঃ) সাহাবীদের সাথে নিয়ে যুদ্ধের জন্য দৃঢ় মনোবল গ্রহণ করলেন। উভয় পক্ষ পূর্ণ যুদ্ধের প্রস্তুতী নিয়ে সামনের অগ্রসর। রাসুল (সাঃ) ‘কলীবে দবর’ নামক কুপের কাছে তাবু গেড়ে আশ্রয় নিলেন। যাতে করে যুদ্ধের সার্বিক অবস্থা এখান থেকে পর্যাবেক্ষণ করা যায়। তাবুতে রাসূল (সাঃ) এর সাথে আবু বকর (রাঃ) ও সাদ ইবনে মুয়াজ (রাঃ) খোলা তরবারী নিয়ে পাহাড়া দিতে লাগলেন।
প্রচ- বেগে যুদ্ধ শুরু হলো। হুজুর (সাঃ) চিন্তিত হয়ে গেলেন। কাফেরদের সুসজ্জিত বাহিনী ও তাদের অবস্থান দেখে পেরেশান প্রায় এবং সাহাবীদের কথা চিন্তা করে কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর একসময় শাহাদাত আঙ্গুলী উপরের দিকে তোলে উচ্চ রবে আওয়াজ তোললেন ‘শাহাতিল উজুহ’ অর্থাৎ কাফেরদের চেহারা ধ্বংস হয়ে যাক। মহুর্তের মধ্যে যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল। কুরাইশরা পলায়ন শুরু করল এবং অনেকে পালাবার রাস্তাও খুজে পেলনা। যুদ্ধ শেষে রাসূল (সাঃ) আবু জেহেলের খবর জানতে চাইলে সকলে বললেন নিহত হয়েছে। শুনে রাসুল (সাঃ) বিভিন্ন দোয়া পড়ে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন। যখন তার মাথা কেটে সামনে আনা হলো তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, এটা আমার উম্মতের ফেরাউন ছিল। মুসলমানদের মধ্য হতে ২২ জন এ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তন্মোধ্যে ১৪ জন মুহাজির, ৬ জন খাজরাজী এবং ২ জন ছিলেন আউস গোত্রের।
অন্যদিকে কাফেরদের মধ্য হতে ৭০জন নিহত হল এবং ৭০ জন বন্দী হল। উক্ত বন্দীদের মধ্য হতে উকবা ইবনে আবু মুঈত ও নজর ইবনে হারেছ যারা খুবই চরম পর্যায়ের খোদাদ্রোহী ছিল রাসুল (সাঃ)-এর নির্দেশে এদেরকে হত্যা করা হয়। এযুদ্ধে মুসলমানদের দ্বিগজয়ী বিজয় আসল। আর পরবর্তী সময়ের জন্য মুসলমানদের একটি ভীত তৈরি হয়ে গেল।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২২ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।