খুব কম লোকই আছেন, যিনি কান পরিষ্কারের বিষয়টি ভাবেন না। যদিও কান পরিষ্কারের ব্যাপারটি অনেক আগে থেকে চলে এসেছে। এক সময় কান পরিষ্কারের জন্য মুরগির পালক সংগ্রহ করে তা সুবিধাজনক সাইজে কেটেছেঁটে নিয়মিতভাবে সংরক্ষণ করা হতো কান পরিষ্কারের জন্য। মুরগির পালক ছাড়াও যেকোনো ধরনের শলাকা, চুলের কিপ, পেনসিলের মাথা, কচুর চিকন ডগাসহ নানা জিনিস দিয়ে লোকজন কান পরিষ্কারের কাজটি করতে ব্যস্ত থাকেন। হালে কান পরিষ্কারের এসব উপকরণে পরিবর্তন এসেছে। সাম্প্রতিককালে কান পরিষ্কারের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কটনবাড।
কান পরিষ্কারের আদৌ দরকার নেই!
কটনবাড ব্যবহারকারী প্রায় সবাই মনে করেন কান পরিষ্কারের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ও স্বাস্থ্যসম্মত একটি উপকরণ হচ্ছে এই কটনবাড। যদিও এই কটনবাডের ব্যবহার শুরু হয় শিশুদের নাক পরিষ্কারের জন্য। কিন্তু কান পরিষ্কারের আগ্রহী মানুষের কাছে তা সহজেই ব্যাপকভাবে সমাদৃত মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে। আজকাল ওষুধের দোকানে এসব কটনবাড পাওয়া যায় বলে সাধারণ লোকজন এটিকে স্বাস্থ্যসম্মত ও চিকিৎসার একটি উপকরণ হিসেবে পণ্য করতে শুরু করেছেন।
কান পরিষ্কারের কাজে কী ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা উচিত সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কান পরিষ্কারের প্রয়োজন সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা যাক। বেশির ভাগ নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিশেষ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কান পরিষ্কারের কোনো দরকার নেই। সাধারণভাবে যেসব কারণে কান পরিষ্কার করার প্রতি মানুষের এই আগ্রহ জন্মেছে, তার অন্যতম হচ্ছে ওয়াক্স বা খৈল। বাদামি কিংবা হালকা বাদামি রঙের এই খৈল বা ওয়াক্স প্রকৃতিগতভাবেই কানের মধ্যে তৈরি হয়।
কানের সরুপথের বাইরের দিকে অবস্থিত দু-তৃতীয়াংশ স্থানে আবৃত ত্বকে রয়েছে সেরুমিনাস ও পাইলোসিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড। এ দু’টি গ্র্যান্ডের মিশ্রিত নিঃসরণ ও খোসার মতো উঠে আসা ত্বকের মৃত কোষ ও বাইরের ধুলোময়লা মিলে তৈরি হয় কানের খৈল বা ওয়াক্স। প্রকৃতিগতভাবেই কানের সরুপথের ত্বক বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেখানে জমে থাকা তরল ও আঠালো খৈলকে কানের বাইরে পাঠাতে ব্যস্ত থাকে। সেই সাথে চোয়ালের অনবরত নড়াচড়া সাধারণভাবে কানে জমা খৈলকে কান থেকে বের করে দেয়ার প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। এই দুই প্রক্রিয়ায় বেশির ভাগ লোকের কানে স্বাভাবিকভাবে জমতে থাকা খৈল স্বাভাবিকভাবেই বেরিয়ে যায়।
কিন্তু যারা নিয়মিত বা প্রায়ই কান পরিষ্কার করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে জমা থাকা খৈল বা ওয়াক্স বের হতে পারে না। বরং কান পরিষ্কার করার প্রক্রিয়ায় তার কিছুটা বের হলেও বাকিটা ধাক্কা খেয়ে কানের সরুপথের আরো গভীরে গিয়ে আটকা পড়ে। এভাবে কান পরিষ্কার করায় কানের সরুপথের বাইরের দিকে জমে থাকা খৈলকে প্রতিদিন একটুএকটু করে আরো গভীরে চালান করা হয়। এ সময় দেখা যায় কানের গভীরে খৈলের পাহাড় জমেছে এবং তা ভেতরে আটকে গেছে।
এ অবস্থায় কানে তীব্র ব্যথাসহ আরো কিছু উপসর্গ নিয়ে রোগী নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। তবে কিছু কিছু সমস্যা রয়েছে যে ক্ষেত্রে কানে বেশি বেশি খৈল জমে এবং তা কর্ণকুহরে আটকে যায়। বিশেষ করে যাদের ত্বক খুব শুকনো প্রকৃতির, যাদের মাথায় অতিরিক্ত খুশকি কিংবা যারা সোরিয়াসিস নামক ত্বকের অসুখে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে কানে অতিরিক্ত খৈল কমার কারণে তা কানের সরুপথের মধ্যে আটকে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হলে একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে ব্যবস্থা নিলেই চলে। এগুলো হলো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।
এ পরিস্থিতিতেও জটিলতা এড়ানোর জন্য নিজে নিজে কান পরিষ্কার না করে নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞের কাছ থেকেই তা করানো উচিত। সুতরাং সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্যক্তির যদি কান পরিষ্কার করারই দরকার না পড়ে, তা হলে শুধু শুধু কান পরিষ্কারের এই আয়োজন কেন? এ কথা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য যে সুস্থ ও স্বাভাবিক কোনো ব্যক্তিরই কান পরিষ্কার করার দরকার নেই। বরং অযথা কান পরিষ্কার করতে গিয়ে কানে ইনজুরি বা নানা ধরনের ইনফেকশনসহ ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে থাকে; যা আপনাকে বেশ কষ্ট দেবে। বিনা কারণে সুস্থ ও স্বাভাবিক কানকে পরিষ্কার করতে গিয়ে রোগকে আমন্ত্রণ জানানোর কোনো দরকার আছে কি?
===============
ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog