মনিরুল ইসলাম মনির:বাংলা নববর্ষের উৎসব আর ২ দিন পর। বর্ষবরণ উৎসবে হালে অনেকের উপকরণ হচ্ছে পান্তা ইলিশ। একদিনের এই বাঙালিপনার জন্য প্রতিবছর নববর্ষে ইলিশের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর এ চাহিদাকে পুঁজি করে ইলিশের দাম হয় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতি বছরের এ চিত্র মতলবের ইলিশের মোকামে। গতবছর নববর্ষের একদিন আগে সব রেকর্ড ভঙ্গ করে পাইকারি বাজারে এক কেজির উপরের সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের দাম হয়েছিল ৪ হাজার ৫০ টাকা। এবারও একই পথে এগুচ্ছে ইলিশের দাম। গতকাল এক কেজির বেশি সাইজের ইলিশের মণ ছিল ৯০ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ২২৫০ টাকা। নববর্ষের আগে ওই ইলিশের কেজি গতবছরের মতো ৪ হাজার টাকার বেশি হবে বলে আশা করছেন ইলিশ ব্যবসায়ীরা। এ আকাশ ছোঁয়া দামের কারন মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে হাইমচর- আলেকজান্ডার পর্যন্ত মার্চ-এপ্রিল দু’মাস অভয়াশ্রম। জেলে নির্ভিঘ্নে মাছ ধরতে পারে না।
ইলিশের এ আকাশ ছোঁয়া দামের কারণ সম্পর্কে মতলব উত্তরের ষাটনল বাবুর বাজার মৎস্য আড়ৎদাররা জানিয়েছেন, নববর্ষ যত এগিয়ে আসছে আমদানি তত কমছে। অন্যদিকে মজুদ করার জন্য ইলিশ ব্যবসায়ী ও খুচরা ক্রেতারা আগাম মাছ কেনার জন্য হুমড়ি খাচ্ছে। এ কারণে গত ১০ দিন ধরে প্রতিদিনই ইলিশের দাম বাড়ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে গত বছরের মতো এবারও ইলিশের মণ দেড় লক্ষাধিক টাকা হতে পারে।
মঙ্গলবার মতলব বাজার, এখলাছপুর মৎস্য আড়ত ঘুরে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে ১০ থেকে ১৫ পিস গ্রেড সাইজ (এক কেজির ওপরে) ইলিশের আমদানি হয়েছে। নিলাম ডাকে এর প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৯০ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি মাছের দাম পড়েছে ২২৫০ টাকা। খুচরা বাজারে ওই মাছ আরও ৩ থেকে ৫শ’ টাকা বেশি দামে বিক্রি হবে। এছাড়া বুধবার এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ ছিল ৮২ হাজার টাকা। প্রতি কেজির দাম পড়েছে ২ হাজার ৫০ টাকা। ওই মাছ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয় আড়াই হাজার টাকারও বেশি দামে। এলসি সাইজ (৮শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম) মণ হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা। অর্থাৎ কেজি ১৭৫০ টাকা। যা খুচরা বাজারে প্রায় ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ৬ থেকে ৭শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ছিল ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি মাছের পাইকারি দাম ১৩শ’ ৭৫ টাকা। ছোট ইলিশের (জাটকা) কেজি পাইকারি বাজারে ৩শ’ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪শ’ টাকার বেশি। ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে এক কেজির ওপরে, এক কেজি এবং এলসি সাইজের ইলিশের মণ ছিল যথাক্রমে ৬০ হাজার, ৪৮ হাজার এবং ৩৮ হাজার টাকা।
মোকামের আড়তদার সালাম মিয়া জানান, ইলিশের আমদানি কমে গেছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। আমদানি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, একে তো এ মৌসুমে ইলিশ পাওয়া যায় না। তার উপর জাটকা নিধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে।৫মেঘনা ও পদ্মা নদীর যে ইলিশ ধরা পড়ছে তাই মোকামে আনা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন যে জেলেরা সাগরে ইলিশ ধরছেন তারা নববর্ষের একদিন আগে চাঁদপুরের মোকামে আসবেন। মোকামের আড়তদাররা জেলেদের ওই চুক্তিতে দাদন দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ইলিশের দাম তুলে দেয়া হবে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
ষাটনল বাবুর বাজার মৎস্য আড়তের সভাপতি বদরউদ্দিন মিয়াজী জানান, একেতো ইলিশের সংকট তার ওপর চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। নববর্ষ উৎসব পালনে ঢাকা ও দাউদকান্দিসহ অনেক এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা ইলিশ কেনেন। এসব কারণে প্রতিবছরই নববর্ষের আগ মুহূর্তে ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে চায়। গত দু’বছর ধরে প্রতিমণ ইলিশ লাখ টাকা অতিক্রম করছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নববর্ষের পর দাম আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।