‘খুন্তির ছ্যাঁকা লাগলে গা’টা যখন যন্ত্রণায় ছ্যাৎ করে ওঠে তখন খালাম্মা খিলখিল করে হাসে। আমি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলে, কান্না বন্ধ করতে বলে আবার দেন খুন্তির ছ্যাঁকা।’ এ ভাবেই নিজের উপর চলা অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলো ফেনীর উকিলপাড়া এলাকার শিশু গৃহপরিচারিকা শারমিন (৯)।
‘তোর কান্না বন্ধ কর, আমার মেয়ের ঘুম ভেঙে যাবে-একথা বলে দেন বিশেষ অঙ্গে গুঁতো’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শারমিন।
রোববার দুপুরে ফেনী সদর হাসপাতালে গিয়ে শিশু শারমিনের সঙ্গে কথা বললে সাংবাদিকদের কাছে সে তুলে ধরে তার নির্যাতনের ঘটনা। উকিলপাড়ার বাসিন্দা ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম রানার স্ত্রী প্রিয়া আকতার শিশুটির ওপর এভাবেই নিত্যদিন চালাতেন নির্যাতন।
শিশু পরিচারিকাকে নির্যাতনের অভিযোগে এর আগে শনিবার রাত ৯টার দিকে নিজ বাসা থেকে প্রিয়া আকতারকে আটক করে পুলিশ। এরপর রোববার শারমিনের মা জেসমিন আক্তার ফেনী মডেল থানায় শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
শারমিনের মা জানান, ১১ মাস আগে নজরুল ইসলাম রানার বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ নেয় শারমিন। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় ছোটখাটো অপরাধেই তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতো নজরুলের স্ত্রী প্রিয়া আক্তার। এক পর্যায়ে শনিবার রাতে পাড়ার একটি দোকানে গেলে তার শরীরে বিভিন্ন ক্ষত চিহ্ন দেখে শারমিনের কাছে কারণ জানতে চায় স্থানীয় লোকজন। সব শুনে প্রতিবেশিরা বাড়িটি ঘেরাও করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে প্রিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে চিকিৎসার জন্য শারমিনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।
ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক ও সেকেন্ড অফিসার মো. জিয়াউল হক জানান, শিশু নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ গৃহকত্রীকে আটক করেছে। রোববার শিশুর মা জেসমিন আক্তার থানায় মামলা করেছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর ফোকাল পারসন সাংবাদিক নাজমুল হক শামীম জানান, মধ্যযুগের বর্বরোচিত ঘটনার উদাহরণ এটি। এটি কোনো সভ্য মানুষের আচরণ হতে পারে না। সমাজসেবা থেকে নির্যাতিত শিশুটির জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ঘটনার জন্য দোষী গৃহকত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. গোলাম মাওলা জানান, খুন্তির ছ্যাঁকায় নির্যাতিতা শিশু শারমিনের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা পড়ে গেছে। শিশুটির উন্নত চিকিৎসা চলছে।