নিজস্ব প্রতিনিধি-
মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনবের লক্ষে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা গতকাল বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এবার ঈদ, পূজা ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ দীর্ঘ ছুটিতে পড়ছে দেশ। এই ছুটি পেয়ে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে যাবেন। আর তখনি চুরি, ডাকাতির ভয় থাকে। সেজন্য পুরো বাড়ি বা বাসা খালি রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির যে ঐতিহ্য রয়েছে সেটি ধরে রাখতে হবে। ঈদ, পূজায় আনন্দ প্রকাশের নামে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা করা যাবে না। পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে হবে। কারো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। এবার ঈদ ও পূজা প্রায় এক সাথে পড়ে যাওয়ায় উৎসব পালনে এবং প্রস্তুতিতে যেনো কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে সকলের খেয়াল রাখতে হবে। কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে সেটা তাৎক্ষণিক বসে সমাধান করে দেখতে হবে।
সভায় পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর বলেন, সকলের সহযোগিতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দু’টি উৎসব আমরা সুন্দরভাবে শেষ করতে পারবো বলে আমাদের প্রত্যাশা। পূর্বের ন্যায় এবারো ঈদ ও পূজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকবে। তবে বিগত দিনে যেভাবে সকলের সহযোগিতা ছিলো এবারো তেমনটি থাকবে বলে আশা করছি। আর প্রত্যেকে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি নিজেকেও ভাবতে হবে। বড় অংকের অর্থ লেনদেনে কারো পুলিশি সহয়তার প্রয়োজন হলে আমাদের জানালে আমরা সহযোগিতা করবো। তিনি সকল ধর্মীয় উৎসব পালনে হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভার শুরুতে গত বছরের ঈদুল আযহার সিদ্ধান্ত সমূহ পাঠ করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাসুদ আলম ছিদ্দিক। এবারো পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। তবে এবার চাঁদপুর শহরে সর্বশেষ একটি ঈদ জামাত হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেটি হবে শহরের চিশতিয়া জামে মসজিদ ঈদগাহে। এখানে দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ হচ্ছে : পবিত্র ঈদের দিন সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, নতুন কাপড়ে তৈরি আরবি ও বাংলা অৰরে ‘ঈদ মোবারক’ লেখা পতাকা দিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রধান প্রধান ঈদ জামাত এলাকা সজ্জিতকরণ, জেলা কারাগার, এতিমখানা ও হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন বৃষ্টি হলে নিকটবর্তী মসজিদে ঈদের জামাত হওয়া, লঞ্চঘাটে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা, লঞ্চ ও স্টিমার ঘাটে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা, নদীতে কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা, লঞ্চের সাথে কোনো নৌকা যাতে ভিড়ানো না হয় সেটি নিশ্চিত করা, লঞ্চে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করা, ঈদের দিন রাস্তার পাশে, মোড়ে বা খোলা জায়গায় সাউন্ড সিস্টেমে গান না বাজানো, লঞ্চঘাটে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, শহর ও ঈদগাহ পরিষ্কার রাখা এবং কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা ও নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেঃ মাহফুজুর রহমান, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব মোরশেদ, জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোসত্দাক হায়দার চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহিদুর রহমান চৌধুরী, আবুল কালাম পাটওয়ারী, লঞ্চ মালিক আলহাজ্ব এম এ বারী খানসহ চাঁদপুর বন্দর ও বিভিন্ন ঈদগাহ কমিটির কর্মকর্তাগণ। সভায় চাঁদপুর শহরের প্রধান প্রধান ঈদ জামাতের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়।