কচুয়া(চাঁদপুর)সংবাদদাতা: একদিকে চলছে রমজান মাস, অন্যদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ। এই দুই মিলে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তরমুজের দাম। বৈশাখের গরমে রোজা রাখার পর ইফতারে রোজাদারদের প্রাণে প্রশান্তি আনে রসাল ফল তরমুজ। অনেকে আবার ফলটিকে ‘গরমের আরাম’ বলেও অভিহিত করে থাকেন। রমজানকে কেন্দ্র করে এবার বাজারে তরমুজের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু স্বস্তির এই ফলের দাম নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা।
কচুয়ায় পাইকারি ও খুচরা ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবখানেই তরমুজের সরবরাহ কয়েকগুণ বেড়েছে। ছোট দোকানগুলোয়ও তরমুজের ছড়াছড়ি। এলাকার অলিগলিতে ভ্যানে করেও বিক্রি হচ্ছে। তবে আকারে ছোট বড় সকল সবুজ তরমুজ পিস হিসাবে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েকদিনে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়ায় তরমুজের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বাজারে বড় আকারের তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা। ছোট আকারেরগুলো বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা পিস।
কচুয়া উত্তর বাজারে মোড়ের তরমুজ বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, রোজায় তরমুজের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া গরম বাড়লে এমনিতেও তরমুজের বিক্রি বাড়ে। লকডাউনের কারণে পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম। পাইকারিতে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। রমজানের আগে মৌসুমের শুরুতে যে তরমুজ বিক্রি করেছি ১৫০-২০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০–৩০০ টাকা কেজি পর্যন্ত। একটু বড় আকারেরগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা।
কচুয়া বাজারের বিশিষ্ট তরমুজ ব্যবসায়ী সোহেল বলেন- তরমজর মৌসুম খুব বেশি দিন থাকে না। কচুয়াতে যে তরমুজ পাওয়া যায় তার বড় অংশই আসে চট্রগাম ও ঢাকা থেকে। এ বছরও কচুয়াতে সন্তোষজনক হারে তরমুজ আমদানি হয়েছে।
পাইকারি দর নিয়ে টুটুল জানান, আড়তে তরমুজ ১০০ পিস হিসাবে বিক্রি হয়। আকার ভেদে ও এলাকাভেদে দাম বেশ-বেশি। তিন থেকে চার কেজি ওজনের তরমুজে শ’(১০০ পিস) ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং ৫ থেকে ৬ কেজি ওজনেরগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তরমুজের এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন- রোজার কারণে তরমুজের চাহিদা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বিধিনিষেধের কারণে তরমুজ কম আসছে। এছাড়া তরমুজের মৌসুমও শেষ হয়ে আসছে। এসব কারণেই তরমুজের দাম বেড়ে গেছে।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সোহেল রানা জানান- তরমুজে খুব সামান্য ক্যালোরি আছে। তাই তরমুজ খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। তরমুজের ৯২ শতাংশই পানি। শরীরে পানির অভাব পূরণে ফলের মধ্যে তরমুজই হলো আদর্শ ফল। তরমুজে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও আঁশ। মৌসুমি এই ফলটির রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তরমুজ হলো ভিটামিন ‘বি৬’-এর চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্ক সচল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি আরো বলেন, ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তরমুজে প্রচুর পানি এবং কম ক্যালরি থাকায় পেট পুরে তরমুজ খেলেও ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা উচ্চ পরিমাণে সিট্রুলিন মানবদেহের ধমনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।