সাধারণত যেটা ঘটে থাকে সেটা হলো প্রাণীরা জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন প্রাণী শিকার করে। তারপর কোনও প্রকার রান্না বান্না ছাড়াই শিকার করা প্রাণীটিকে খেয়ে ফেলে তারা। একমাত্র মানুষই নুন তেল সহযোগে সেগুলো রান্না করে খায়। কিন্তু কখনো কি শুনেছ উদ্ভিদরা খাওয়ার জন্য প্রাণী শিকার করছে? যারা একটু খোঁজখবর রাখ তারা হয়তবা মাংসখেকো উদ্ভিদের নাম শুনে থাকবে।
আর তোমরা যারা ছবির পোকা তারা টারজান ছাড়াও বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বিভিন্ন রকম মানুষ খেকো গাছ দেখেছ। সেখানে দেখা যায় বিশাল একটা গাছের লতা আষ্টেপৃষ্টে মানুষ বা বিভিন্ন প্রাণী জড়িয়ে ধরে তাদের খেয়ে ফেলছে। সেটা দেখে তোমাদের ধারণা হতে পারে বাস্তবে বুঝি মানুষখেকো উদ্ভিদ আছে। কিন্তু সত্যি কথা হলো মানুষ খেয়ে ফেলে এমন
কোন উদ্ভিদের দেখা এখনো পায়নি উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা। তবে কিছু উদ্ভিদ আছে যারা ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে । এদের বলে মাংসখেকো উদ্ভিদ। আজ কয়েকটি মাংসোখেকো উদ্ভিদের গল্প শোনাব তোমাদের।
মাংসখেকো উদ্ভিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদ্ভিদ হলো কলস উদ্ভিদ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, স্ন্যাপ ট্র্যাপ, ব্লাডার ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে খুঁজলেও এই উদ্ভিদ খুঁজে পাবে। সেখানে সূর্য শিশির, ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ নামের একাধিক মাংসখেকো উদ্ভিদ আছে।
সাধারণত যেসব এলাকার মাটিতে পুষ্টি উপাদান কম (বিশেষ করে নাইট্রোজেন) এবং মাটি ভেজা সেখানে মাংসখেকো এই উদ্ভিদগুলোকে জন্মাতে দেখা যায়। কারণ মাটি থেকে পুষ্টি না পাওয়ায় এর অভাবটা এরা পোকামাকড় খেয়ে মিটিয়ে থাকে। দক্ষিণ আমেরিকাতে মাংসখেকো উদ্ভিদ সবচে বেশী দেখা যায়। এছাড়া এশিয়ার কিছু দেশেও এর দেখা মেলে।
এই উদ্ভিদগুলো পোকামাকড়কে ধরার জন্য নানা ধরনের ফাঁদ পাতে। আর বোকা পোকামাকড়ও সেই ফাঁদে সহজেই ধরা পড়ে। কলস উদ্ভিদের কথাই বলা যাক। এই গাছটি দেখতে অনেকটা কলসের মতো। তাই এর নাম কলস উদ্ভিদ। এই কলসের উপরের দিকে ফুলের মতো দেখতে লাল রঙের চমৎকার একটি অংশ থাকে। এই অংশে মধুর মতো রস নিংসৃত হয় যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। মধুলোভী পোকামাকড় এই কলসের উপরে বসে মধু সংগ্রহ করতে গেলেই ঘটে যায় বিপত্তি। কারণ পিচ্ছিল কলসের উপর বসার কিছুক্ষনের মধ্যেই সে পা পিছলে কলসের মধ্যে পড়ে যায়। এরপর কলসের ভেতরের এক ধরনের রস এসে পোকাটিকে আটকে ফেলে। তারপর কলস উদ্ভিদ আরও কিছু রসের সাহায্যে পোকাটাকে হজম করে ফেলে।
তবে সেরা মাংসখেকো উদ্ভিদ সম্ভবত ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ। আমেরিকার সাউথ ও নর্থ ক্যারোলিনায় এই উদ্ভিদগুলো ব্যাপকভাবে বিভিন্ন প্রকারে পাওয়া যায়। উদ্ভিদগুলো প্রায় এক ফিটের মতো লম্বা হয়। ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের পাতাগুলো দেখতে অনেকটা মুখের চোয়ালের মতো। এই পাতাগুলো তিন থেকে ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয় এবং এতে ছোট ছোট অনেকগুলো লোম থাকে। পোকামাকড় যদি কখনো এই পাতার উপর বসে তাহলে এই পাতা মুহুর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। কারণ ভেনাস ট্র্যাপের পাতা খুবই সংবেদনশীল। তাই আধ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে সে তার পাতা বন্ধ করে ফেলতে পারে। ঠিক এই সময় আবার পাতার লোমগুলোও পোকাকে বাইরে বের হতে বাধা দেয়। ফলে পাতার মাঝখানে পোকা আটকা পড়ে। এর পর আর কী, পাতা থেকে বিশেষ এক রস বের হয়ে পোকাকে হজম করতে শুরু করে। এভাবে একটা পোকা হজম করতে ভেনাস ট্র্যাপের ১০ দিনের মতো সময় লাগে।
একটি পোকা হজম শেষ হলে ওই পাতাটা আবার খুলে যায় নতুন কোন পোকাকে ধরার আশায়। একটি পাতা তিন থেকে চারটি পোকা ধরতে পারে, তারপর তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, নতুন পাতা শুরু করে শিকারের কাজ।
কিন্তু তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ভেনাস ট্র্যাপ অন্যান্য উদ্ভিদের মতো নয় কেন? তারা জল হাওয়া না খেয়ে পোকামাকড় খায় কেন? একটা উত্তর দেয়া যায় এভাবে, এই গাছের স্বভাবটাই এই রকম। তাই ওরা পোকামাকড় ধরে খায়। কিন্তু তাতে আসল ব্যাপারটা পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। আসলে ভেনাস ট্র্যাপের বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর নাইট্রোজেন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই উদ্ভিদ জন্মে সাধারনত জলাভূমিতে। জলাভূমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ এমনিতেই খুব কম থাকে। তাই এই উদ্ভিদকে নাইট্রোজেন যোগাড় করতে হয় পোকামাকড় খেয়ে।
কিছু কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকতে গিয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে এই সব উদ্ভিদ মাংসভূক হয়েছে। কিন্তু অনেকেই বিজ্ঞানীদের এই মতবাদ সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেন।
তোমরা অনেকেই হয়তো মাংসভূক এসব উদ্ভিদের কথা শুনে ভয় পাচ্ছ। কিন্তু সত্যি সত্যি এদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর এখন তো অনেকেই শখ করে বাড়িতে টবে চাষ করছে মাংসখেকো বা মাংসভূক উদ্ভিদ। টবে চাষ করার সময় গাছে পানি দিতে গেলে কচ করে সে তোমার আঙুল খেয়ে ফেলবে না। তাই নো টেনশন।