স্টাফ রিপোর্টার :
চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান ভুট্টোকে কুপিয়ে হত্যা মামলার এজহারভুক্ত ৩ আসামীকে আটক করেছে মডেল থানার পুলিশ।
আজিজুর রহমান খান ভুট্টো হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী নিলিমা আক্তার রিমা বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় একই এলাকার সিরাজ খানের ছেলে সোহাগ খান (৩০), মোস্তফা খান কালুসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। মডেল থানার মামলা নং ১৬ তারিখ ১৮/৫/২০২০।
মামলায় তদন্তকারি কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক রাশেদুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গত ১৯ মে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা খান কালু (৪৮) পিতা মৃত : শামছুল হক খান, মনসুর খান (৩৮) পিতা মৃত আ. লতিফ খান ও সুমন খান (৩৪) পিতা হান্নান খান সর্ব সাং কুমারডুগী ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন চাঁদপুর সদর আটক করে। আটককৃতদের আদালতে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ ।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কমকতা এসআই রাশেদ জানান, এই মামলায় এজহার নামীয় ৩জন আসামীকে আটক করেছি । তাদেরকে জিজ্বাসাবাদ করা হবে এবং রিমান্ড চাওয়া হবে । এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত সম্পতিগত বিরোধই এ হত্যাকান্ডের কারণ দেখা যাচ্ছে । তারপরও আসামীদের রিমান্ডে আরো গুরুত্বপুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে । সেই সাথে প্রধান আসামী সোহাগ খানকে যে কোন মুহুর্তে গ্রেফতার করা হবে । মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে । আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই কি কারণে ভুট্রো খানকে হত্যা করা হয়েছে তার মোটিভ বের করা সম্ভব হবে ।
চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাসিম উদ্দিন বলেন, আজিজুর রহমান ভুট্টো হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্তকারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তদন্ত করে দোষীদের আটকেরর মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হত্যার স্বিকার আজিজ খানদের সাথে একই এলাকার সিরাজ খানদের সম্পত্তিগত বিরোধের মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। প্রতি পক্ষরা প্রায় সময় তাকে হত্যার হুমকি দিত বলে তার স্ত্রী জানায়।
আরো জানায়, আজিজের চিৎকারে যারা বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিল তারা সিরাজ খানের ছেলে সোহাগ খান ও মোস্তফা খান কালুকে ঘটনাস্থলে দেখতে পেয়েছে। হত্যা কান্ডের পর থেকে সোহাগ খান পলাতক রয়েছে।
উল্লেখ. সোমবার ১৮ মে রাতে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কুমারডুগী খান বাড়ীতে আজিজুর রহমান মোটর সাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। পথে একদল দুর্বৃত্ত তাঁর উপর হামলা করেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁর গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাত করেন। পরে তাঁকে পাশের পুকুরে ফেলে চোবান। আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়টি নিয়ে তার বন্ধু ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান পাটওয়ারী জানান, সোমবার ১৮ মে বিকেলে তার কুমারডুগীস্থ এলাকায় সারের দোকান থেকে আমিসহ বাকিলা বাজারে যাই। সেখান থেকে তার বাচ্চাদের জন্য কিছু কেনাকাটা করে মোটরসাইকেল যোগে আসার সময় আমাকে মহামায়া হানাফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নামিয়ে দিয়ে সে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। আমি বাড়িতে গিয়ে পৌছার কিছুক্ষণ পর ভুট্টোর বাড়ির লিটন নামের এক ব্যক্তি ফোন করেন আমাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত লিটনের কলটি ধরতে পারিনি। এরপরই শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক মোঃ ফারুক বেপারী আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানালে আমি সাথে সাথেই ছুটে আসি।
স্থানীয়রা জানায়, আজিজুর রহমান খান ভুট্টো রাত পৌনে ১১টার সময় বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির কাছেই ওঁত পেতে থাকা কয়েকজন যুবক ভুট্টোর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তার ডাক চিৎকারে স্থানীয় আজমির, অপি, ঝিকু ও মাইনুদ্দিন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখেন ভুট্টোর চাচা সিরাজ খানের পুত্র সোহাগ খান ভুট্টোর গলায় ছুরি চালাচ্ছে। তাদের দেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন সোহাগসহ ওই সংঘবদ্ধ দলের সদস্যরা। কিন্তু খুনিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও তাদের রেখে যাওয়া ৪টি মোবাইল ফোন, রড, ছুরি ও ৫ জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়।
সামছুজ্জামান পাটওয়ারী আরো জানান, ভুট্টো পারিবারিকভাবে ৩ সন্তানের জনক। তার বড় ছেলে চাঁদপুর হাসান আলী হাই স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে, দ্বিতীয় ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র এবং মেয়েটির বয়স মাত্র ৩ বছর।
তিনি আরো জানান, সম্পত্তিগতভাবে সোহাগসহ অন্যন্যদের সাথে ৪টি মামলা ছিলো। ৩টি মামলা ভুট্টোর পক্ষে রায় হয়ে আরেকটি মামলা চলমান আছে। ধারনা করা হচ্ছে সম্পত্তিগত বিরোধের জেড় ধরেই এ ঘটনা ঘটাতে পারে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ–সভাপতি আজিজুর রহমান খান ভুট্টো কুমারডুগীস্থ এলাকায় সারের ব্যবসা করতো। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন।