কচুয়ার চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম মজুমদারের ভাই
আদম ব্যবসায়ী প্রতারক শাহ আলমের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
কচুয়া উপজেলার কাদলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম মজুমদারের বড় ভাই আদম ব্যবসায়ী প্রতারক শাহ আলম মজুমদার সাধারণ মানুষের লাখ লাখ টাকা নিয়ে ২০ বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমায়। শাহ আলম ও তার স্ত্রী রেনু বেগমের বিরুদ্ধে চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের মৃত নূরুল ইসলাম মাষ্টারের ছেলে মোঃ জাকির হোসেন পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে ও ভোক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ইটালি নেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক শাহ আলম মজুমদার। তার প্রতারণার শিকার হয়ে গ্রামের অসংখ্য পরিবার নিস্ব হয়ে যায়। তিনি তৎকালিন সময়ে বিদেশ নেবে বলে মানুষকে গলা কাটা ভিসা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। তার এই প্রতারনার বিষয়টি প্রকাশ হলে ভোক্তভূগিরা তাকে হাজীগঞ্জ, কচুয়ায় একাধিকবার মারধর করে আটকে রাখে। শাহ আলমের স্ত্রী রেনু বেগম ও তার ছোট ভাই খোরশেদ আলম মজুমদার টাকার জিম্মা নেয়। এক পর্যায়ে প্রতারক শাহ আলম মানুষের টাকা নিয়ে নিজেই বিদেশে (রোমানিয়া) চলে যায়।
ভোক্তভূগী চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের সকদি পাঁচগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম মাষ্টারের ছেলে ইয়ার আহমেদ লিকসন জানান, ১৯৯৫ সালে আমাকে বিদেশ (দক্ষিণ কোরিয়া) নেওয়ার কথা বলে আমার বাবার কাছ থেকে এই প্রতারক শাহ আলম ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা নেয় চেক ও অন্যান্য প্রমানাধির মাধ্যমে। টাকা নেওয়ার দু’ মাস পর আমার বিদেশ যাওয়ার ফাইট কনফারম হয়েছে বলে আমাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। আমি সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাই। ঢাকা যাওয়ার পর এই প্রতারক আমাকে সহ আরো কয়েকজনকে একটি অন্ধকার রুমে ৭দিন বন্দি করে রাখে। আমাদেরকে ঠিকমতো কোন খাবার দেয় না এবং তার লোকজনকে দিয়ে আমাদেরকে প্রায় মারধর করতো। তারা আমাদেরকে এক পর্যায়ে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করে। তাদের এই পরিকল্পনা বুঝতে পেরে আমি বাথরুমের লিংটার ভেঙ্গে গভির রাতে ফালিয়ে আসি।
তিনি আরো জানায়, আমার বাবা প্রাইমারী স্কুলে সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তৎকালিন সময়ে আমার বাবার বেতন ছিলে ২ হাজার ৭শ’ টাকা। বাবার সামান্ন উপর্যনের টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে আমাদের ৬ ভাই বোনের পড়াশুনা করাই ছিলো খুব কষ্টকর।
আমার বাবা ও শাহ আলম ছিলো বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের মুরিদ এবং আমাদের ফুফুর বাড়ির পার্শ্ববর্তি বাড়ি তার। সেই সুবাদে তার সাথে আমার বাবার ভালো সম্পর্ক ছিলো। বাবার সরলতার সুযোগ নিয়ে সে আমাদের কাছ থেকে উক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়।
টাকা যোগার করতে গিয়ে আমাদের গাভী বিক্রি, জায়গা জমি বন্দক ও মানুষের কাছ থেকে ঋণ করে এবং আমার মামার (সর্দার আবুল বাশার) তৎকালিন কচুয়া শিক্ষা অফিসের প্রধান অফিস সহকারী নামীয় চাঁদপুর জনতা ব্যাংক, যার হিসাব নং- টি- ২৭০৭ থেকে ১৪/০৯/১৯৯৫ ইং তারিখে শাহ আলমকে ৪০ হাজার টাকার একিট চেক (চেক নং- ৫৬৯৯৮৫২) প্রদান করে যা শাহ আলম স্বাক্ষর করে টাকা গ্রহন করেন।
তিনি জানান, তৎকালিন সময়ে প্রতারক শাহ আলমের খপ্পরে পরে ফরিদপুরের দু’ ব্যবসায়ী, হাজীগঞ্জে কয়েকজন সহ একাধিক পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে নিঃস্ব করে দেয়। শাহ আলম বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার পর আমাদের টাকার বিষয়ে তার ভাই খোরশেদ আলম, স্ত্রী রেনু বেগম সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতে কয়েকবার বৈঠক হয়। বৈঠকে তারা ক্ষতিপূরণ সহ টাকা দিবে বলে স্বিকার করে। কিন্তু তা পরিশোধ করেনি। গত কয়েক বছর পূর্বে তার ছেলে মাহবুব ও কাহারকে বিষয়টি অবহিত করলে তারাও টাকা পরিশোধ করবে বলে আস্বস্তত করেন। কিন্তু আদো এ টাকা পরিশোধ করেন নাই।
এ বিষয়ে শাহ আলম ও তাদের ছেলেদের সম্পর্কে জানতে চাইলে কাদলা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানায়, তার ছেলে মাহবুব ও কাহার তাহারাও আদম ব্যবসার সাথে জড়িত। তারাও বহু লোকজন থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের প্রতারনার বিষয়টি পরবর্তী সংখ্যায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।