ঈদকে সামনে রেখে চাঁদপুরে বেড়েছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। সড়ক থেকে মহাসড়ক-ফুটপাত, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল সর্বত্রই এখন বিভিন্ন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কতিপয় যুবকরা বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি করছে। ব্যবসায়ী ও যানবাহন থেকে ঈদ সেলামির নামে চলছে এসব চাঁদাবাজি। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র পরিবহন চালকরা।
গত ১০ দিনে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দাবি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করছে ওইসব যুবকরা। এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর শহরের সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোতে প্রতিদিন প্রায় লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ, দলীয় নেতা-কর্মী, স্থানীয় মাস্তান এবং শ্রমিক ইউনিয়ন নামে ওই বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চাঁদপুরবাসী। শহরের বিভিন্ন স্থানে থেকে চাঁদা আদায়ের কাজের জন্য রয়েছে কয়েক শতাধিক লাইনম্যান। এদের কাজ হচ্ছে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সিএনজি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা। রমজানের আগে প্রতিটি সিএনজি থেকে লাইনম্যান উঠাতো ১০টাকা। রমজান শুরু হওয়ার পর তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০-৫০ টাকা। ১৫ রমজানের পর তা বাড়িয়ে তোলা হয় ৫০-১০০ টাকা। চালকরা জানায়, ঈদের সময় তা বাড়িয়ে ২০০টাকাও নেয়া হয়। তার জন্য বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণের পকেট থেকে। শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে সিএনজি স্ট্যান্ডের নামে রেলের বাউন্ডারিকৃত জায়গা অবৈধ দখল করে সিএনজি স্কুটার শ্রমিক ইউনিয়নের নামে রাস্তার উপরে সিএনজি থামিয়ে প্রতিটি সিএনজি থেকে ১০টাকা করে উঠানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে করে এ সড়কটিতে যানজটের দীর্ঘ লাইন লেগে থাকে। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিএনজি মালিক সমিতির নামে উঠানো হচ্ছে ১০টাকা করে। তেমনি লঞ্চ ঘাট, ওয়্যারলেছ, বাবুরহাট, মতলব, ফরিদগঞ্জ, চান্দ্রা ইউনিয়নে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন দলের নামে চাঁদাবাজি করে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে পিছিয়ে নেই ট্রাফিক পুলিশরাও।
তারা বিভিন্ন অজুহাতে সিএনজি ও আটোরিক্সা আটকে রেখে টাকা আদায় করে। শুধু তাই নয় তাদেরকে মাসোহারা দিয়ে শহরে চলছে প্রতিদিন হাজার হাজার লাইসেন্স বিহীন সিএনজি স্কুটার। ট্রাফিক পুলিশ নাম্বার ও নাম্বারবিহীন প্রতিটি সিএনজির কাছ থেকে মাসে আদায় করে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। না দিলে শহরে সিএনজি চালাতে দেয়া হয় না। চাঁদপুর শহরে প্রতিদিন ৬ হাজার ৩ শ’ নাম্বার ও ২ হাজার নাম্বার বিহীন সিএনজি চলাচল করছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, নামে বেনামে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন স্থান থেকে সিএনজি ও আটোরিক্সা থেকে চাঁদা উঠাচ্ছে তা আমি শুনেছি। এসব সংগঠনগুলোর কোন বৈধতা নেই। বিভিন্ন নামে তারা সুবিধা নিতে চাচ্ছে। আমি মনে করি এসকল সংগঠনগুলো বন্ধ হওয়া উচিৎ। এরকম নামে বেনামে সংগঠনগুলো বেশির ভাগ সময় ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে সক্রিয় হয়ে উঠে। তাদের ট্রাফিকের বাইরেও আমরা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সাজা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। ট্রাফিক পুলিশের নামে সিএনজি ও অটোরিক্সা থেকে মাসিক চাঁদা উঠানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম আমার জানা নেই। যদিও এরকম কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ শাহাবুদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, চাঁদপুর শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদা উঠানো হচ্ছে। চাঁদা না দিলে আমাদের চালকদের তারা মারধর করে এবং সিএনজি আটকে রাখে। এ বিষয়ে আমরা মালিক সমিতি বেশ ক’বার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এর কোন প্রতিকার হয়নি।
সিএনজি ও অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ রিপন হোসেন বলেন, পুরাণবাজার-নতুন বাজার ব্রিজ পালবাজার এলাকায় সিএনজি রাখার জন্য ২০০৯ সালে পৌর মেয়র মোঃ নাছির উদ্দিন আহমেদের কাছে আমরা আবেদন করি। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে পৌর মেয়র ২০টি সিএনজি রাখার জন্য পরের বছর আমাদের অনুমোদন দেন। আমরা আমাদের গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতিটি সিএনজি থেকে শ্রমিকদের কল্যাণে ১০ টাকা উঠাতাম। ২০১১ সালে কিছু বহিরাগত যুবক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদেরকে উঠিয়ে দিয়ে সিএনজি স্ট্যান্ডটি বেদখল করে নেয়। আমরা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়র বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। বর্তমানে এখানে চালকদের প্রতি অত্যাচার করে জোরপূর্বক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চাঁদাবাজদের চাহিদা মেটানোর জন্য হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, মতলব সড়কে চলাচলকারী সিএনজি স্কুটার চালকরা যাত্রীদের গলায় ছুরি চালাচ্ছে। ৪০ টাকার হাইমচরের ভাড়ার স্থলে নেয়া হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। ফরিদগঞ্জের ভাড়া ৪০টাকার স্থলে ৭০-৮০ টাকা। মতলবের ৪০ টাকার ভাড়ার স্থলে ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া রাতে লঞ্চ যাত্রীদের পেলে তো আর কোনো কথাই নেই। যে ভাড়া ১শ’ টাকা তা হয়ে যায় ৪শ’-৫শ’ টাকা। এমনিভাবে সিএনজি স্কুটার চালকরা যাত্রীদের উপর জুলুম অত্যাচার করছে। তাদের এ জুলুমের মূল কারণ হলো, চাঁদাবাজ চক্রের চাহিদা মেটানো।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।