নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাঁদপুরে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া ও রেকর্ড পরিমাণ শিলাবৃষ্টিতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমন মুষলধারে শিলাবৃষ্টি সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি। এজন্য মানুষ ছিলো ভীত-সন্ত্রস্ত। ঝড়ো হাওয়ায় পল্লী বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এজন্য গতকাল রাত পর্যনত্দ অধিকাংশ গ্রামাঞ্চল বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলো। তবে এই শিলাবৃষ্টি চাঁদপুর শহরেই বেশি হয়েছে। এদিকে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে ফসল ও গাছের ফল-ফলাদির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং মুষলধারে বৃষ্টিতে শহরের কয়েকটি রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এবং ড্রেনগুলো পরিষ্কার না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে চাঁদপুরের আকাশ হঠাৎ মেঘাচ্ছন্ন ও কালো হয়ে যায়। অথচ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশ তাপমাত্রা ও প্রখর রোদ ছিলো। সোয়া ৪টার কিছুক্ষণ পর ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়। প্রথম দিকে হালকা বৃষ্টি হলেও ৪টা ২০ মিনিট থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। সাথে শুরু হয় প্রবল শিলাবৃষ্টি। আস্তে আস্তে শিলাবৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। অবস্থা দেখে মনে হয়েছে আকাশ থেকে যেনো পাথর বৃষ্টি হচ্ছে। যাদের ঘরের চালা টিনের ছিলো তারা অনবরত শিলাবৃষ্টির বিকট আওয়াজে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এক নাগাড়ে ৩০ মিনিট হয় এই শিলাবৃষ্টি। অনেকেই বলেন স্মরণকালে এমন শিলাবৃষ্টি তারা দেখেন নি। এমন শিলাবৃষ্টিতে গাছের লতা-পাতা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। গাছে নতুন করে ধরা থোকা থোকা আম, আমের মুকুল ও বিভিন্ন ফলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালা ও শহরের বিভিন্ন স্থানে তোরণ ভেঙ্গে গেছে। শিলাবৃষ্টিতে অনেক বাসা-বাড়ির প্লাস্টিকের টিন ও পুরানো টিন ফুটো হয়ে গেছে এবং ভেঙ্গে গেছে। ঝড়ো হাওয়ায় অনেক বাসা বাড়ির চালা উড়ে গেছে। হাইমচরের পশ্চিম চরকৃষ্ণপুর এলাকার পুরানো একটি জগন্নাথ দেবের মন্দিরের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে বাতাসে। বিদ্যুতের লাইনও বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাগাদী চৌরাস্তা এলাকার বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। এই ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টির সময় যারা পথে ঘাটে ও বিভিন্ন স্থানে যাত্রাপথে ছিলেন তারা খুব ভীত-সন্ত্রসত্দ হয়ে পড়েন।
এদিকে গতকাল বিকেলে ঝড়ো হাওয়ার সময় বিভিন্ন স্থানে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে যায়। জানা গেছে, বিকেলে ঝড়ের সময় শাহতলীতে পল্লী বিদ্যুতের ৩৩ কেভি মূল লাইনের খুঁটি ভেঙ্গে যায়। একই সময় কচুয়ায়ও পল্লী বিদ্যুতের মূল লাইনের উপরে গাছ পড়ে। এতে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীনসহ অন্য সাত উপজেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাত ১০টায় কচুয়া ও মতলব উত্তরে বিদ্যুৎ চলে আসলেও অন্য উপজেলায় তখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ চলছে।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বিকেল ৪টা ২০ মিনিট থেকে ৪টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত ৩৫ মিনিটে একনাগাড়ে ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিলো ৪৫ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ছিলো ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো সর্বোচ্চ ৯৬% ও সর্বনিম্ন ছিলো ৫০%।
চাঁদপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল চাঁদপুর শহরেই প্রবল বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জে সামান্য পরিমাণ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। কচুয়ায় বিকেলে কোনো বৃষ্টিই হয়নি। তবে সন্ধ্যার পর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। অন্য সব উপজেলায় কম বেশি বৃষ্টি হলেও চাঁদপুর শহর ছাড়া অন্য কোথাও শিলাবৃষ্টি হয়নি বলে জানায় চাঁদপুর কৃষি অফিস। এ জন্যে ফসলাদির ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে না।