হাসানুজ্জামান
অভিসপ্ত যৌতুকের বলি হলো এক গৃহবধু। সংসার করা হলো না তার। প্রাণ দিতে হলো তাকে- এমন ঘটনাটি গতকাল সোমবার দুপুর ১ টায় চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর নিলাম বাড়িতে ঘটে। জানা যায়, ওই বাড়ির আবু তাহেরের পুত্র সুমন (২৫) গত ৫ মাস আগে একই উপজেলার আমুজান দ্বর্জি বাড়ির মৃত জহিরুল ইসলামের কন্যা মারজান (২২) কে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক সংক্রান্ত বিষয়ে শ্বশুড় পরিবারের লোকজন নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করতো মারজানকে। ওই থেকে শুরু হয় তার উপর অমানবিক নির্যাতন। ঘটনার দিন দুপুরে সুমনের বসত ঘরে সিলিং ফ্যানের সাথে মারজানকে ঝুলতে দেখে বাড়ির লোকজন। ডাক-চিৎকারে ছুটে আসেন আশপাশের মানুষ। মারজানকে নামিয়ে দ্রুত নিকটস্থ শাহরাস্তি সরকারী হাসপাতালে নিয়ে আসেন তারা। পূর্বেই তার মৃত্যু ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তব্যরত ডাক্তার। মারজানের মৃত্যু খবর পেয়ে কচুয়া থানা পুলিশ শাহরাস্তি থানা পুলিশের সহযোগিতায় লাশ নিয়ে যায় নিজ থানায় এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরন করেন। এ ঘটনায় শ্বাশুড়ি সুফিয়া বেগম (৪৭) ও ননদ লিপি আক্তার (২৮) কে থানা পুলিশ আটক করে। মৃত মারজানের চাচা বাবুল মিয়া বলেন, মারজানের আগেও একটি বিয়ে হয়েছিলো। সেখানে সে শ্বাশুড়ি-ননদের জন্য টিকতে পারে নি। পরে পারিবারিক ও শরা-শরিয়তের নিয়মানুযায়ী সুমনের সাথে তার বিয়ে হয়। প্রায় ৫ মাস হলো তাদের বিয়ে। এরই মধ্যে সুমন ও তার পরিবারের লোকজন যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দেয় মারজানকে। পিতা হারা কন্যাটির সুখের কথা ভেবে বিয়ের সময় ৫০ হাজার দেয় সুমনের বাবা আবু তাহের (৫৫) কে। শুরু হয় যৌতুক আদায়ের মোহরা। সাথে চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অতিষ্ট মারজান বিষয়টি বারবার জানায় তার পিতা পরিবারকে। গত এক সাপ্তাহ আগেও তাদেরকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছে মারজান পরিবার। তবুও তাদের শেষ হয়নি যৌতুকের লোভ । ঘটনার আগের দিন শ্বাশুড়ি সুফিয়া বেগম, শ্বশুর আবু তাহের ও ননদ লিপি আক্তার মারজানকে যৌতুকের টাকার জন্য অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে এবং সুমন তার গায়ে হাত তোলে। বিষয়টি ওই বাড়ির লোকজন অবহিত আছে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে এসআই আবু হানিফ বলেন, মারজানের মরদেহ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহালে শেষে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় নিহত মারজানের শ্বাশুড়ি ও ননদে আটক করা হয়েছে আর শ্বশুর এবং স্বামী পলাতক রয়েছে। স্থানিয় ও বাড়ির লোকজন বলেন, যৌতুকের টাকার জন্য প্রায়ই মারজানকে মারধর করতো তার স্বামী সুমন ও অন্যান্যরা। ঘটনার দিন দুপুরে ওই ঘরে ধস্তাধস্তির শব্দ শোনা যায়। কে বা কারা এমন করছে তা বুঝতে পারি নি । এক সময় মারজানের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পাই। ঘটনাটি চার দিকে ছড়িয়ে পড়লে আবু তাহের ও তার পুত্র সুমন পালিয়ে যায়। মারজান বাঁচার চেষ্টা করেছিলো। তার শ্বশুড়িকে ঝাপটে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলো। শ্বশুড়ির শরীরে সেই দাগ বিদ্যমান। এমন ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান তারা।