নাজমা আক্তার। বয়স চলি্লশ ছুঁই ছুঁই। স্বামী পরিত্যক্তা নাজমা এক কন্যা সন্তানের মা। সন্তানের বয়স যখন ২৬ দিন তখন যে বাবা বাড়ি এসেছে, আর স্বামীর বাড়ি ফেরা হয়নি। তারপর স্বামীর সাথে সম্পর্কে ছেদ। বাবার মাথার উপর বসে খেতে খেতে লজ্জার বোঝা খুব ভারি হয়ে যায়। সে বোঝা সরাতেই বিদেশ যাবে বলে মন স্থির করেন নাজমা। স্বপ্ন দেখেন একমাত্র মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দেবেন। আর নিজে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সেবা করবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর গ্রামের গাজী বাড়ির জাব্বার গাজীর মেয়ে নাজমা তখনো জানতো না তার বিদেশ ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে। গত বছর আগে কচুয়া উপজেলার বিতারা গ্রামের মিজান মিজির সাথে যোগাযোগ হয় নাজমার। তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার ওরফে শাহনাজ ওমান থাকেন। মাঝে মধ্যে দু’ একটা ভিসার কারবার করেন। দেশে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন শাহনাজের স্বামী মিজান মিজি এবং শাহনাজের ছোট বোন নাছিমা আক্তার। এদের মাধ্যমেই নাজমার বিদেশ যাওয়া। দেড় লাখ টাকা খরচে খাদ্দামা (কাজের বুয়া) ভিসায় ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর ওমান পেঁৗছে নাজমা। তারপর কোনো কাজ ছাড়াই ওমানের ছোহার হাব্বার এলাকার একটা রুমে নাজমাকে আটকে রাখে সেলিনা আক্তার শাহনাজ। আরো দুইটা মেয়েকেও রাখা হয় একসাথে। অল্প কয়েক দিনেই নাজমা বুঝে যায় বিদেশ ভাগ্য তার ভালো না। শাহনাজ কাজের কথা বলে মেয়েদের এনে দেহ ব্যবসা করায়। এসব বুঝতে পেরে নাজমা নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফিরে আসবেন। কিন্তু তার ইচ্ছায় আর দেশে আসা হয় না। দেশে আসার কথা বললেই চলতো দফায় দফায় নির্যাতন। সর্বশেষ গত ২৭ জুন নাজমার পুরো শরীরে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। অমানুষিক নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন নাজমা। সাথে থাকা অন্য দুই নারী তাকে উদ্ধার করে নামমাত্র ঔষধ সেবন করায়। কিছুটা সুস্থ হলে পরদিন ২৮ জুন নাজমা পালিয়ে থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আরবি ভাষা ঠিকভাবে আয়ত্ব করতে না পারায় পুলিশ ঠিকানা জানতে চায়। নাজমা সেলিনা আক্তার শাহনাজের বাসার ঠিকানা দিলে পুলিশ তার সাথে যোগাযোগ করে। পুলিশ শাহনাজের সাথে যোগাযোগ করার পর নাজমার ভিসা বাতিল করে তাকে ২৯ জুন দেশে পাঠিয়ে দেয়।
নাজমা জানান, সেলিনা আক্তার শাহনাজ ৯টা বিয়ে করেছে। বর্তমানে দেশে বিদেশে মিলিয়ে চারজন স্বামী আছে তার। ওমানে যে স্বামীর কাছে সেলিনা আছে তার নাম নূরুজ্জামান। শাহনাজ ওমানে দীর্ঘদিন দেহ ব্যবসা করে আসছে। আমি তার কথা মতো কাজ না করায় শারীরিক নির্যাতন চালাতো। সর্বশেষ সহ্য করতে না পেরে পুলিশকে জানিয়েছি। সবশেষ সে আমার ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি এই প্রতারক চক্রের বিচার চাই।
চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউপি সদস্য আবুল খায়ের জানান, আমি বিষয়টি জানি। আমার ওয়ার্ডের মেয়ে নাজমা। এ অবস্থায় নাজমাকে কীভাবে সাহায্য করবো বুঝতে পারছি না।
শাহনাজের ছোট বোন নাছিমা আক্তার জানান, নাজমা বিদেশে গেছে ৮ মাস। সে যে মালিকের বাসায় গেছে সে মালিকের বাসায় আমার বোনও কাজ করে। বিদেশে কেউ কাউকে আঘাত করতে পারে না। নাজমার সাথে মালিকের ঝামেলা হওয়ায় মালিক তার ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখানে আমার বোনের কোনো দোষ দেখছি না।
এ বিষয়ে কথা বলতে সেলিনা আক্তার শাহনাজের সাথে ইমুতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।