গাজী মহিনউদ্দিন/ রাসেল/ আকতার হোসেনঃ
মহান মুক্তিযুদ্ধ চালাকালীন সময়ে চাঁদপুর জেলাকে হানাদার মুক্ত করতে যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রণ করেছিলেন সেসব ৯জন বীর শহীদদের সমাধীস্থল হলো জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত মফস্বল গ্রাম নাসিরকোর্ট। ১৯৭১ সালে জেলার বিভিন্ন স্থানে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের (যতটুকু সম্ভব ছিল) একত্রিত করে ওই স্থানে দাফন করা হয়েছিল। বৃহত্তর কুমিল্ল¬া জেলায় এক সাথে এত মুক্তিযুদ্ধে শহীদ যুদ্ধাদের সমাধীস্থল আর দ্বিতীয়টি নেই। মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে আলাপকালে জানাযায়, স্বধীনতা পূর্ব সময়ে নাসিরকোর্ট অঞ্চল ছিল শিক্ষা-দীক্ষা, সাংস্কৃতিতে এগিয়ে এ ছাড়া ওই অঞ্চলটি ছিল মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য অনুকুলে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূথানে বাংলাদেশের কোথাও গোলা-গুলিরমত ঘটনা না ঘটলেও রাজারগাঁও বাজার গোলা-গুলির ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় ২জন শহীদও হয়েছিলেন বলে জানান, বীরমুক্তিযুদ্ধা মাহবুবুল আলম চুন্নু। বিভিন্ন ঐতিহাসিক দিক চিন্তা করেই ১৯৭১ সালে নাসিরকোর্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের সাব-ক্যাম্প করা হয়। সে হিসেবে জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের এনে (যতটুকু সম্ভব) নাসিরকোর্টে শেষ সমাধী করা হয়।
নাসিরকোর্ট মুক্তিযুদ্ধা সমাধিস্থলে একই সারিতে ৯জন বীর শহীদদের সমাধীস্থল রয়েছে। এসব সম্মানিত বীর শহীদরা হলেন,
১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রঘুনাথপুর বাজারে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ শাহরাস্তি উপজেলার রাজাপুরা গ্রামের আ. গফুরের ছেলে এম. এ মতিন।
১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর লাউকোরা গ্রামে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের সমেশপুর গ্রামের সালামত উল্যার ছেলে এস এম জহিরুল হক, একই স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের সৈয়দ আলী রাজ্জাকের ছেলে ইলিয়াছ হুসাইন। ওই তারিখে কচুয়া উপজেলার গুলবাহার গ্রামে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সেন্দ্রা গ্রামের মো.ফজলুল হক মাষ্টারের ছেলে এমদাদুল হক।
১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর বাবুরহাট এতিমখানা সংলগ্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ১নং রাজারগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব রাজারগাঁও গ্রামের ছেরাজল হক বেপারীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মুকন্দসার গ্রামে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ২নং রাজারগাঁও ইউনিয়ন বর্তমানে বাকিলা ইউনিয়নের রাধাসার গ্রামের আ. মজিদ মিয়ার ছেলে মো. জয়নাল আবেদীন, একই যুদ্ধে আরো শহীদ হন ২নং রাজারগাঁও ইউনিয়ন বর্তমানে বাকিলা ইউনিয়নের লোধপাড়া গ্রামের সেকান্দর আলীর ছেলে মো. জয়নাল আবেদীন, ২নং রাজারগাঁও ইউনিয়ন বর্তমানে বাকিলা ইউনিয়নের কীর্ত্তণখোলা গ্রামের মনোহর আলীর ছেলে আ. রশিদ, ৫নং সদর ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামের আ. কাদেরের ছেলে আবু তাহের।
নাসিরকোর্টের ওই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সমাধীস্থল হওয়ায় সেখানে ১৯৭৩ সালে গড়ে উঠেছে নাসিরকোর্ট শহীদ স্মৃতি কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪২ বছরেও ওই কলেজের কোন উন্নয়ণের ছোঁয়া লাগেনি। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার দ্বিতীয় বারেরমত ক্ষমতায় আসার পর এ ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কলেজে ২টি চারতলা ভীত বিশিষ্ট অত্যাধুনিক দ্বিতল ভবন এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন দেয়া হয়েছে। যার নির্মাণ কাজে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। সহসাই ভবন তিনটি’র আনুষ্ঠানিক উদ্ভোদন করা হবে। তবেই বঞ্চিতই রয়ে গেল সমাধীস্থল। অনেকেই আশার বাণী শুনালেও সেখানে মুক্তিযুদ্ধদের সম্মানে গড়ে উঠেনি স্মৃতি সৌধ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। হাজীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযুদ্ধাদের দাবী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সম্মানে সেখানে কলেজের মাঠেই গড়ে উঠুক স্মৃতি সৌধ এবং মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগারটিকে গড়ে তোলা হউক জাতীয় মানের পাঠাগার হিসেবে যাতে এ যুগের ছেলে মেয়েরা এসব পাঠাগারের বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। বীর মুক্তিযুদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যাংকার মাহবুব আলম চুন্নু জানান, নাসিরকোর্ট শহীদ সমাধীস্থলটি শুধু অবহেলিতই নয় বঞ্চিতও বটে। ১৯৭১ স্বাধীনতার যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলো, অনেকই অনেক কিছু পেয়েছে শুধু নাসিরকোর্ট শহীদ সমাধীস্থলটি অবহেলিতই রয়েগেল। বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এর ঐকান্তিক প্রচেস্টায় নাসিরকোর্ট অঞ্চলকে দ্বাদশ ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। ওই ইউনিয়ণকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিয়ন হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছে। যার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলী রেজা আশ্রাফী।