মাত্র সাড়ে নয় ঘণ্টার ব্যবধানে মা-বাবা দুজনকেই হারাতে হবে! এমন একটি
ট্র্যাজেডির জন্যে সন্তানদের অপেক্ষা করতে হবে তা কোনোদিন কারো ভাবনার
মধ্যেই আসেনি। মাকে কবরস্থ করার কাজ শেষ করে বাসায় আসার দেড় ঘণ্টার মাথায়
বাবাও চলে গেলেন পরপারে। এমন শোক কি কারো সহে?
এমন হৃদয়বিদারক শোকাবহ ঘটনা ঘটলো চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ও
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তা আনোয়ার হাবিব কাজলদের
পরিবারে। আর এমন শোকাবহ ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর শহরে। প্রথম মৃত্যু সোমবার
সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটের সময়। আর দ্বিতীয় মৃত্যু রাত পার হয়ে ভোর ৫টায়।
প্রথম মারা গেলেন মা রাবেয়া বেগম (৭২), আর সাড়ে নয় ঘণ্টা পর মারা গেলেন
বাবা মজিবুর রহমান পাটওয়ারী (৮৭)। মজিবুর রহমান গণপূর্তের অবসরপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা ছিলেন। দুজনই মারা গেছেন চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখা এলাকাস্থ
বাসায়।
সন্তানরা গ্রামের বাড়িতে মাকে দাফন শেষ করে বাসায় ফেরার দেড় ঘণ্টার মাথায়
বাবাও চলে গেলেন সন্তানদের চিরতরে এতিম করে। চার ছেলে তিন মেয়ে কখনো ভাবেনি
বুক ফেটে যাওয়ার মতো এমন একটি দুঃখ ও কষ্টের দিন অপেক্ষা করছে তাদের
জন্যে।
মজিবুর রহমান ও রাবেয়া বেগম দম্পতির ছেলে এবং নাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
হন সমপ্রতি। এ সংক্রান্ত নিউজও কয়েকদিন আগে আসে চাঁদপুরের পত্রিকাগুলোতে
যে, শহরের চিত্রলেখা এলাকায় বাবা ও ছেলে করোনায় আক্রান্ত। ছেলে ও নাতি
আক্রান্ত হওয়ার সপ্তাহের মাথায় বৃদ্ধ বাবা-মা মারা গেলেন। তাঁরা উভয়ই
করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। বাবা-ছেলে আক্রান্ত হওয়ার পর ওই পরিবারের
সবার স্যাম্পল নেয়া হয় করোনা পরীক্ষার জন্যে। সেখানে মা-বাবার স্যাম্পলও
ছিলো। যদিও রিপোর্ট এখনো আসেনি। ধারণা করা হচ্ছে আক্রান্তদের থেকেই বাবা-মা
সংক্রমিত হয়েছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা তাদের সাথে এক বাসায়ই থাকতেন।
রাবেয়া বেগম সোমবার সন্ধ্যায় মারা যাওয়ার পর রাত আড়াইটার মধ্যে তাঁর দাফন
কাজ সম্পন্ন করা হয়। দাফন করা হয় তাঁর গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার আশিকাটি
ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডস্থ হোসেনপুর (লালদিয়া) গ্রামের পাটওয়ারী বাড়িতে। দাফন
কাজ শেষ করে আনোয়ার হাবিব কাজলরা চাঁদপুর শহরের বাসায় ফিরেন রাত আনুমানিক
সাড়ে তিনটার দিকে। এর দেড়ঘণ্টা পর ভোর পাঁচটার দিকে তাঁদের বাবাও মারা যান।
শোকের উপর শোক। শুরু হয়ে যায় পুরো পরিবারে শোকের মাতম। একদিকে চলছে শোকের
মাতম, অপরদিকে লাশ দাফন নিয়ে চলছে মানুষ নামের কিছু অমানুষের নির্মম আচরণ।
করোনায় মারা গেছেন, সেজন্যে গ্রামের মানুষরূপী কিছু হায়েনার অদ্ভুত আচরণ।
পরে অবশ্য সকল ভালো মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে উভয়ের দাফন ভালোভাবেই সম্পন্ন
হয়।