কচুয়া কাদলার সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম মজুমদারের ভাই
আদম ব্যবসায়ী প্রতারক শাহ আলম
২০ বছর পর দেশে ফিরলেন দরবেশ সেজে
স্টাফ রিপোর্টার ॥
কচুয়া উপজেলার আদম ব্যবসায়ী শাহ আলম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর এক ভূক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ ও ভূক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, কচুয়া কাদলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম মজুমদারের বড় ভাই আদম ব্যবসায়ী প্রতারক শাহ আলম মজুমদার গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বিদেশ নেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ২০ বছর পূর্বে বিদেশে পাড়ি জমায়।
গত ৬ মাস পূর্বে দরবেশ সেজে শাহ আলম দেশে এলে চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের এক ভূক্তভোগী পরিবারের পক্ষে মৃত নূরুল ইসলাম মাষ্টারের ছেলে মোঃ জাকির হোসেন গত ১৫ মে রবিবার পুলিশ সুপার বরাবর টাকা আত্মসাত ও প্রতারণার বিষয়ে শাহ আলম ও তার স্ত্রী রেনু বেগমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের বিষয়টি পুলিশ সুপার আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এই প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা শাখার এস. আই মনিরুল ইসলাম উভয় পক্ষকে গোয়েন্দা শাখায় ডাকেন এবং সেখানে বিষয়টি মিমাংসার জন্য বৈঠক হয়। বৈঠকে টাকা নেওয়ার কথা উপস্থিত সকলের সম্মুখে স্বীকার করেন ও টাকা দিবে বলে আশ্বস্থ করেন। বিষয়টি মিমাংশার জন্য ঈদুল ফেতরের দুই দিন পর নির্ধারণ করা হয় কিন্তু প্রতারক শাহ আলম সেখানে আর হাজির হননি। এর পর থেকেই প্রতারক ভন্ড শাহ আলম ও তার লোকদেরকে দিয়ে একাধিকবার বৈঠকের কথা বলেও তিনি উপস্থিত হননি।
এই বিষয়ে অভিযোগ তদন্তকারী এস. আই মনিরুল ইসলাম জানায় গত কয়েকদিন পূর্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে গোলাম মোস্তফা মিশু নামে এক ব্যাক্তি আমাকে এই নম্বর ০১৭৩৩৯৫৪৫৮২ মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর না হওয়ার জন্য শাষায়। পরবর্তীতে খোজ নিয়ে জানা যায় তিনি হাজিগঞ্জ উপজেলর একটি ইউনিয়নের পাতি নেতা। এই নেতা বিভিন্ন সময়ে দলের পরিচয় ও নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রশাসন এবং হাজিগঞ্জের বহু মানুষকে হয়রানি করে আসছে।
সর্বশেষ ২২শে জুলাই বিষয়টি নিয়ে পূনারায় বৈঠকের কথা থাকলেও শাহ আলম মজুমদার আসেননি। অভিযোগ ও ভোক্তভোগীর কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ইটালি নেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক শাহ আলম মজুমদার। তার প্রতারণার শিকার হয়ে গ্রামের অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। তিনি তৎকালিন সময়ে বিদেশ নেবে বলে মানুষকে গলা কাটা ভিসা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। তার এই প্রতারনার বিষয়টি প্রকাশ হলে ভোক্তভূগিরা তাকে হাজীগঞ্জ, কচুয়ায় একাধিকবার মারধর করে আটকে রাখে। শাহ আলমের স্ত্রী রেনু বেগম ও তার ছোট ভাই বি.এন.পি নেতা খোরশেদ আলম মজুমদার টাকার জিম্মা নেয়। এক পর্যায়ে প্রতারক শাহ আলম মানুষের টাকা নিয়ে নিজেই বিদেশে (রোমানিয়া) চলে যায়।
অভিযোগকারীর বড় ভাই ভোক্তভূগী চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের সকদি পাঁচগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম মাষ্টারের ছেলে ইয়ার আহমেদ লিকসন জানান, ১৯৯৫ সালে আমাকে বিদেশ (দক্ষিণ কোরিয়া) নেওয়ার কথা বলে আমার বাবার কাছ থেকে এই প্রতারক শাহ আলম ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা চেক ও অন্যান্য প্রমানাধির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। টাকা নেওয়ার দু’ মাস পর আমার বিদেশ যাওয়ার ফ্লাইট কনফারম হয়েছে বলে আমাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। আমি সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাই। ঢাকা যাওয়ার পর এই প্রতারক আমাকে সহ আরো কয়েকজনকে একটি অন্ধকার রুমে ৭ দিন বন্দি করে রাখে। আমাদেরকে ঠিকমতো কোন খাবার দেয় না এবং তার লোকজনকে দিয়ে আমাদেরকে প্রায় মারধর করতো। তারা আমাদেরকে এক পর্যায়ে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করে। তাদের এই পরিকল্পনা বুঝতে পেরে আমি বাথরুমের লিংটার ভেঙ্গে গভির রাতে পালিয়ে আসি।
তিনি আরো জানায়, আমার বাবা প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তৎকালিন সময়ে আমার বাবার বেতন ছিলে ২ হাজার ৭শ’ টাকা। বাবার সামান্ন উপর্যনের টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে আমাদের ৬ ভাই বোনের পড়াশুনা করাই ছিলো খুব কষ্টকর।
আমার বাবা ও শাহ আলম ছিলো বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের মুরিদ এবং আমাদের ফুফুর বাড়ির পার্শ্ববর্তি বাড়ি তার। সেই সুবাদে তার সাথে আমার বাবার ভালো সম্পর্ক ছিলো। বাবার সরলতার সুযোগ নিয়ে সে আমাদের কাছ থেকে উক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়।
টাকা যোগার করতে গিয়ে আমাদের জাগা জমি, গাভী বিক্রি, ও মানুষের কাছ থেকে ঋণ করে এবং আমার মামা সর্দার আবুল বাশার তৎকালিন কচুয়া শিক্ষা অফিসের প্রধান অফিস সহকারী নামীয় চাঁদপুর জনতা ব্যাংক, যার হিসাব নং- টি- ২৭০৭ থেকে ১৪/০৯/১৯৯৫ ইং তারিখে শাহ আলম মজুমদার চেকের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা গ্রহন করে।
তিনি আরও বলেন বিদেশ না যেতে পারায় আমাদের পরিবার ধায় দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আমার মা অসুস্থ হয়ে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। মায়ের মৃর্র্ত্যুর পর আমার বাবা ব্রেন স্ট্রোক করে তিনি ও মারা যায়। এই প্রতারক শাহ আলমের দ্বারা আমরা যে ক্ষতি সাধন হয়েছি যা বর্তমানে কোটি টাকা দিলে ও শোধ হওয়র নয়। মানুষের টাকা মেরে আজ শাহ আলম শত কোটির মালিক। কিন্তু তিনি মানুষের টাকা না দিয়ে এলাকায় দরবেশ সেজে চলাফেরা করছে এবং পাওনাদারদেরকে বিভিন্ন লোক জন দিয়ে হুমকি ধমকি প্রদান করছে।