চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
স্বামীর সাথে বাড়ি এসে ঈদ করা হলো না গৃহবধূ লাকীর। ঈদের পূর্ব দিন অর্থাৎ চাঁদরাতেই তাকে স্বামীর নৃশংসতার শিকার হয়ে জীবন দিতে হলো। হতদরিদ্র পরিবারের এতিম এই মেয়েটির এমন নৃশংস মৃত্যুর শোকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রামের লোকজন শোকাচ্ছন্ন। যৌতুকের দাবিতে হত্যাকাণ্ডের ঘাতক নেশাগ্রস্ত স্বামী নুরুজ্জামান পলাশ ওরফে পরেশের ফাঁসি দাবি করেছে এলাকাবাসী। গত ১৭ জুলাই শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকার আশুলিয়া পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় কবরস্থান রোডে এ ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ গৃহবধূ ও গার্মেন্টস কর্মী লাকী আক্তার (২০)-এর লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের পর ফরিদগঞ্জের বাবার বাড়িতে পাঠানোর পাশাপাশি ঘাতক স্বামী নুরুজ্জামান পলাশ ওরফে পরেশকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রূপসা গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীন রতনের একমাত্র কন্যা লাকী আক্তার। ছোটবেলাতেই পিতা-মাতাকে হারিয়ে একমাত্র ছোট ভাইকে নিয়ে আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বড় হয়ে উঠে। গত ২ বছর পূর্বে একই উপজেলার হাঁসা গ্রামের নূর মোহাম্মদ ওরফে নুর ইসলামের ছেলে নুরুজ্জামান পলাশ ওরফে পরেশ-এর সাথে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় লাকী। বিয়ের সময় স্বামী পরেশ কর্মসংস্থানের জন্যে বিদেশে যাওয়ার কথা বলে যৌতুক দাবি করলে এলাকাবাসী সহযোগিতা করে ১ লাখ টাকা যৌতুক দেয়। কিন্তু বখাটে স্বামী বিদেশে না গিয়ে বেকার অবস্থায় বাড়িতে বসে থাকে। কিছুদিন পর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমায়। ঢাকায় গিয়ে স্ত্রী লাকী আক্তারকে পোশাক কারখানায় চাকুরি করতে বাধ্য করে। ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় একটি টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে লাকী আক্তার পোশাক কারখানায় চাকুরি করে। আর তার বখাটে স্বামী নুরুজ্জামান পলাশ ওরফে পরেশ নেশার জগত নিয়ে ব্যস্ত থাকে। টাকার প্রয়োজন হলেই স্ত্রীকে মারধর করে যৌতুক দাবি করাই ছিলো তার প্রধান কাজ। এ নিয়ে কয়েকবার পারিবারিকভাবে সালিস হয়েছে বলে জানান তার ফুফাত ভাই আলী আকবর। তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন শুক্রবার রাতে লাকীকে পরেশ কয়েকদফা মারধর করে। এক পর্যায়ে গভীর রাতে ঘাতক স্বামী তার মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ বিছানায় রেখে ভোরে দরজায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাড়ির কেয়ারটেকার বিষয়টি দেখতে পেয়ে তার স্ত্রী কোথায় জানতে চায়। তখন তার সন্দেহ হলে আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে আটক করে দরজা খুলে দেখে তার স্ত্রীর মৃতদেহ বিছানায় পড়ে আছে। পরবর্তীতে থানা পুলিশকে খবর দিয়ে পুলিশ এসে তাকে আটক করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়।
পরদিন ঈদের দিন দুপুর ১টায় তার লাশ বাবার বাড়ি রূপসাতে এসে পেঁৗছে। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এ বিষয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, মামলা নং ০৬/১৮-০৭-১৫ খ্রিঃ। এ ঘটনায় পাষণ্ড ঘাতক স্বামীকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী।