বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ বাধ্যতামূলক শ্রম অথবা জোরপূর্বক বিয়েতে আটকা পড়েছে। নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক শ্রম অথবা বিয়ে করার এই সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রকাশিত আধুনিক দাসত্ব প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, গত বছরের শেষের দিকেই কেবল বিশ্বজুড়ে ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া ওই সময়ে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করে একসঙ্গে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছেন।
এর মানে বিশ্বের প্রতি ১৫০ জনের মধ্যে প্রায় একজন আধুনিক দাসত্বের বেড়াজালে আটকা পড়েছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। আইএলওর প্রধান গাই রাইডারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক যে, আধুনিক দাসত্ব পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। মানবাধিকারের এই মৌলিক লঙ্ঘনকে কোনও কিছুই ন্যায্যতা দিতে পারে না।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারি আধুনিক দাসত্ব পরিস্থিতির আরও অবনতি ও অনেক শ্রমিকের ঋণের হার এবং তাদের জীবনযাত্রার ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
আর এসব সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাধ্যতামূলক শ্রমে আটকে রাখার ঘটনা বছরের পর বছর ধরে স্থায়ী হতে পারে এবং জোরপূর্বক বিয়ে আসলে ‘আজীবন কারাদণ্ড’র মতোই। আর এই সংকটে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে নারী ও শিশুরা।
আইএলও বলছে, বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজন শিশু। এই শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি বাণিজ্যিক যৌন শোষণের শিকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসী নন এমন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকদের তুলনায় অভিবাসী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক শ্রমের ফাঁদে আটকা পড়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) প্রধান অ্যান্তনিও ভিতোরিনো এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই প্রতিবেদনটি সব ধরনের অভিবাসনকে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত করার ওপর জোর দেয়।
বর্তমান বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই আধুনিক দাসত্বের উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া বাধ্যতামূলক শ্রমের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি এবং জোরপূর্বক বিয়ের এক চতুর্থাংশই বিশ্বের উচ্চ-মধ্যম আয়ের অথবা উচ্চ-আয়ের দেশের নাগরিক।
২০১৬ সালে জাতিসংঘ সর্বশেষ আধুনিক দাসত্বের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, সেই সময়ের তুলনায় বর্তমানে জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৬ সালের তুলনায় গত পাঁচ বছরে বিশ্বে জোরপূর্বক বিয়েতে আটকা পড়া মানুষের বেশিরভাগই নারী এবং তরুণীর সংখ্যা প্রায় ৬৬ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে।