শওকত আলী ॥
চাঁদপুর হরিজন পল্লীর ৫৫ টি পরিবারের মধ্যে ৫ টি পরিবার রয়েছে ডোম পরিবার। এ পরিবারের সদস্যরা একটি ঘরের ৩ টি রুমে লজ্জা বিষর্জন দিয়ে মারাত্বক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করে যাচ্ছে। এ জন গোষ্টীর জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে আবাসনের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি ডা. দীপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
সরেজমিনে চাঁদপুর শহরের বাসষ্ট্যান্ড স্বর্র্ন খোলা হরিজন পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, এখানে ৫৫ টি হরিজন পরিবারের মধ্যে ৫ টি ডোম পরিবার রয়েছে। বসবাসরত প্রায় ৪শতাধিক মানুষ অত্যন্ত কষ্ট শিকার করে বসবাস করে যাচ্ছে। এদের জন্য সরকারীভাবে বা কোন সংস্থার পক্ষ থেকে বাসস্থানের সৃষ্টি করা হয়নি বিগত শতাধিক বছর যাবত। স্বাধীনতার পুর্বে বৃটিশ শাসন আমলে এদেশের মানুষের সেবার জন্য এ হরিজনদের ভারত বর্ষের মাদ্রাজ থেকে মহাত্বা গান্ধীর শাসন আমলে তাদেরকে আনা হয়।
এ হরিজনদের মধ্যে একটি পরিবার রয়েছে ডোম পরিবার। চাঁদপুর বাসী এক নামে চিনতো সে ডোম গোলাপকে। গোলাপ ডোমই ছিল চাঁদপুরে অস্বাভাবিক মৃত্যু বরনকারী ব্যাক্তিদের ময়না তদন্ত কাজে নিয়োজিত। গোলাপ ডোম তার জীবদশায় কয়েক হাজার লাশ কেটেও নিজস্ব কোন বাসস্থান তৈরী বা সরকার থেকে কোন বাসস্থান পায়নি। চাঁদপুর পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পৌর স্বর্ন খোলা হরিজন কলোনীতে বসবাস করে জীবন কাটিয়েছে। ২০০৩ সালে ৬০ বছর বয়সে গোলাপ ডোম পরলোক গমন করার পর তার ছেলে সুমন ডোম দায়ীত্ব পালন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি এ কাজের সম্পৃক্ত হন গোলাপ ডোমের ছোট ভাই রতন ডোম ও তার ছেলে বাপ্পি ডোম ও পুনম ডোম।
এখানে বহু সংখ্যক ডোম জনগোষ্টীর বসবাস না করলেও ৫ টি ডোম পরিবার বসবাস করে যাচ্ছে। ৫৫ টি পরিবারের ৪শতাধিক মানুষের জন্য পৌরসভা নির্মান করা করেছে ৫০ টি আবাসন ব্যবস্থা। বাকী ৫ টি আবাসন ব্যবস্থা নিজ খরছে নির্মান করেছেন হরিজন পল্লীর বাসিন্দারা। ৫ টি ডোম পরিবার পৌরসভার নির্মিত একটি ঘরের ৩ টি রুমে গাদা-গাদি করে বসবাস করে যাচ্ছে। চাঁদপুর জেলায় দুর্ঘটনায় মৃত্যবরন কারী শত-শত লাশ তারা কেটে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে ময়না তদন্তের জন্য। এভাবে মানুষের সেবা দিয়ে থাকলেও তাদের জন্য সরকারী ভাবে কোন স্থায়ী বাসস্থান নির্মান করা হচ্ছেনা। তারা এদেশের বৈধ নাগরীক হওয়ার পরেও সরকার এদের নিয়ে সঠিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেনা।
হরিজন ও ডোম সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা জানান, নির্বাচন আসলে ভোট দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান – মেম্বার ও এমপি সাহেব আসেন ভোটের জন্য। তখন আমাদের স্থায়ী বাসস্থানের আশ্বাস দিয়েও পরে ভুলে যান। গোলাপ ডোমের ছেলে সুমন একটি হত্যা মামলায় জড়িত হয়ে জেলে গিয়ে চাকরি হারান। বর্তমানে জামিনে এসেও কর্ম না পেয়ে কষ্ট করে জীবন কাটাচ্ছেন। চাঁদপুরে ডোমের কাজ করার দায়িত্ব পান বাপ্পি ডোম।
বাপ্পি জানান, তার ভাই সুমন ডোমের নিকট লাশ কাটার কাজ সরজমিনে দেখে তা প্রতক্ষ্য করার কারনে বর্তমানে চাঁদপুরে লাশ কাটার দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হয়। বর্তমানে বাপ্পী বিগত ৫ বছর যাবত লাশ কাটর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
সে জানায়, তার জীবনে কমপক্ষে ৩শতাধিক লাশ কেটে ডাক্তারদের সহযোগীতা করেছে। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের এক জন কর্মচারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মাসে ৭হাজার ৮শ’ টাকা বেতেন ভাতা পেয়ে থাকে। বর্তমান দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্ব গতির এ বাজারে পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে জীবন যাপন অত্যান্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
সরকারি কর্মচারি তালিকায় তার নাম থাকলেও সরকারি কোন বাসস্থান তার কপালে জুটছেনা। চাঁদপুর পৌর সভায় ঝাড়–দারের কাজ করায় বাপ্পী হরিজন কলনীতে একটি বাসায় বসবাস করার সুযোগ পায়। ডোমের কাজের বাহিরে চাঁদপুর বাস টার্মিনালে ঝাড়–দারের কাজ করে থাকে। এ কাজরে বিনিময়ে পৌরসভা থেকে মাত্র ৬শ’ টাকা মাসিক ভাতা পেয়ে থাকে।
বাপ্পী আরো জানায়, পৌরসভা থেকে তাদের ৫৫টি পরিবারের জন্য বাসস্থান দিলেও ৩টি খোলা পানির কল দেওয়ায় তারা পানি সংকটে দিন কাটাতে হচ্ছে। এতে তারা পানি সমস্যায় ভুগছে দীর্ঘ দিন। যে গ্যাস লাইন তাদেরকে দেওয়া হয়েছে সে গ্যাসের বিল তাদের দিতে হয়।
ঢাকায় ডোমের কাজ করা ব্যাক্তিরা মাসিক বেতন পাচ্ছে ১২ হাজার টাকা। এর বাইরেও তারা বাসস্থান ও বিভিন্ন সুবিদা পাচ্ছে। আমি তা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। বর্তমান সরকারের আমলে পৌসভার অধিনে যেখানে বসবাস করছি সেখান থেকে আমাদেরকে উচ্ছেদের জন্য একটি চক্র লেগে রয়েছে। সরকার পরিবর্তন হলে এখানে থাকতে পারবো কিনা তা নিয়ে বড় চিন্তিত অবস্থায় আছি আমরা ৫৫টি পরিবার। পৌর সভা থেকে যে একাটি কোয়াটার দেওয়া হয়েছে, সে কোয়ার্টারে ৫টি পরিবারকে বসবাস করতে হচ্ছে। আমাদের পরিবারের খরচ মিটাতে চাচা রতন ডোম সহ তার স্ত্রী রেশমা দুটি বাচ্চা নিয়ে একত্রিত রান্না করে জীবিকা অর্জন করে যাচ্ছি।
প্রয়াত গোলাপ ডোমের ভাই রতন ডোম কোন প্রকার সরকারী চাকরী না পেয়ে বাসটার্মিনালে বাসের লোক ডাকার কাজ করে জীবিকা অর্জন করে যাচ্ছে। গোলাপ ডোমের ছেলে পুনম শহরের আলীম পাড়ায় গড়ে উঠা প্রিমিয়ার হাসপাতালে জাড়–দারের কাজ করে জীবন জীবিকা চালাচ্ছে অতি কষ্টে। ডোম পরিবারের সদস্য হলেও ডোমের পেশায় সরকারী কোঠা মত চাকুরী না থাকায় অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছে।
চাঁদপুর হরিজন পল্লীর ৫৫ টি পরিবার ও ৫ টি ডোম পরিবার সরকারের কাছে তাদের জন্য খাস জমি চায় এবং সেখানে নিজস্ব কলোনী নির্মান করে দিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছে। এছাড়া স্থানীয় এমপি ডা. দীপু মনি ও চাঁদপুরের ৫ আসনের এমপিদের মাধ্যমে জননেত্রী বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন।
শিরোনাম:
রবিবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।