মিজান লিটন=
চাঁদপুর: ‘আমি বহুত কইছি বাইরে গণ্ডগোল, ওইদিকে যাইস নারে বাপ। ভাত খাইয়া কামে চইল্লা যা। ক্যান পোলাডা আমার কতা হুনল না। হুনলে তো আর এরুম হইতো না। এহন আমার পোলাডারে কে ফেরত দিবো।’
সন্তান আরজুকে হারিয়ে বুকফাটা কান্নার আর্তনাদ মা ফরিদা বেগমের। যাকেই দেখছে তার কাছেই সন্তান ফেরত চাইছে। টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন ২৮ অক্টোবর চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নিহত আরজু হোসেন বল্টুর মায়ের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ-বাতাস।
ছেলেকে ভাত খাওয়ানোর ইচ্ছা পূরণ হলো না মা ফরিদা বেগমের। রাজনীতির মাঠে ডালভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন আজ বিপন্ন ভ্যানচালক বাবা মুকবুল হোসেনের। রাজনীতির বলি ছেলে আরজু হত্যার বিচার চাইলেন তিনি। প্রশাসনের কাছে এটুকুই তার শেষ ফরিয়াদ। কিন্তু পাবে কি সে বিচার, এরকম হাজারো আরজুর বিচারতো দোদুল্যমান।
আরজুর বাবা মকবুল হোসেন জানান, ‘নয়ন ও আরজুকে নিয়ে আমাদের সুখী সংসার ছিল। বড় ছেলে নয়ন আমার সাথে ভ্যান চালায়। ছেলে দু’টিকে অভাবের সংসারে লেখাপড়া করাতে পারিনি। সুতার ফ্যাক্টরিতে ২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতো আরজু। নিজে খরচ করে কিছু থাকলে মাকে দিতো সংসারের অভাব মোচনে। এভাবে দিন কেটে যাচ্ছিলো আমাদের। কিন্তু নিয়তি আজ তার সংসারে কালো মেঘ ভর করেছে।’
এদিকে, কিশোর আরজুকে জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ছাত্রদল কর্মী দাবি করে বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আর কতদিন রাজনৈতিক বলি হবে সাধারণ মানুষ। লাশ নিয়েই আর কতদিন চলবে এ টানা পোড়েন। এর শেষ কোথায়। আর যেন দীর্ঘ না হয় লাশের মিছিল। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে এটাই প্রত্যাশা চাঁদপুরের জনগণের।