এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল মানেই দেশব্যাপী স্কুল-মাদ্রাসায় উৎসবমুখর পরিবেশ। ছাত্রছাত্রীরা ঢোল ও ড্রামসহ বিভিন্ন বাজনা নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে।
এই একটি দিনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকে না শাসন আর গাম্ভীর্যের বেড়াজাল। একসঙ্গে উপভোগ করেন সাফল্যের আনন্দ। কিন্তু এবারে সেই আনন্দে ভাটা তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আজ রাজধানীতে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য সংগঠনের সমাবেশ। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী।
এমন অবস্থার মধ্যে অবশ্য ফল পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে অন্যান্য বছর দুপুর ১২টার পরে ফল প্রকাশ করা হয়। এর আগে সকাল ১০টার পর প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলের সার-সংক্ষেপ তুলে দেওয়ার রেওয়াজ আছে। আর শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনটি করেন ১২টার দিকে।
এবার এই তিন ক্ষেত্রেই এসেছে পরিবর্তন। শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের সার-সংক্ষেপ হস্তান্তর করবেন। শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনটি হবে বেলা ১১টায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ফল প্রকাশ করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার যুগান্তরকে উল্লিখিত তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এমন দিনে শিক্ষার্থীদের ফল জানার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করি।
কেননা, তাদের বাসায় ফল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তারা এসএমএস এবং অনলাইন উভয় মাধ্যমে ফল জানতে পারবে। এর বাইরে যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও ফল জানানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কিন্তু তাদের বিড়ম্বনা এড়ানোই ভালো।
এবার এই পরীক্ষায় সারা দেশের ২৯ হাজার ৭৯৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ ছাত্রছাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে এসএসসিতে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন, দাখিলে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৯৫ পরীক্ষার্থী ছিল।
এবারও সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয় এবং তাদেরকে ১০০ নম্বরেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। ব্যবহারিকসহ শেষ হয় ৩০ মে। সেই হিসাবে এবার ৬০ দিনের আগেই দেওয়া হচ্ছে ফল।
রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যদিও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠা আছে, তবু ফল প্রকাশ উপলক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা চাইলে যাতে আনন্দ-উল্লাস করতে পারে সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে মঞ্চ বানানো হয়েছে।
এ ছাড়া ঢোল-ড্রামসহ যেসব বাজনা নিয়ে ছাত্রীরা উচ্ছ্বাস করে, সেগুলোও প্রস্তুত করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি ড. ফারহানা খানম যুগান্তরকে বলেন, ফল প্রকাশের সাধারণত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ শতাংশ এসে থাকে।
এবার যেহেতু রাজনৈতিক কর্মসূচি আছে তাই হয়তো অর্ধেক বা ৫ শতাংশ আসবে। সাধারণত স্কুলের কাছাকাছি যাদের বাসা এবং হেঁটে আসা সম্ভব, তাই এসে থাকে। তাই এসে যেন আনন্দ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা শিক্ষকরা যাব। এমন আনন্দের দিনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এলে আমরা খুশি হই। কিন্তু বাইরে বের হলে বিপদের শঙ্কা থাকলে সেই আনন্দ আমরা চাই না। যেহেতু বিপদের একটা শঙ্কা করা হচ্ছে, তাই কতজন স্কুলে আসবে তা অবশ্য আমরা জানি না।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের জনসংযোগ কর্মকর্তা কবি শাহ বুলবুল যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি যেহেতু মূল ঢাকার দিকে, তাই উত্তরায় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এরপরও কর্তৃপক্ষ খুব সকালে শিক্ষার্থীদের ফল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়। দূরের শিক্ষার্থীরা আসবে না। কাছাকাছি যারা যাতায়াত নিরাপদ মনে করবে, কেবল তারাই আসবে। চাইলে তারা অনলাইন বা এসএমএসেও ফল জানতে পারে।