চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট==
কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর গ্রামের মুসল্লি বাড়ির মৃতঃ আবুল বাসারের পুত্র মোঃ আবুল কালামের বিরুদ্ধে তার প্রথম স্ত্রী সালমা আক্তারের জাল তালাকনামা প্রদর্শণের মাধ্যমে প্রতারণা করে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ব্যতিত দ্বিতীয় বিয়ে করে ঘর-সংসার করার এবং প্রথম স্ত্রীর পক্ষ থেকে বিবাহিত জীবনে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ছল-ছাতুরী ও প্রভাব খাটিয়ে ২৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ৩৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, শাহরাস্তি উপজেলার টামটা গ্রামের মোঃ হাবিব উল্যাহ’র প্রথম মেয়ে সালমা আক্তারের সাথে কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর গ্রামের মুসল্লি বাড়ির মৃতঃ আবুল বাসারের ছেলে মোঃ আবুল কালামের সাথে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে এক লাখ টাকা কাবিন ধার্য্য করিয়া মুসলিম শরা শরীয়তের বিধান মতে রোজ হাজেরানা মজলিশে বিবাহ হয়। বিবাহের পর আবুল কালাম সালমা আক্তারকে তার জজিয়তে উঠিয়ে নিয়ে কোনরূপ তলবী মোহরানা আদায় না করে দাম্পত্য জীবন-যাপন করে। সালমা আক্তারের গর্ভে আবুল কালামের ঔরষের দু’টি সন্তান জন্ম লাভ করে। তাদের নাম, মোঃ সিহাব হোসেন শান্ত (১০), ফারিয়া আক্তার ঝর্ণা (৫)। গত ৫ জুলাই আবুল কালাম তার প্রথম স্ত্রী সালমা আক্তারকে না জানিয়ে ও জাল তালাকনামা প্রদর্শনের মাধ্যমে হাজীগঞ্জ উপজেলার বাজনাখাল বেপারী বাড়ির মৃতঃ আব্দুর রশিদ বেপারীর মেয়ে জ্যোৎস্নাকে বিয়ে করে ঘর-সংসার শুরু করে।
সালমা আক্তার অভিযোগ করেন, আবুল কালামের সাথে আমার বিবাহের পর থেকে দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আর এ নির্যাতন করেছেন আমার স্বামী আবুল কালাম, আমার শ্বাশুড়ী সাজেদা বেগম, আমার ননদ কাজল (হাওয়া), ফেরদাউস, রেখা, নাছিমা, তাসলিমা। আবুল কালামের বর্তমান বউ জ্যোৎস্নাও আমাকে ফোন করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এখন আমি আমার দু’ সন্তানকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মেয়েদের জীবনে বিবাহ ১ বার হয়, এই ভেবে আমার মা ও আমি আমার পিতার স্বর্ণাঙ্কার ও নগদ টাকা মিলিয়ে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা পর্যায়ক্রমে তাদেরকে দিয়েছি। নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য এবং অসহনীয় নির্যাতনে মুখ বন্ধ করে সহ্য করেছিলাম; স্বামীর সংসারে থাকার জন্য। কিন্তু যে দিন জানতে পারি আবুল কালাম জাল তালাকনামা তৈরি করে জ্যোৎস্নাকে দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছে, সে দিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাকে যারা নির্যাতন করেছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবির। বিবাহের কাবিননামায় আমার নাম মোসাঃ সালমা আক্তার লিপিবদ্ধ রয়েছে। আমার ভোটার আইডি কার্ডেও মোসাঃ সালমা আক্তার। অথচ আমার স্বামী আবুল কালাম জাল তালাকনামায় খুকি বেগম (সালমা) লিখে তালাকনামা তৈরি করে লোক মারফত আমার পিত্রালয়ে পাঠায়, যা আমার বিবাহের কাবিনের নামের সাথে কোনো মিল নেই এবং এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। সে জাল তালাকনামায় যে কাজীর সীল, সই ও তারিখ রয়েছে, তা –হলো মোঃ আনোয়ার হোসেন, সাতবাড়িয়া, সোনাইমুড়ি, বরুড়া, কুমিল্লা, তারিখঃ ০৭/০৬/২০১৩ খ্রিঃ।
সালমা আরো জানায়, আমার পিতা ও আমার দু’ভাই প্রবাসী। আমার পিতা ২৬ বছর বিদেশে কর্মরত ছিলেন। আমার পিতার প্রবাস জীবনে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে আনোয়নকৃত ২৮ ভরি স্বর্ণ, যার মধ্যে বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যেমন- নেকলেস, কানের দূল, বেচলেট, আংটি, চেইন ইত্যাদি। আমার শ্বশুর বাড়ি লোকদের যৌতুকের জন্য অতিঅসহনীয় নির্যাতনের বলি থেকে বাঁচতে সে সব স্বর্ণালঙ্কার বিভিন্ন সময় পর্যায়ক্রমে আমি ও আমার মা যৌথভাবে আমার স্বামী, আমার শ্বাশুড়ী ও আমার ননদের হাতে তুলে দেই। আমার স্বামী অবৈধ আদম ব্যবসায়ী। আদম ব্যবসায় আরো টাকার প্রয়োজন হয়েছে। আদম ব্যবসার টাকা আমার পিত্রালয় থেকে আনার জন্য আমার স্বামী, আমার শ্বাশুড়ী ও আমার ননদ তারা সবাই ধারাবাহিকভাবে আমার উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালু করেন। যার ফলে আমার শ্বশুর বাড়ি-স্বামী-সংসার ঠিক রাখতে আমার পিতাও ভাইদের সারা জীবনের রোজগারের জমানো প্রায় ২৬ লাখ টাকা আমি ও আমার মা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে পর্যায়ক্রমে আমার স্বামী, শ্বাশুড়ী ও ননদের হাতে তুলে দেই। আজ আমার পিতা তাঁর প্রবাস জীবনে থাকাবস্থায় রোজগারের সেই স্বর্ণালঙ্কার ও টাকার শোকে, টেনশনে প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আমার মার শারীরিক অবস্থাও একই পর্যায় পরিণত হয়েছে। আবুল কালাম গংয়ের স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা যখন যা দিয়েছি পরবর্তীতে তার কিঞ্চিৎ পরিমাণও আমাদেরকে ফেরৎ দেয়নি। এদিকে আমি ও আমার দু’সন্তানকে নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয় খরচ-পোষন ও স্বাভাবিক জীবনে বাঁচার নিমিত্তে শোকে, চিন্তায় শারিরীক ও মানসীকভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। আমার মা-বাবা-ভাই-বোন সবাই কথায় কথায় আমাকে বলে আমার কারনে তারা ফকির হয়ে গেছে। এসব কষ্ট স্বীকার করে অসহায়ত্ব জীবন নিয়ে বর্তমানে আমি আমার পিত্রালয়ে দু’সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছি। আমার স্বামী, শ্বাশুড়ী ও ননদের কাছ থেকে আমাদের পাওনা আদায়ে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি এবং আমার প্রতি অমানষিক নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে বিচারের দাবি করছি।
সালমা আক্তারের পিতা মোঃ হাবিবুল্লা জানান, আমার ২৬ বছর প্রবাস জীবনের অক্লান্ত প্ররিশ্রমের কামাই করা ২৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ২৬ লাখ টাকা আমার মেয়ে সালমা আক্তার ও আমার স্ত্রী রওশনাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ছল-ছাতুরী ও প্রভাবিত করে সালমা আক্তারের জামাতা আবুল কালাম ও তার মা-বোনেরা আত্মসাৎ করেছে। এখন আমি ভিক্ষুকের চেয়েও খারাপ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। শোকে, টেনশনে আমাকে কঠিন রোগে আক্রান্ত করেছে। নামাজ পড়ে দু’হাত তুলে অভিশাপ দিচ্ছি, আল্লাহ যেন তাদের বিচার করে।
সালমা আক্তারের মা রওশনারা জানান, সালমাকে আবুল কালামের সাথে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে, আবুল কালাম ও তার মা-বোনেরা আমাকে ও আমার মেয়েকে (সালমা) বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ছল-ছাতুরী ও প্রভাবিত করে আমার স্বামীর (হাবিবুল্লাহ) প্রবাস জীবনের অক্লান্ত পরিশ্রমের কামাই করা সম্পূর্ণ স্বর্ণলঙ্কার ও নগদ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এখন আমার স্বামীর মত আমিও শোকে, টেনশনে কঠিন কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। আমি প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে আবুল কালাম ও তার মা-বোনের জন্য অভিশাপ দিচ্ছি, আল্লাহ যেন তাদের বিচার করে। আবুল কালাম ও তার মা বোনের চাওয়া মতে এত স্বর্ণ ও টাকা কেন দিলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে সালমার মা বলেন, তারা (আবুল কালাম গং) যখন যা চাইতো, চাওয়া মতো না দিলে আমার মেয়ের (সালমা) উপর নির্যাতন করতো। তাই মেয়ের সুখের নিমিত্তে আবুল কালাম ও তার মা-বোনদের মন রক্ষার্থে সব দিয়েছি। আমাদের নিজের কথা কখনো চিন্তা করেনি। মাঝে মাঝে তাদেরকে টাকা দিতে না চাইলে আবুল কালাম এক দিকে বলতো আপনাদের কাছ থেকে যখন যা নিয়েছি আমি হিসাব রেখেছি। আপনারা চাওয়া মাত্রই সব স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা ফের দিব। অন্য দিকে না দিলে আমার মেয়েকে নির্যাতন করতো।
প্রতারক আদম ব্যবসায়ী আবুল কালাম ও মা-বোনদের প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্থ নিঃস্ব হয়ে পড়া প্রথম স্ত্রী সালমা আক্তার, শ্বশুর হাবিবুল্লা ও শাশুড়ী রওশন আরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ আত্মসাৎকৃত স্বর্ণালঙ্কারসহ টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের নিকট আবেদন জানিয়েছেন।
শিরোনাম:
রবিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।