প্রতিনিধি ===
ক্লাস চলাকালীন ক্ষুদে শিক্ষার্থী মুনি্নকে ডেকে নিয়ে গেলো অজ্ঞাত এক নারী। সেই থেকে গত ৩ দিনে খোঁজ মেলেনি মুনি্নর। বিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীর এ শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার পর পরই মুনি্নর সহপাঠী ও ঐ এলাকার সকল অভিভাবকের মাঝে নেমে এসেছে আতঙ্ক। কে জানে কার আদরের ধন কোন্ সময় নিখোঁজ হয়ে যায়। এ ঘটনায় মুনি্নর বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। এদিকে মুনি্নর চিনত্দায় তার বাবা-মা অবিরামভাবেই কান্নাকাটি করে চলছে। আর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের ক্লাস থেকে ডেকে এনে মুনি্নকে নিয়ে চম্পট দেয় অজ্ঞাত এক নারী। মুনি্ন হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের ছয়ছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী। তার রোল ১২। বিদ্যালয়ে তার নাম জেসমিন আক্তার মুনি্ন (৬)।
জানা যায়, মুনি্নর বাবার বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলার ১নং রাজারগাঁও ইউনিয়নের কাপাইকাপ এলাকার রবিদাস পাড়ায়। তার বাবা আনোয়ার হোসেন পেশায় রিঙ্া চালক। অভাবের কথা চিনত্দা করে মেয়েকে মামার বাড়ির কাছে ছয়ছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে চলিত বছর ভর্তি করানো হয়। সেই থেকে মুনি্ন মামার বাড়ি থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতো।
সরজমিনে মুনি্নর নানার বাড়ি বাকিলা ইউনিয়নের ছয়ছিলা বকাউল বাড়িতে গেলে দেখা যায় মুনি্নর মা ফাতেমা, নানী, মামা মাইনুদ্দিনসহ সকলেই কান্নাকাটি করছে। সাংবাদিক বাড়িতে গেছে খবর পেয়ে ফাতেমা বেগম চিৎকার করে অন্যদের উদ্দেশ্যে বলে উঠেন, কে এসেছে আমি জানি না। আমার মেয়েকে তোরা এনে দে। এই বলেই আবারো সেই অঝোর ধারায় কান্না। অনেক অনুরোধের পর কান্না থামলে ফাতেমা জানান, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার সকালে আমি বাবার বাড়িতে ছিলাম। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মেয়েকে নিজে ভাত খাইয়ে ব্যাগে বই ভরে বিদ্যালয়ের পথে অনেক দূর এগিয়ে দিয়ে আসি ও এর পরেই বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি চলে যাই।
দুপুরে ভাইয়ে ফোন করলে জানতে পারি আমার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কথা বলেই মুনি্নর স্কুলের ব্যাগ ও বই আঁকড়ে ধরে আবারো কাঁদতে শুরু করে দেন ফাতেমা।
মুনি্নর মামা মাইনুদ্দিন জানান, বিদ্যালয় থেকে স্যারেরা এক ছাত্রকে দিয়ে খবর পাঠায় মুনি্ন বাড়িতে এসেছে কিনা। এ কথা শুনে আমরা বাড়ি ও সকল আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ খবর নেই। পরে বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাজীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করি।
এ বিষয়ে মুনি্নর বিদ্যালয়ের প্রধান শিৰক আবু বক্কর জানান, ঐ দিন মাসিক সমন্বয় সভায় যোগ দিতে উপজেলা শিৰা অফিসে যাই। সেখান থেকে ফোনের মাধ্যমে খবর পাই।
ঐ দিন মুনি্নর প্রথম বাংলা ক্লাস নিয়েছে শিৰিকা জান্নাতুল ফেরদাউস। তিনি জানান, ১০টা ১৫মিনিটে ক্লাস শেষ করে আমি অফিসে চলে আসি। এর পরেই নাকি ঐ নারী বিদ্যালয় থেকে মুনি্নকে ডেকে নিয়ে যায়।
মুনি্নর সহপাঠী ৰুদে শিৰার্থী মুক্তা (রোল ২৯) ও মুক্তা (রোল-১) জানায়, মুনি্ন আমাদের পাশে বসে প্রথম ঘণ্টা করেছে। ২য় ঘণ্টার আগে মাঠ থেকে থ্রি-পিচ পরা একজন নারী মুনি্নকে ডেকে নেয়। নিয়ে জিজ্ঞেস করে, তোমার নানা বাড়ি কতটুকু দূরে। মুনি্ন যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিতে গেলে ঐ নারী বলে, তুমি আমার সাথে চলো। তখন মুনি্ন আমাদেরকে বলে, তোরা আমার বই দেখে রাখিস্। আমি এখনই চলে আসবো।
ঐ দিন মুনি্নর ২য় ঘণ্টার ক্লাস নিয়েছে ঐ বিদ্যালয়ের সহকারী শিৰক আঃ কাদের। মুঠোফোনে তিনি জানান, আমি একটু দেরিতে ক্লাসে যাই। হাতের লেখা দেয়ার পরে লৰ্য করি মুনি্ন ক্লাসে নেই। অন্যদেরকে বিষয়টি জিজ্ঞাস করলে তারা জানায়, স্যার মুনি্নর এক আত্মীয় মুখোশ পরে মুনি্নকে নিয়ে গেছে। মুখোশের কথা শুনেই আমার কেমন জানি সন্দেহ হয়। সাথে সাথে অন্য শিৰকদের ডেকে তাদের বিষয়টি জানিয়ে মুনি্নর নানার বাড়িতে এক শিৰার্থীকে পাঠাই। এ শিৰার্থী ফিরে এসে বলে, সে বাড়িতে যায়নি। তারপরই আমরা অন্যদেরকে ঘটনাটি জানাই।
মুনি্নর মামা মাইনুদ্দিন অনুরোধ করে বলেন, এ সংবাদটি পড়ে কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি মুনি্নর সন্ধান পেলে ০১৮৫৫-৬৩০০৫৬ ও ০১৮৩৪-১৯১২৯৭ নাম্বারে জানালে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
ঐ দিন ঐ অজ্ঞাত নারী মুন্নীর খোঁজে ছয়ছিলা সপ্রাবিতে যাওয়ার আগে পার্শ্ববর্তী রাধাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। গিয়ে মুন্নীর খোঁজ করে প্রথম শ্রেণীতে। এ বিষয়টি নজরে আসে শিৰক শাহজাহানের কাছে। তখন ঐ শিৰক ঐ নারীর কাছে গেলে মুন্নীকে খোঁজ করছে বলে জানায়।
এ বিষয়ে রাধাসার সপ্রাবির শিৰক শাহজাহান জানান, ঐ নারী বিদ্যালয়ে পায়চারী করতে দেখে এগিয়ে গিয়ে জানতে চাই কী চান? তখন ঐ নারী বলে, মুন্নী আমার ভাতিজি হয়। তার মামার বাড়ি মামার নাম সবকিছু ঠিকমতো বলে। কিন্তু মুন্নী এ স্কুলে পড়ে না জানতে পেরে ঐ নারী বিদ্যালয় ত্যাগ করে। আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ঐ নারী দেখতে বিবাহিত মনে হয়েছে। দেহের গড়ন মোটা তবে পরনে থ্রি-পিচ ছিলো।