নিশাত জাহান…
মোড়া পেতে একাকী দাদু বসে থাকতেন দোরে,
কাছে আসতোনা কেউ থুথুর বাটিটা এগিয়ে দিতে হবে
চলতো সবাই রাস্তা ঘুরে।
বটা চামড়ায় ফর্সা আঙ্গুলে আংটি ছিল দাদুর,
ব্যস্ততায় আজ সবাই ভুলে গেছে দাদুকে -ভালোবাসা আর আদর।
জিয়স নামের রোগের দাদু তাবিজ দিত,
ছদকা হিসাবে দাদু দশ টাকা নিত।
আমি যেতাম প্রত্যেক বিকেলে দাদুর দোরের কাছে,
ভালোবাসতে নয়, দশ টাকারতো লোভ আছে।
একাকী দাদু বসে ভাবতেন কত কথা,
আর বলতেন আমায়, বুঝিনি তখন এগুলো দাদুর মনের ব্যথা।
উপযুক্ত ছেলেটা আমার রাজাকারের হাতে গেল মরে,
চলে গেল অল্প বয়সে দেশটাকে আলোকিত করে।
ঐতো এই রাস্তায় তোর বড় ফুপি চিটাং ভার্সিটি হতে আসতো,
ছোটটা তোর মত হ্যাংলা ছিল অধিক হাসতো।
শান্ত শিষ্ট মেয়েটা আমার আজো গোপনে কাঁদে।
এই একটু তরকারি নিয়ে আয় দেখতো তোর মা কি রাধে?
এতক্ষণে আমার দশ টাকা হাতরানো শেষ,
আমি নাই আজকের জন্য নিরুদ্দেশ।
ভুলক্রমে যদি পরদিন দাদুর সামনে পড়ে যেতাম,
ঘরের কারে উঠে চিঠি নামানোর আদেশ পেতাম।
টাং ভর্তি ছিল ফুপুদের হোস্টেল হতে পাঠানো পত্র,
পত্র পড়ার উদ্দেশ্য ছিলনা, উদ্দেশ্য ছিল হাতানো যত্রতত্র।
এমনি করে পেলাম একদিন একটি চিঠি ফেনী হতে আসা,
চিঠিটা প্রতিদিন পড়াতো আমায় দাদু……
কে জানতো পত্র পেরক হবে আমাদের হারানো ভালোবাসা।
দাদুর আদরের ছেলে দাদুকে ফেলে শহরে চলে গেছে,
স্মৃতি আর যন্ত্রণা নিয়ে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত দাদু পুরনো ঘরটায় পরে আছে।
ছোট ছেলেটা করেছে সদ্য বিয়ে,
বুঝতে পেরেছে জীবনের উন্নতি হয়না মা কে সেবা দিয়ে..।
যারা ছিল একসময় দাদুর সেবাদাসি,
জীবন, দেনাপাওনার হিসাব-নিকাশে আজ তারাও সর্বনাশী।
কেউ নিতে চায়না দাদুর অসহায় জীবনের ভার,
্একসময় দাদুর শরীরে বল ছিল, ক্ষমতা ছিল, কিন্তু এখন আর দাদুকে কি দরকার?
এভাবে দাদু একদিন কোমায় চলে গেল,
মৃত্যু নয় দাদুর অপমৃত্যু হল।
কেন হল কিভাবে হল লিখলামনা আর সে কথা,
ভালোবসি আজ তোমায় দাদু তোমার স্মরণে বুকটা করে ব্যথা।
এ জীবনে আর একবার তুমি দাদু ফিরে আস আমার সন্তান হয়ে,
কিছুটা যন্ত্রণা তাহলে কমত আমার যে যন্ত্রণা বহুদিন চলছি বয়ে।
(সমাপ্ত)