‘মাছে ভরবো দেশ, গড়বো সোনার বাংলাদেশ’ এই সস্নোগান সামনে রেখে শনিবার গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সাথে মৎস্য সেক্টরের অবদান বিষয়ে মতবিনিময় সভা করে চাঁদপুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
সকাল ১১টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলেদের পুনর্বাসন, জাটকা আহরণ, দেশীয় প্রজাতির মাছ রৰা, পুকুরে ইলিশ চাষের সফলতা, জেলেদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়ম, তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ, ভিজিএফ কার্ডে সহযোগিতা প্রাপ্য জেলেদের প্রকৃত ঠিকানা ও সংখ্যা, খাঁচায় মাছ চাষের বর্তমান সফলতাসহ বিভিন্ন প্রশ্নবাণে উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ জর্জরিত করে তোলেন মৎস্য কর্মকর্তাদের।
চাঁদপুর দর্পণের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ইকরাম চৌধুরীর সভাপ্রধানে এবং প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরীর পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, আহসানুজ্জামান মন্টু, চাঁদপুর দিগন্তের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অ্যাডঃ মোঃ শাহজাহান, চাঁদপুর প্রতিদিনের প্রধান সম্পাদক জিএম শাহীনসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা সাইফুল্লাহ ও পবিত্র গীতা পাঠ করেন খোকন কর্মকার। মতবিনিময় সভায় লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন দত্ত। সেই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে মৎস্য সম্পদ আহরণের জাতীয় চিত্র। তবে সেখানে স্থান পায়নি চাঁদপুরের মৎস্য সম্পদের কোনো বিষয়। ফুটে উঠেনি জেলার জেলে পরিবারদের অসহায়ত্বের কথা, মা ইলিশ রক্ষাসহ জাটকা নিধনের করুণ চিত্র, বর্তমান সময়ে ইলিশের অবস্থান বা জাতীয় সম্পদ রক্ষায় কী করণীয় সেই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা। অবশ্য প্রেসক্লাব সভাপতি জেলা মৎস্য কর্মকর্তার লিখিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে জেলার মৎস্য সম্পদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন দত্ত জানান, বর্তমান চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন আড়াই মেট্রিক টনের মত কম রয়েছে। জেলেদের ঋণ প্রদানে কোনো ব্যাংকই আগ্রহী নয় বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ কর্মসূচির আওতায় কতজন জেলে পরিবার উপকৃত হয়েছে, কত মেট্রিক টন জাটকা নিধনসহ আটক করা হয়েছে এমন অনেক প্রশ্নের জবাবই তিনি দিতে পারেন নি।
বহুল আলোচিত পুকুরের ইলিশ চাষ সম্বন্ধে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, ১৯৯০ সালে জাতীয় সংসদে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের মৎস্য বিজ্ঞানীরা কি পারেন না আমাদের দেশের পুকুরে ইলিশ উৎপাদন করতে? সে আলোকে আমরা উৎসাহী হয়েছিলাম পুকুরে ইলিশ চাষের ব্যাপারে গবেষণা করতে। কিন্তু বর্তমান সময় আমরা বুঝতে পারলাম, বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে ইলিশ চাষ করা সম্ভব নয়। তবে পুকুরে ইলিশ মাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব, কেবল সৌখিনভাবে পুকুরে ইলিশ চাষ করা যায়। তবে তা খুব ব্যয় বহুল।
তিনি বলেন, ইলিশ গভীর জলের মাছ। ইলিশ চাষে পানির স্রোত, গভীরতা ও লবণাক্ততার প্রয়োজন রয়েছে। দেখা যায়, পুকুরে ইলিশ মাছের স্বাস্থ্যসূচক থাকে ২.৮, আর নদীতে থাকে ৩.১। যা প্রথম অবস্থায় ভালো থাকলেও যখন সে পরিপূর্ণ ইলিশে রূপ নেয় তখন পুকুরে চাষকৃত ইলিশের স্বাস্থ্যসূচক অনেক নিচে নেমে আসে। যার পরিণতিতে ইলিশকে বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এ যাবৎকাল ইলিশ চাষে গবেষণা বাবদ প্রায় ২ লাখ টাকার কম খরচ হয়েছে বলেও তিনি জানান।
খাঁচায় মাছ চাষ সম্বন্ধে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল আউয়াল হোসেন জানান, চাঁদপুরে খাঁচায় মৎস্য চাষ একটি মডেল। আমরা প্রথমে পাঙ্গাস মাছ চাষে মৎস্য চাষীদের উৎসাহিত করলেও বর্তমান সময় খাঁচায় পাঙ্গাস চাষ ব্যয় বহুল হয়ে পড়েছে। যা পুকুরে চাষের চেয়ে বেশি। এখন অনেকেই পাঙ্গাসের খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই মাছ চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। তবে অনেকেই এখন তেলাপিয়া মাছ চাষে উৎসাহী হয়ে পড়েছেন। তেলাপিয়া মাছ খুবই সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। চিংড়ি চাষেও আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু চাষীদের তেমনভাবে উৎসাহিত করা যায়নি। আর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যাংক লোন না পেয়ে অনেকেই এই চিংড়ি চাষে এগিয়ে আসেন নি।