মিজান লিটন
কয়লা সঙ্কটে চরম বিপাকে পড়েছে চাঁদপুরের শতাধিক ইটভাটা। কয়লা না থাকায় সব কাজ শেষ করার পরও এসব ইটভাটায় গত একমাস ধরে ইট পোড়ানো যাচ্ছে না। ভাটার কার্যক্রম তদারকির পরিবর্তে মালিকরা এখন বিভিন্ন স্থানে ঘুরছেন কয়লার সন্ধানে। কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না কয়লা। কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তাও জানে না ইটভাটা মালিকরা। এতে করে ইটভাটা বন্ধের আশঙ্কা করছেন লোকসানে থাকা মালিকরা।
ইটভাটা মালিকরা জানান, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, হাইমচর উপজেলায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ভাটায় বছরে ৮০০ থেকে ৯০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। দেশি কয়লা না থাকায় ভারতীয় কয়লা দিয়েই এর চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু এ বছর ভারত থেকে কয়লা না আসায় এ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার মেসার্স সুকদি ব্রিকস ফিল্ড স্বত্বাধিকারী মো. মিজানুর রহমান চাঁদপুর নিউজকে বলেন, ‘ইট কেটে বসে আছি, কিন্তু কয়লার খবর নেই। ইট পোড়ানো বন্ধ থাকায় বেকার বসে আছে ব্রিকফিল্ডের ৫০০-৬০০ লোক। সঠিক সময়ে কয়লা পাওয়া গেলে আরও এক থেকে দেড় মাস আগেই ইট পোড়ানো যেতো।’
মিজানুর বলেন, ‘ইটভাটার ২টি জুটে ২৮ লাখ টাকা অ্যাডভান্স দিয়েছি। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা এসব শ্রমিকদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে তাদের পরিবার পরিজনদের নিয়মিত অর্থ দিতে হয়। কিন্তু কয়লার কৃত্রিম সঙ্কটে এসব শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে না। ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে মালিকদের।’
তিনি বলেন, গত বছর তারা ভারতীয় কয়লা কিনেছেন টন প্রতি ৯ হাজার টাকায়। দেশি কয়লার দাম ছিল এর চেয়েও অনেক কম। আর এবার কৃত্রিম সঙ্কটের সুযোগে ব্যবসায়ীরা এক টন দেশি কয়লার দাম হাঁকছেন ১৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতো দাম দিয়ে কয়লা ক্রয় করে ইটভাটা চালানো অনেকটা অসম্ভব। আর দিনরাত ভারতীয় কয়লার সন্ধান করলেও বাড়তি টাকার বিনিময়েও তা মিলছে না বলে জানান তিনি।
চাঁদপুরের ইটভাটা মালিকরা জানান, গত মৌসুমে তৈরি হওয়া ইট বিক্রি না হওয়ায় কয়েক মাস আগে ৮-১০টি ইটভাটা গুটিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেওয়ায় ইটভাটা বন্ধ করে দেন তারা।
চাঁদপুর সদর উপজেলার এসএপি ব্রিকফিল্ডের পরিচালক আনিছুর রহমান বলেন, ‘গত মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে ইট তৈরি হলেও ক্রেতার অভাবে লোকসান হয়েছে। আর এ বছর কয়লা সঙ্কট দেখা দেওয়ায় ইটভাটাগুলো চালু করা যাচ্ছে না। আইন অনুযায়ী গাছ পোড়ানো নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন কয়লার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। সাধারণত সিলেটের সুনামগঞ্জ, তামাবিল, তাহেরপুরের কলাকান্দা থেকে ভারতীয় কয়লা কিনে চাঁদপুরে আনা যায়। কিন্তু ভারত থেকে কয়লা না আসার অজুহাতে সেখান এখন কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভরা মৌসুমেও ইটভাটা চালানো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
তিনি জানান, নভেম্বর থেকেই একের পর এক তারিখ দিয়ে কয়লা পাওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে স্থানীয় ইটভাটা মালিক সমিতি।
ফরিদগঞ্জের মেসার্স মুন্সিরহাট ব্রিকফিল্ডের পরিচালক আবদুল হান্নান মিয়া বলেন, ‘জরুরিভিত্তিতে ভারত থেকে সরকারিভাবে কয়লা আমদানি না হলে অধিকাংশ ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকি ইটের দামও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সর্বোপরি এ অবস্থা চলতে থাকলে শত কোটি টাকা লোকসানের কবলে পড়বে এখানকার ইটভাটাগুলো। বিপাকে পড়বে হাজার হাজার শ্রমিক।