প্রতিনিধি
মাগরিব নামাজের আজান কিংবা নামাজের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে জনগণের মাঝে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সমন্বয় সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়। মসজিদের ইমাম ও মুসল্লি এমনকি বিদ্যুতের গ্রাহকগণ মাসে ২০/২৫ দিন মাগরিবের আজান কিংবা নামাজের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কথা বললেও তা পুরোপুরি অস্বীকার করলেন চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার। এছাড়া মফস্বল এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংকে ওভারলোড কিংবা লাইনের ত্রুটি হিসেবে দেখছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন মূল উপ-কেন্দ্রটির অবস্থান মহামায়া এলাকার কুমারডুগীতে। এই উপ-কেন্দ্রকে ৬টি ফিডারে ভাগ করে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ফরিদগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় ১ ও ৪নং ফিডারে, হাজীগঞ্জে ১ ও ৬নং ফিডারে ও চাঁদপুর সদরের একাংশ ৫নং ফিডার থেকে। অপর উপজেলা মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ ও শাহ্রাস্তির কচুয়ার ৩৩ কেভি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা শহরগুলোতে লোডশেডিং কম দেয়া হলেও মফস্বল এলাকায় দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হয় এবং রাতের বেলা লোডশেডিং অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা এলাকা মহামায়া উপ-কেন্দ্রের ৬নং ফিডারের আওতায়। এই এলাকার গ্রাহক ফজলুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম হাজী বলেন, সন্ধ্যা নামলে বিদ্যুৎ যায় আর আসার খরব থাকে না । যদিও আসে বড় জোর ১ ঘণ্টা থাকার পরে আবার চলে যায়। পরে আবার আসে কয়েক ঘণ্টা পরে। এভাবে সারারাতে সর্বসাকুল্যে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই। বাকিলা বাজারের কম্পিউটার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, সন্ধ্যার সময় একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে ৪/৫ ঘণ্টায় আর আসার খবর থাকে না। আজ (মঙ্গলবার) মাগরিবের আজানের কয়েক মিনিট আগে বিদ্যুৎ চলে গেছে কখন আসে তার ঠিক নেই।
মহামায়া উপ-কেন্দ্রের ৪নং ফিডারের গ্রাহক ফরিদগঞ্জ বাজারের হোমিও চিকিৎসক ডাঃ প্রবীর চক্রবর্তী জানান, আমরা খোদ ফরিদগঞ্জ শহরে সারারাতে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই। মাঝে মধ্যে সারারাতে আর বিদ্যুৎ আসেই না। সন্ধ্যা বাতির সময় বিদ্যুৎ প্রায়দিন চলে যায়। আজও (মঙ্গলবার) মাগরিবের আজানের কয়েক মিনিট আগে বিদ্যুৎ চলে গেছে।
একই উপজেলার ১২নং চরদুঃখিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাসনাত হাই বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা সর্বসাকুল্যে ৭/৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই।
বাকিলা বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আবুল খায়ের বলেন, মাসের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ দিন মাগরিবের আজান কিংবা নামাজের সময় অথবা আল্লাহু আকবার বলার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে যায়।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৬নং উপাদী ইউনিয়নের মাস্টার বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আঃ মান্নান বলেন, মাসের ৩০ দিনের মধ্যে কমপক্ষে ২০/২২দিন মাগরিবের আজান কিংবা নামাজের সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। এ নিয়ে আমাদের নামাজের ব্যাঘাত ঘটে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী লিটন দাস জানান, সন্ধ্যা বাতির সময় হলেই বিদ্যুৎ চলে যায় আর আসার খবর থাকে না। অর্থাৎ বিদ্যুতের লোকদের কাছে গ্রামের মানুষ মানুষই না।
হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজারের করিম প্লাজার স্বত্বাধিকারী আঃ করিম বলেন, মাগরিবের আজানের সময় কিংবা নামাজে দাঁড়ালেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এরা লোডশেডিং দিলে নামাজের আগে কিংবা পরে দিতে পারে। এ কোন্ ধরনের কাজ আমরা বুঝি না।
এ সকল বিষয়ে জানতে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সদর দপ্তরের ওএমএম মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, নামাজের সময় আমরা বিদ্যুৎ নিতে যাবো কেনো? ওভারলোডের কারণে ঐ সময় লাইন ট্রিপ হতে পারে। আবার লাইনে ত্রুটি জনিত সমস্যার কারণে হতে পারে। অনেক সময় চাঁদপুরের ৩৩ কেভি থেকে কিংবা ঢাকা থেকে স্ক্যাডারের মাধ্যমে লাইন কেটে দিলে আমাদের কিছুই করার থাকে না।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেলারেল ম্যানেজার মোঃ ইউসুফ গ্রাহকদের অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেন, কখনো আজান কিংবা নামাজের সময় বিদ্যুৎ যায় না। এটি একটি বিশেষ মহলের প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই না। দু’ একটি স্থানে বিদ্যুৎ গেলেও এটি নেহায়েত লাইনের ত্রুটি জনিত কারণে হতে পারে। আবার গ্রাহক যে পরিমাণ লোড নেয়ার কথা তার থেকে বেশি লোড নিলে এই সমস্যটা বেশি হয়।
উল্লেখ্য, গ্রামাঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংকে ওভারলোড কিংবা লাইনের ত্রুটি হিসেবে দেখছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মফস্বল এলাকায় সন্ধ্যা থেকে সারারাত লোডশেডিং দেয়া হলেও বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে কোথাও কোনো লোডশেডিং নেই। আবার দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে মফস্বল এলাকায় মাগরিবের আজান কিংবা নামাজ চলাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সাধারণ জনগণের কাছে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।