কচুয়া (চাঁদপুর) সংবাদদাতা : চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার মাঠ জুড়ে বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বোরো ধানের সোনালী শীষ হাজারো কৃষকের পরিবারের চোখে মুখে স্বপ্ন বুনছে।
বর্তমানে শেষ মহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। নতুন ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে চাষীরা বিভোর। কৃষাণ-কৃষাণীরা গোলা, খলা, আঙ্গিনা পরিষ্কার করায় ব্যস্ত।
সরকারের কৃষি বান্ধব কর্মসূচি, উপজেলা কৃষি অফিসের ব্যাপক তৎপরতা, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অনুকূল আবহাওয়া, সার, কীটনাশকসহ বাজারে কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সহনশীল দাম, সহজলভ্যতা ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সরবরাহ এবং আবাদ উপযোগী পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে বোরো আবাদ হয়েছে ১২৫১৫ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১২২২৫ মেট্রিক টন। নতুন বৃদ্ধি ২৯০ মেট্রিক টন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে। খুশিতে কৃষক পরিবারসহ ব্যবসায়ীরা। ক্ষেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কঁঞ্চি ও গাছের ডালের উপর ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধান ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে। আবার অনেকে অধিক ধান পাওয়ার আশায় নিজ নিজ জমিতে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করছে। কেউ আবার ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে। তবে কখন নতুন ধান ঘরে তুলবে এ স্বপ্নে বিভোর ওইসব কৃষকরা। তাই প্রতিটি বাড়ি বাড়ি চলছে নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসবের প্রস্তুতি।
রহিমানগর বোরো চাষী এনায়েত হোসেন বলেন- এবছর আমি ৩ বিঘা জমিতে ইরি ধান লাগিয়েছি। গত ইরি ও আমন মৌসুমে ধানের দাম ভালো পেয়েছি। তাই গতবারের চেয়ে এবার এক বিঘা জমি বেশি ধান চাষ করেছি। ‘গতবারের চেয়ে এইবার বোরো ধানের ফলন ভালো দেখছি। ক্ষেতে এবার রোগ বালাই বেশি। যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না যদি আসে, তাহলে ধানের ভালো ফলন পাবো।
দোয়াটি গ্রামের কৃষক মো. মাহফুজ বলেন, সেচ খরচ এবং শ্রমের অধিক মূল্য ও কৃষি শ্রমিকের কিছু সমস্যা থাকলেও অনুকূল আবহাওয়ায় সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ায় এ বছর বোরো ধান খুবই ভাল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ধান ক্ষেতের পাশে দাঁড়ালে বুক জুড়িয়ে যায়। এ বছর তিন একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার অধিক ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোফায়েল হোসেন জানান- বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারে এবং কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষক অনেকটা লাভবান হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠ জুড়ে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। কৃষকদের আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎপাদন।
চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/