“আপনারা পুরুষরা বাইচচ্চা লাভ কি, এই মহিলারে সরাইতে পারেন না” : চাঁদপুরে ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালীন শহরের কালী বাড়ি মোড়ে পুলিশের গুলিতে নিহত চাঁদপুর সরকারি কলেজের এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্র তাজুল ইসলাম রতনের বোন সুফিয়া বেগম তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে রিক্সা যোগে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে এসে রিক্সায় বসেই হাউমাও করে কাদঁতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি চিৎকার দিয়ে শত-শত মানুষের জমায়েতকে লক্ষ্য করে বলতে থাকেন, আমার ভাইয়ের কি অপরাধ ছিল? তাকে কেন হত্যা করা হলো? “আপনারা পুরুষরা বাইচ্চা লাভ কি, এই মহিলারে (শেখ হাসিনা) সরাইতে পারেন না।” এ সময় চিৎকার করে বলতে থাকে, “রতন কে পুলিশ গুলি করল কেন? সে পুলিশের কি ক্ষতি করেছে। আমি মায়ের কাছে এ খবর কেমনে লইয়্যা যামু। আমার ভাই রতনকে ফিরিয়ে দাও। গুলি করে হত্যা করে কী দেশ শাসন হয়। পুলিশ জণগনের নিরাপত্তা বাদ দিয়ে এখন কি মানুষ হত্যা শুরু করেছে। এ কথা বলতে-বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে রিক্সা থেকে নেমে হাসপাতালে গিয়ে লাশ দেখতে না পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার গগন বিদারী চিৎকারে হাসপাতাল এলাকাসহ আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। রতনের বোন হাসপাতালে আসার পূর্বেই পুলিশ রতনের লাশ লাশের ব্যাগে ঢুকিয়ে ভ্যান যোগে মর্গে পাঠিয়ে দেয় ময়না তদন্তের জন্য। ভাইয়ের লাশ দেখার জন্য হাসপাতাল থেকে চলে যান শহরের স্বর্ণখোলারোডস্থ লাশ ঘরের কাছে। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বসেছিলেন লাশের অপেক্ষায়। নিহত তাজুল ইসলাম রতন সদর উপজেলার বাখরপুর গ্রামের মাওলানা আমান উল্যাহ পাটওয়ারীর ছেলে। সে চাঁদপুর সরকারি কলেজের এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্র।
‘আমার ছেলের নাস্তা খাওয়া হলনা’ : চাঁদপুরে ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালীন শহরের কালী বাড়ি মোড়ে পুলিশের গুলিতে নিহত সিয়ামের পিতা মজিবুর রহমান সুমন হাসপাতালে ছেলের লাশের পাশে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলের নাস্তা খাওয়া হলনা। তিনি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? তাকে কেন হত্যা করা হলো? তাকে ফিরিয়ে দাও? আমাকে গুলি করেন! আমি বাচঁতে চাইনা। সিয়াম তার ভাইকে মোবাইল ফোনে বলেছে, আমি নাস্তা খাইতে আইতাছি। চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মাহাবুব মোরশেদকে দেখে সিয়ামের বাবা বলেন, ওই ওসি, ওই পুলিশ তোরা সরে যা ‘আমার ছেলেকে আমি এক নজর দেইখা লই’। এ কথা বলতে-বলতে সে তার ছেলে সিয়ামের লাশের কাছে শুয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ তাকে জোড় করে উঠাতে পারেনি। সে বুকফাটা কান্নায় বলতে থাকে, আমি আমার ছেলের সাথে যাব। পরে পুলিশ তাকে জোড় করে টেনে হিচড়ে সরিয়ে দিয়ে লাশটি পুলিশের লাশের ব্যাগে ঢুকিয়ে ভ্যানে করে মর্গে পাঠিয়ে দেয় ময়না তদন্তের জন্য। নিহত মাদ্রাসা ছাত্র সিয়াম হোসেন মোস্তান আল-আমিন মডেল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। সে শহরের নিউ ট্রাক রোডস্থ মোস্তান বাড়ীর মজিবুর রহমান (সুমন) মোস্তানের ২য় ছেলে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিউ ট্রাক রোডস্থ আল-আমিন মডেল মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে তার নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন: শওকত আলী