
নতুন করে আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু হতে যাচ্ছে শিগগিরই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্বালানি বিভাগের প্রস্তাবে ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জ্বালানি বিভাগ সংযোগের নীতিমালা চূড়ান্ত করে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে জানিয়ে দেবে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আবাসিক গ্যাস সংযোগের নতুন করে চালুর বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চেয়েছিলাম। তিনি দিয়েছেন। এখন মন্ত্রণালয় নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেবে। তবে তিনি জানিয়ে দেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বাইরে কেউ সংযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, আবার আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু হতে পারেÑ এমন খবরে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিভিন্ন জোনাল অফিসগুলোয় প্রতারকচক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। আনাগোনা বেড়েছে বিভিন্ন শ্রেণির ঠিকাদারের। ইতোমধ্যে এসব ঠিকাদার গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ জমা নেওয়া শুরু করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন আমাদের সময়কে বলেন, নতুন করে আবাসিক গ্যাস সংযোগের কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। জোনাল অফিসগুলোয় ঠিকাদার এবং এক শ্রেণির প্রতারক ইতোমধ্যে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্র্থ নেওয়ার বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন, আমি গ্রাহকদের কাছে অনুরোধ করব- না বুঝে এবং সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না পেয়ে কেউ যেন টাকাপয়সা না দেয়। ২০১০ সালের পর থেকে সরকার অবাধ গ্যাস সংযোগ প্রদানে
লাগাম টেনে ধরে। বিভিন্ন সময়ে শিল্প বাণিজ্যিক এবং আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে রাখে। মাঝখানে শর্তসাপেক্ষে গ্যাস সংযোগ চালু করলেও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ২০১৪ সাল থেকে আবাসিক গ্যাস সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে নতুন করে সরকার গ্যাস সংযোগের সিদ্ধান্ত নিলে দীর্ঘ ছয় বছর পর আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু হবে। দেশজুড়ে লাখ লাখ গ্রাহক নতুন সংযোগ, চুলা বৃদ্ধির অপেক্ষায় আছে। গ্রাহকদের গ্যাসের চাহিদাকে পুঁজি করে বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির অসাধু কিছু কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার লাখ লাখ অবৈধ গ্যাসের সংযোগ দিয়েছে ইতোমধ্যে। সরকার এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। আবার নতুন করে বৈধ সংযোগ দেওয়ার পথও বন্ধ করে রাখায় গ্যাস পুড়লেও রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে কয়েক দফা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুপারিশ গেছে আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু করার।
বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবিএম আব্দুল ফাত্তাহ আমাদের সময়কে বলেন, অবৈধ সংযোগ বা নতুন সংযোগের প্রত্যাশা এসব বিষয় নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছি। তবে গ্যাস সংযোগ নতুন করে চালু হবে কিনা সেই বিষয়টি এখনো জানি না।
করোনার কারণে দেশে জ্বালানির চাহিদা কমেছে। কিন্তু তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানির জন্য কাতার এবং ওমানের সঙ্গে যে চুক্তি রয়েছে সে অনুযায়ীই আমদানি অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানি কমানোর জন্য কাতার এবং ওমানের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা চুক্তির বাইরে কিছু করতে সম্মত হয়নি। ফলে অতিরিক্ত গ্যাস দিয়ে কী করা হবে সেটি এখন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বালানি বিভাগের সাম্প্রতিক কয়েকটি বৈঠকে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছে, করোনার কারণে নতুন শিল্প সংযোগ বৃদ্ধি পাবে না। এ ছাড়া শিল্প উৎপাদনও বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত গ্যাসের চাহিদাও বাড়বে না। ফলে বিকল্প গ্যাস ব্যবহারের খাত হিসেবে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ চালু করার পক্ষে মত দেন।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, আবাসিক গ্যাস সংযোগ কাগজে-কলমে বন্ধ করলেও প্রকৃতপক্ষে সেটা বন্ধ করা যায়নি। গত সাত-আট বছরে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় যত নতুন ভবন হয়েছে সবখানে গ্রাহক নিজের মতো করে চুলা বাড়িয়ে নিয়েছে। অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়াটা বন্ধ থাকায় তারা সেটা নিতে পারেনি। তবে অধিকাংশ গ্রাহকই চায় বৈধ প্রক্রিয়ায় সংযোগ নিতে এবং নিয়মিত বিল দিতে। কিন্তু সংযোগ বন্ধ থাকায় একদিকে গ্যাস পুড়ছে, মানুষ অবৈধ ব্যবহারের গ্লানি নিয়ে আছে। সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না। তিনি বলেন, মাঝখানে বিতরণ কোম্পানি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রাহকদের অবৈধ ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে নিজেরা বিল তুলে লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, আবাসিকে গ্যাস দিলে কোনো সমস্যা হবে না। অনেক বাসাবাড়ি রয়েছে, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে হয়তো গ্যাস রয়েছে কিন্তু পরের ভবনের বর্ধিত অংশে আর তারা গ্যাস নিতে পারেনি। আবার অনেকে ডিমান্ট নোটের টাকাও জমা দিয়ে বসে আছেন তাদের আমরা গ্যাস দিতে পারিনি। আবার এমনও অনেক জায়গা রয়েছে, যারা অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করছে। সেখান থেকে আমরা কোনো রাজস্ব পাচ্ছি না। সংযোগ বৈধ হলে সেখান থেকে রাজস্ব পাওয়া যেত। ফলে আমি মনে করি, মানুষকে বৈধভাবে গ্যাস নেওয়ার সুযোগ দিলেই ভালো।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে সিবিএ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। নতুন করে আবাসিক সংযোগ চালু হলে সিবিএর ভূমিকা কী থাকবে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস সিবিএ সভাপতি মো. কাজিম উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, আমরা চাই মাইলের পর মাইল যে অবৈধ সংযোগ পড়েছে সেগুলো অপসারণ করা হোক। অথবা নিয়মের মধ্যে এনে বৈধতা দেওয়া হোক। তাতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। সিবিএ সব সময় অবৈধ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে। সরকার গ্যাস সংযোগ প্রদানে যে নির্দেশনা দেবে, সিবিএ নেতাকর্মীরা প্রশাসনের পাশে থেকে তা বাস্তবায়ন করবে। কাউকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণার সুযোগ দেবে না।
আমাদের সময়-১-৭-২০২০