মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে দুনিয়ায় সুখময় জীবন-যাপনের জন্যে দাম্পত্য জীবন দান করে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ”পুরুষগণ নারীগণের উপর কর্তৃত্ব করার অধিকারী।” মহান আল্লাহ এ নির্দেশ দ্বারা যেমনি স্ত্রীকে স্বামীর বাধ্যগত করেছেন, তেমনি সংসারের কর্তা হিসেবে স্বামীর উপর স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তিনি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর প্রেম-প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়ে পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ স্বামী-স্ত্রীর মর্যাদা সুরক্ষায় পবিত্র কোরআনে স্বামীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ”স্ত্রীগণের নিকট হতে তোমাদের যেমনি উত্তম ব্যবহার পাবার অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের নিকট হতেও স্ত্রীগণ অনুরূপ উত্তম ব্যবহার পাবার অধিকারী।”
স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য ও দায়িত্ব প্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেন, ”আমি যদি আল্লাহতায়ালা ব্যতীত অন্য কাউকেও সিজদা করার হুকুম দিতাম, তবে স্ত্রীগণকে অবশ্যই হুকুম দিতাম, তারা যেনো স্বীয় স্বামীকে সিজদা করে।” অপর হাদীসে মহানবী (সঃ) বলেন, ”তোমরা স্ত্রীগণের সাথে উত্তম ব্যবহার করো এবং তাদের যে সব ব্যবহারে মনে কষ্ট হয়, তাদের প্রতি স্নেহপরবশ হয়ে উহা সহ্য করো। যেহেতু তাদের জ্ঞান স্বভাবতঃই কম।” মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামে মানুষের সুখময় ও প্রেমময় জীবন-যাপনের এতো সুন্দর বিধান থাকা সত্ত্বেও সামাজিক শান্তি আজ চরমভাবে বিনষ্ট। আমাদের সমাজ জীবনের সর্বত্র আজ ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটায় সংক্রামক ব্যাধির মতো প্রতিনিয়ত অপ্রত্যাশিতভাবে কারণে-অকারণে ঘটে চলেছে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী কিংবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামী নির্যাতন। এহেন বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকারে অনেক সময় অহেতুক প্রাণহানিও ঘটে থাকে। গত ১৩ অক্টোবর এ মর্মে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের ওয়্যারলেস এলাকার মৃধা বাড়ি রোডের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে আবু সায়েদ চোকদার (৫৫)-এর সাথে তরপুরচণ্ডী সেনের দিঘির পাড় এলাকার সুলতান পাটওয়ারীর কন্যা মাহফুজা বেগম (৩৫)-এর বিয়ে হয় প্রায় ২০ বছর আগে। বিয়ের পর থেকে স্বামী প্রায় ১৭ বছর বিদেশে চাকরি করেন। সে সুবাদে স্ত্রী মাহফুজা বেগম পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। স্বামী আবু সায়েদ চোকদার দেশে ফেরার পর থেকেই স্ত্রীর অপকর্মের বিভিন্ন চিত্র জানতে পারেন। এ নিয়ে উভয়ের মাঝে ঝগড়াও হতো। শেষ পর্যন্ত গত ১২ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টায় স্ত্রীর আঘাতেই খুন হলেন আবু সায়েদ চোকদার (৫৫)। তার দু ছেলে সাগর (১৮) ও সৈকত (১০)। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মোঃ আবদুল কাইউম এবং মৃত আবু সায়েদ চোকদারের স্ত্রীকে আটক করেন। পুলিশ ও সাংবাদিকগণের কাছে খুনের ঘটনা মাহফুজা স্বীকার করেছে বলে সংবাদে উল্লেখ। কী নৃশংস হত্যাকাণ্ড! পরকীয়া কী নিষ্ঠুর অভিশাপ!
আমাদের প্রত্যাশা, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে। পাশাপাশি সামাজিক জীবনের সর্বস্তরে ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।