* চাঁদপুর শহর রা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশের বন্ধ থাকায় চরম হুমকির মুখে রয়েছে শহর।
* চাঁদপুর পাউবোতে জিইও টেক্সটাইল ব্যাগের কথিত মজুত নিয়ে হৈচৈ ।
* অভিযোগ উত্থাপনকারী বরখাস্তকৃত প্রকৌশলী প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন ।
* যে কোনো সময় শহরের বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
* পুনরায় শহর রক্ষা বাঁধের কার্যক্রম চালু করার দাবী সচেতন মহলের।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোডাউনে জিইও টেক্সটাইল ব্যাগের কথিত মজুদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে তোলপাড় চলছে। খোদ পাউবো’র একজন বরখাস্তকৃত প্রকৌশলী ব্যাগ মজুদের যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে এখন তিনি নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন। অন্যদিকে এ অভিযোগে চাঁদপুর শহর রা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশের জরুরী প্রোটেকশন কাজ বন্ধ থাকায় চরম হুমকির মুখে রয়েছে শহর রক্ষা বাদ, আতঙ্কিত সর্বমহল। যে কোনো সময় বাঁধটি দেবে যেয়ে শহরের বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি অভিযোগ উঠে, চাঁদপুর পাউবো অফিস এলাকায় অবস্থিত গোডাউন থেকে ৬০০০ জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ চুরি হয়েছে। চাঁদপুর পাউবো’র বরখাস্তকৃত ও বর্তমানে জামালপুরে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের নিজামী উল্লেখিত জিইও টেক্সটাইল ব্যাগের কথিত স্টক রেজিস্ট্রার পাউবো’র টাস্কফোর্স কমিটির কাছে হস্তান্তর করায় বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। অথচ তিনি যখন চাঁদপুর অফিসে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন তখন দায়িত্ব হস্তান্তরপত্রে জিইও টেক্সটাইল ব্যাগের কোনো স্টক উল্লেখ করেননি, কোনো স্টক রেজিস্ট্রারও জমা দিয়ে যাননি। দায়িত্ব হস্তান্তরপত্রে স্টক থাকা ব্লকের হিসেব বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। এখন তার হঠাৎ করে উত্থাপিত জিইও টেক্সটাইল ব্যাগের স্টক নিয়ে তদন্তে নেমেছে পাউবো।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিক উল্লাহ গতকাল সোমবার স্থানীয় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী কোনো জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ মজুদ রাখার নিয়ম নেই। কেবলমাত্র ব্লক মজুদের নিয়ম আছে। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডেও সেই নিয়ম পালন করা হচ্ছে। অতিসম্প্রতি চাঁদপুর শহর রা বাঁধের কাজে ৬০০০ জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ পাউবো’র গোডাউন থেকে চুরির যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা একেবারেই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি বলেন, আমি গত ৪ মার্চ চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোডাউনে বা অন্য কোথাও পাউবো’র আওতাধীন কোনো জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ মজুদ থাকার তথ্য আমার জানা নেই। তিনি জানান, চাঁদপুর পাউবো কার্যালয় সংলগ্ন যে দু’টি গোডাউন রয়েছে সেগুলো ঠিকাদাররা অনুমতি নিয়ে তৈরী করেছেন বলে জানা গেছে। এগুলোতে পাউবো’র কোনো মালামাল স্টক থাকার তথ্য আমার জানা নেই।
চাঁদপুর পাউবো’র এই শীর্ষকর্তা আরো বলেন, চাঁদপুর পাউবো’র বরখাস্ত হওয়ায় সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের নিজামী গত ১৬ মার্চ তার স্থলাভিষিক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমানকে লিখিতভাবে যে দায়িত্ব হস্তান্তরপত্র দেন তার কোথাও জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ বা রেজিস্ট্রারের কথা উল্লেখ নেই। কথিত ব্যাগ গোডাউনে স্টক থাকলে নিয়ম অনুযায়ী বিদায়ী কর্মকর্তা মো. আবু তাহের নিজামী বাধ্যতামূলকভাবে তার দায়িত্ব হস্তান্তরপত্রে তা উল্লেখ করার কথা। অথচ তিনি সে সময় তা করেননি। এখন একটি সদ্য প্রস্তুতকৃত কথিত স্টক রেজিস্ট্রার তৈরী করে তা চাঁদপুর পাউবোকে না দিয়ে টাস্কফোর্স কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছেন। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল রেজিস্টার ও খাতাপত্র শহরের একটি স্টেশনারী প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা এবং প্রতিটি খাতার উপরে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা রয়েছে। কিন্তু কথিত জিইও টেক্সটাইল ব্যাগের রেজিস্ট্রার খাতাটি ঢাকা থেকে কেনা এবং এতে এসডি’র স্বার নেই। অথচ এ ধরনের রেজিস্ট্রারে বাধ্যতামূলকভাবে এসডি’র স্বার থাকতে হয়।
চাঁদপুর পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিক উল্লাহর মনে করেন, তাকে ফাঁসাতে ও হয়রানী করতে পাউবো’র ভেতর ও বাইরের কিছু লোক এই কল্পকাহিনী সাজিয়ে চাঁদপুর শহর রা বাঁধকে হুমকির দিকে ঠেলে দিতে চাইছে। তার ধারণা, তিনি যোগদানের স্বল্পতম সময়ের মধ্যে চাঁদপুর পাউবো থেকে ৭জন কর্মকর্তা বদলী হওয়ায় তারা এবং তিনি গত জুনে দু’টি প্রকল্পের ১৯ কোটি টাকার বিল না দিয়ে ফেরত পাঠানোয় সংশ্লিষ্ট কথিত তিগ্রস্তরা তার বিরুদ্ধে ষযড়ন্ত্রে মেতেছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিক উল্লা আরো জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি কেন্দ্রীয় টিম অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও মেশিনের সাহায্যে চাঁদপুর শহর রা বাঁধ ও চাঁদপুর-হাইমচর নদী তীর রার বাঁধে সার্ভে শুরু করে গত আগস্ট মাসে। গত ১০ আগস্ট প্রথম সার্ভে রিপোর্টে চাঁদপুর শহর রা বাঁধ ভালো অবস্থায় আছে বলে রিপোর্ট পাওয়া যায়। পরবর্তীতে দেশ-বিদেশের বন্যার পানির চাপ বাড়ায় ৩০ আগস্ট পরবর্তী সার্ভে রিপোর্টে দেখা যায়, মোলহেডের নিচের দিকে পানির নিচের কিছু এলাকা দেবে গেছে এবং অবস্থা ভয়াবহ। তখন মহাপরিচালকের নির্দেশে জরুরী ভিত্তিতে শহর রা বাঁধ রায় ব্লক ও জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা শুরু হয়। এক সপ্তাহ কাজ চলার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে নির্দেশে বর্তমানে জরুরী কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এখনো মোলহেড প্রচন্ড ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে জানান তিনি। চাঁদপুর শহর রায় উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের পাশাপাশি বাঁধ রায় জরুরী কাজ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, এভাবে ষড়যন্ত্র হতে থাকলে চাঁদপুর শহর রা বাঁধ, হরিনা ফেরিঘাট ও হাইমচরের চরভৈরবী এলাকার প্রস্তাবিত নদীতীর রার প্রকল্পও তিগ্রস্ত হতে পারে। পুনরায় শহর রক্ষা বাঁধের কার্যক্রম চালু করার দাবী সচেতন মহলের।