প্রতিনিধি
কচুয়ায় চলতি মৌসুমে আলু চাষে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে করে পুঁজি ও সর্বস্ব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। চলতি বছরে উপজেলার বেশকিছু এলাকায় কয়েক একর জমিতে আলু চাষে ব্যাপক বিপর্যয় লক্ষ্য করা গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় সার ডিলারদের দেয়া নি¤œমানের সার, নি¤œমানের ঔষধ দেয়ার ফলেই ফসলি জমিতে আলুর চারা এখনো গজাচ্ছে (উঠে) না। তবে স্থানীয় ইউনিয়ন বিসিআইসি সার ডিলার, খুচরা বিক্রেতা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি অফিস দাবি করছে, বৈরী আবহাওয়া, মোজাইক রোগ (ভাইরাস), ও খারাপ বীজ রোপনের ফলেই এ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ বলে জানায়।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কচুয়া উপজেলার ৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের সেঙ্গুয়া বিলে কয়েক একর আলুর জমি শুধু ফষল বিহীন (খালি মাঠে) রূপান্তরিত হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা হচ্ছেন, সেঙ্গুয়া গ্রামের স্বপন, জমির পরিমান ৩৬ শতাংশ, শরীফ হোসেন, জমির পরিমান ৬৬ শতাংশ, নুরুল ইসলাম, জমির পরিমান ২৪ শতাংশ, জহিরুল ইসলাম, জমির পরিমান ২৭ শতাংশ, আবুল মিয়াজী, জমির পরিমান ১৮০ শতাংশ, ছফি উল্যাহ, জমির পরিমান ২৪ শতাংশ, আব্দুল কাদের, জমির পরিমান ২৮ শতাংশ, মনির হোসেন, জমির পরিমান ৬০ শতাংশ ও আল আমিন, জমির পরিমান ২৪ শতাংশ।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানিয়েছে, আলু আবাদের শুরুতে স্থানীয় পালাখাল বাজারের ইউনিয়ন বিসিআইসি সার ডিলার লোকমান হোসেন মিয়াজী, একই বাজারের খুচরা সার ডিলার অমর কৃষ্ণসাহা ওরফে মরন চৌধুরী ও আংশিক সার ৫নং পশ্চিম ইউনিয়ন সার ডিলার আশেক আলীর কাছ থেকে ক্রয় করে ফসলি জমিতে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, সরকার কর্তৃক বিসিআইসি ইউরিয়া, বিআরডিসি টিউনিশিয়া ও এমওপি সারের পাশাপাশি বেসরকারি ভাবে কচুয়ায় সারের ডিলারগণ এবছর টিএসপি নেবালন, মরক্কো টিএসপি, টিউনিশিয়া এলসিসহ বেশকিছু দেশীয় নি¤œমানের সার কৃষকদের মাঝে বিক্রি করেছে। কৃষি অফিস কর্তৃক কোন মনিটরিং না থাকায় সাধারণ কৃষকরা এসব নি¤œমান ও ভেজাল সার জমিতে প্রয়োগের ফলে এ বছর আলু চাষে বিপর্যয় হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা দাবি করছে। তবে অভিযুক্ত সার ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার অনুমোদিত বিআইসি ইউরিয়া, বিআরডিসির টিউনিশিয়া ও এমওপি ছাড়া অন্যকোন সার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে বিক্রি করা হয়নি।
সরজমিনে গিয়ে আরো দেখা গেছে, কিছু কিছু জমিতে আলুর ভালো ফলন হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া উল্লেখিত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ওই সকল জমিগুলোতে আলু গাছ (চারা) উঠতে দেখা যায় নি। তন্মধ্যে কিছু কিছু আলুর চারা মাটির উপরে দেখা গেলেও রোগাক্রান্ত ও জির্ণ ছিন্ন হলদে হয়ে মাটির উপর পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ এক কৃষক জানান, এক দিকে ভালো বীজ না পাওয়া, সার ও ঔষধের দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে চলতি মৌসুমে নি¤œমানের (ভেজাল) সারের ফলে আলু চাষে ব্যাপক মাসুল দিতে হবে। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় ইউনিয়ন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তাদের এ বছর মাঠে কৃষকদের পরামর্শ দিতে দেখা যায় না। সংশ্লিষ্ট কৃষি উপ-সহকারী ব্যক্তিরা দিনের পর দিন মাঠে না গিয়ে (কর্মস্থলে) মাসে মাসে সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছে বলে একটি সূত্র জানায়। ইউনিয়ন উপ-সহকারী ও কৃষি অফিসের লোকদের বার বার বলা সত্বেও কোন সাড়া না পেয়ে লাখ লাখ টাকার পুঁজি হারিয়ে দিশে হারা হয়ে পড়েছে সাধারণ কৃষকরা।
৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিলীপ কুমার দাস বলেন, সিডিউল অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহের রোববার সেঙ্গুয়া এলাকায় মাঠে কৃষকদের পরামর্শ দিতে যাই। তবে সেঙ্গুয়া এলাকায় কয়েক একর আবাদী কৃষি জমিতে আলুর ফসল বিপর্যয়ের বিষয়ে তার কোন পরামর্শ কৃষকরা পায়নি এমন অভিযোগ অস্বীকার করলেও কী কারণে আলুর বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলতে পারেননি তিনি।
উপজেলা উদ্ভিদ ও বীজ মনিটরিং কর্মকর্তা মানিক মিয়া জানান, উপজেলার কয়েক এলাকায় আলুর ফলনে বিপর্যয়ের খবর পেয়েছি। বৈরি আবহাওয়া, বারবার একই বীজ ব্যবহার, উর্বর জমি তৈরি না করার ফলে ও বিপর্যয় হতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রাকিবুল হাসানের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার ব্যবহৃত মোবাইলে বার বার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
শিরোনাম:
বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।