চাঁদপুর শহরের স্ট্যান্ড রোডের পুরোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজী ট্রেডার্সের ম্যানেজার নাসিম উক্ত প্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নিজের বিশ্বস্ত স্থানে রেখে আত্মসাৎ করে মলম পার্টি কর্তৃক টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে নাট্য কর্মীদের মতো নাটকীয় অভিনয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মেসার্স কাজী ট্রেডার্সের ম্যানেজার মোঃ নাসিমকে প্রতিষ্ঠানের মালিক আলহাজ্ব কাজী হুমায়ুন কবির বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের দেওয়া চেক যথাক্রমে উত্তরা ব্যাংকের ২ লাখ টাকার একটি চেক, ইসলামী ব্যাংক তেকে ১২ লাখ ৭ হাজার ৬শ’ ৮০ উত্তোলনের একটি চেক। উত্তরা ব্যাংকের একটি চেক ও জনতা ব্যাংকের একটি চেকসহ মোট ৪টি চেক তাকে দেয় নগদ টাকা উত্তোলনের জন্য। এর মধ্যে ম্যানেজার নাসিম উত্তরা ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা উত্তোলন করে। এরপর তিনি ইসলামী ব্যাংক থেকে ১২ লাখ ৭ হাজার ৬শ’ ৮০ টাকা উত্তোলন করে। এ দু’টি চেকের উত্তোলিত ১৪ লাখ ৭ হাজার ৬শ’ ৮০ টাকা উত্তোলন করে তার কাছে রাখে। বিশ্বস্ত সূত্রটি জানায়, ম্যানেজার নাসিম এ টাকার ব্যাগ নিয়ে হেটে কালিবাড়ি মোড় পর্যন্ত যায়। এর কিছুক্ষণ পর সিগারেট ফুকতে ফুকতে খালি হাতে জে এম সেনগুপ্ত রোডস্থ জনতা ব্যাংক নতুন বাজার শাখা পেরিয়ে ৪র্থ তলায় উঠার সিড়িতে পড়ে থাকে। এ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের জনৈক কর্মকর্তা তার সহকর্মীদের খবর দিয়ে তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তার ম্যানেজার নাসিমের বিষয়টি মলমপার্টি ভেবে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজ অনুযায়ী দেখা যায় নাসিম যে মলমপার্টির অভিনয় করেছেন তার সাথে বিন্দুমাত্র মিল নেই। এর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসন এবং সাংবাদিক ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মাঝেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ইতিপূর্বে কাজী ট্রেডার্সের এই ধরণের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের সময় উত্তোলনকারীর সাথে আরো দু’ একজন কর্মচারী আসলেও অদৃশ্য কারণে গতকাল ম্যানেজার নাসিম ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে একাই আসে। এছাড়া উক্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ম্যানেজার নাসিমকে যে পন্থায় টাকা উত্তোলনের কথা বলেছেন, তিনি তার বিপরীতে টাকা উত্তোলন করেছেন। এতেই প্রমাণিত হয় যে, ম্যানেজার নাসিম টাকা আত্মসাতের জন্য মলম পার্টির ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে এবং নিজেই মুখে কসমিক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে অভিনয়ে লিপ্ত হয়। যদি মলম পার্টি খপ্পরেই তিনি পড়তেন তাহলে কোন টু শব্দ এমনকি ধস্তাধস্তির কোন শব্দ আশেপাশে এবং শিল্পকলা একাডেমীর সামনে থাকা ভ্রাম্যমাণ (ভ্যান গাড়ি) দোকানীরা টের পায় নি। অথচ তার পরিধেয় কাপড় চোপর এবং পকেটে থাকা চেক ও দামি মোবাইল সেট এবং মানিব্যাগটি অক্ষত থাকে। এতেই তার প্রতি সন্দেহ আরো ঘনিভূত হয়।
উল্লেখ্য, কাজী ট্রেডার্সের ম্যানেজার নাসিম এরপূর্বেও তার আপন শ্যালকের মালিকানাধীন চাঁদপুর শহরের হাজী মহসিন রোডস্থ মেসার্স রুবি স্টোরের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। এছাড়াও শহরের কালিবাড়ি মোড়স্থ রূপসী মার্কেটে বেশ কয়েকজন পার্টনার ডিপ্লোমেট নামক সেলুন ব্যবসার শুরু করে সেখানেও এ ব্যবসার অন্যান্য অংশীদারদের সাথে গাফলার অভিযোগ রয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার শোল্লা গ্রামে একটি বিশাল পল্ট্রি ফার্মে চাকরি করা অবস্থায় মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার শালিস দরবরাও হয়। তাছাড়া নারী ও মাদকের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এদিকে মেসার্স কাজী ট্রেডার্সের টাকা মলম পার্টি কর্তৃক ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি শহর জুড়ে আলোচনায় শুরু হওয়ার পর চাঁদপুর মডেল থানার ইনচার্জ আব্দুল কাইয়ুম, সেকেন্ড অফিসার মাহবুব মোল্লা, এসআই জাহাঙ্গীর, কিবরিয়া, ফারুকসহ বেশ কয়েকজন অফিসার চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে ম্যানেজার নাসিমের সাথে কথা বলেন। বিকেল ৫টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে যান। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে মলম পার্টির কবলে ম্যানেজার নাসিম পড়লে তার অবস্থা অস্বাভাবিক থাকতো কিন্তু ঘটনার পর থেকেই নাসিমের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। ডাক্তারের বক্তব্য অনুযায়ী এটি কোন মলম পার্টির ঘটনার মতো কোন ঘটনা তার শারিরীক অবস্থায় পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যে কারণে ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ প্রশাসন ও শহরবাসীর মাঝে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং ম্যানেজার নাসিমকেই সন্দেহের জালে বেধে রেখেছে। বিষয়টির পুরো তদন্ত করলে এর প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন হবে। এ বিষয়ে কাজী ট্রেডার্সের কর্ণধার আলহাজ্ব কাজী হুমায়ুন কবির চাঁদপুর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামে টাকা চুরির একটি মামলা দায়ের করেছে।
শিরোনাম:
সোমবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।