এম এ আকিব,
মুসলমানদের বড় দুটি উৎসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্ছ উৎসব হচ্ছে ঈদুল আজহা (কুরবানির ঈদ)। আর হিন্দু ধর্মালবলম্বীদের সর্বোচ্চ উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। এবছর এ দুটি উৎসব একই সাথে হওয়ায় উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে বইছে এখন উৎসবের আমেজ। একদিকে হিন্দু ধর্মালবলম্বীদের সর্বোচ্চ উৎসব শারদীয় দুর্গা পুজার আজ নবমী, কাল দশমীর উৎসবে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে। অন্যদিকে মুসলমানদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎসব ঈদুল আজহা এর মাত্র একদিন পর, অর্থাত ৬ অক্টোবর।
আর তাই গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই পুজা ও ঈদ উদযাপনের লক্ষে কর্মস্থল ছেড়ে নাড়ির টানে ঘরমুখি হতে শুরু করেছে মানুষ। সব ধর্মাবলম্বী মানুষই চায় আপনজনের সাথে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। যারা সরকারী চাকুরী করেন, তারা গতকাল বৃহস্পতিবার অফিস সেরেই রওয়ানা হয়েছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। কারণ আজ থেকেই মূলত শুরু হচ্ছে ছুিটর গননা। তাই চাঁদপুরের মানুষ যারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় থাকেন, তারা কর্মস্থল ছেড়ে ইতোমধ্যে নাড়ির টানে ছুটতে শরু করেছন নিজ গ্রামে। শহর ছেড়ে গ্রাম মূখি এসব মানুষ একই সাথে ফিরতে শরু করায় লঞ্চ, ট্রেন ও বাসস্ট্যান্ডে এখন নিয়মিত মানুষের ঢল। প্রতিবছরই এ সময় ঘরমূখী এসব মানুষকে পড়তে হয় নানামুখী দুর্ভোগে।
যারা আগেভাগেই ফিরেন তারা হয়তো দুর্ভোগ থেকে কিছুটা রেহাই পান। কিন্তু যারা শেষ সময়ে ফিরেন, তাদের অনেকেই ট্রেন,বাস ও লঞ্চে টিকিট না পোয়ে সঠিক সময়ে বাড়ি ফেরার সপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায়। আবার যাদের ভাগ্যে সোনার হরিণ নামক টিকেটটি মেলে, তাদেরকে গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। অধিক অর্থের বিনিময়ে বাড়ি ফেরার টিকিট পেলেও সময়মত গাড়ি না আসায় এবং জানযটে পড়ে অনেকেরই পুজা বা ঈদের আনন্দ কেটে যায় পথে।
প্রতি বছরই দেখা যায়, এসময়টিতে যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়ে থাকে। যাত্রীরা অসহায়ের মতো বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে যায়। আর রেলপথে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ট্রেনের আগাম টিকিট হাতিয়ে নিয়ে যায় চিহ্নিত কালোবাজারিরা। এছাড়াও সারা দেশে যানজট ও সড়কের বেহাল দশার কারণে যাত্রীরা নৌপথের উপর বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিন্ত এখানেও পড়তে নানামূখি দুর্ভোগে। গতকাল থেকে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদের আগমন শুরু হতে না হতেই দেখা দিয়েছে নানা দুর্ভোগ। প্রশাসনের চোক ফাকি দিয়ে ঘাট ইজারাদার ও লেবারদের হয়রানিতে অতিষ্ঠ ঘরমুখো যাত্রীরা।
যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যাত্রীদের সাথে থাকা বিভিন্ন মালামালের জন্য ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায়, লঞ্চ থেকে নেমে নিজ গন্তব্যে পৌচাবার জন্য যে জানবাহনেই উঠুকনা কেন সেখানেও ২শ’ টাকার স্থলে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে ছিনতাইকারী,পকেটমার, মলম পাটির খপ্পর। বিশেষ করে এ সমস্ত বৃহৎ উৎসবকে কেন্দ্র করে করে যাদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। এতসব প্রতিকুলতা সত্তেও লঞ্চ যাত্রীরাও অতিরিক্ত ভাড়া গুনে বাড়ি ফিরছে।
ঘরমূখি এসব যাত্রীদের স্বার্থ যাতে উপেতি না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে নানা প্রস্তুতি। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কে আসন্ন ঈদুল আযহা ও শারদীয় দুর্গা পুজা উপলে প্রস্তুতি সভায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন ও পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর চাঁদপুরের প্রশাসনের প্রস্তুতি তুলে ধরেন। এসময় সভাপতির বক্তব্যে চাঁদপুরের মাননীয় জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ঈদুল আযহা ও শারদীয় দুর্গা পুজায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে পুলিশ প্রশাসন, কোষ্টগার্ড, ক্যাব, বিআইডব্লিউটি, ফায়ার সর্ভিস এবং স্কাউটের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টিম যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে । এ ছাড়াও বাস টার্মিনাল, রেল স্টিশন ও জনসমাগমস্থলে পুলিশের বিশেষ টহল ব্যবস্থা থাকবে। লঞ্চ গুলোতে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠে সেদিকে বিআইডব্লিউটি কর্তৃপরে বিশেষ নজর থাকবে। ঈদ ও পুজায় যানজট ও পাড়া মহল্লায় বিশিৃঙ্খলতা এড়াতে উচ্চ মতা সম্পন্ন সাউন্ডবক্স বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার পরেও ঘরমুখো মানুষের মনে বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক।