রিফাত কান্তি সেন:-
গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের পালকির প্রচলন উঠে গেছে সমাজ থেকে।
পালকির কথা শুনলে ই নতুন প্রজন্মের ধারকরা হা করে তাকিয়ে থাকেন!
[পালকি চলে, পালকি চলে গগন তলে আগুন জ্বলে,স্তব্দ গায়ে,আদুল গায়ে যাচ্ছে তারা রৌদ্র সাড়া।]
কিংবা,
[মনে কর জেনো বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে,তুমি যাচ্ছ পালকি তে মা চড়ে।]
বইয়ের পাতায় পালকির কথা আজো উল্ল্যেখ থাকলে ও বাস্তবিক সমাজে দেখা মেলেনা পালকির!
পালকি দেখতে এখন যেতে হবে জাদুঘরে।
সভ্যতার ক্রমবিকাশ,যান্ত্রিক যুগ,বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় হারিয়ে গেছে বাংঙ্গালীর ঐতিহ্যের পালকির প্রচলন।
এক সময় এই পালকিতে চড়ে ই নববধু আসতো স্বামীর বাড়িতে।
এছাড়া কোথাও বেড়াতে গেলে ও পালকি ই ছিলো তাদের একমাত্র বাহন!
আজ আধুনিকতা আর প্রযুক্তির ছোয়ায় মানুষ দ্রুতগতির দিকে ছুটে চলেছে।
ভূলতে বসেছে সংস্কৃতির নিদর্শন গুলো।
এইতো আজ থেকে কয়েকটা বছর আগে ও যখন মানুষের যোগাযোগের তেমন কোন মাধ্যম ছিলো না তখন একমাত্র যোগাযোগ ব্যাবস্থা ছিলো পালকি।
ততকালের জমিদারদের প্রত্যেকের ই পালকি ছিলো,যদিও সাধারন মানুষের ছিলো না তবে পালকি ভাড়া দিতো একটা সম্প্রদায়।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্যে ধারক বা বাহন ছিলো এই পালকি।
গ্রাম বাংলার প্রকৃতির সাথে ই জেনো মিশে গেছে পালকি।
গ্রামের মেঠো পথ ধরে বেয়ারারা গানের সুরে পালকি বেয়ে চলেছেন,চার বেহারার পালকি চড়ে, যায়রে কন্যা স্বামীর ঘরে।
পালকির ভিতর থেকে নববধু উঁকি মেরে দেখছে, এ জেনো এক অপরুপ দৃশ্য।
কান্না ভেজা নয়ন তবু জেনো নতুনত্তের এক স্পন্দন।
এক সময় এই পালকি ছাড়া বিয়ের কথা ভাবা ই যেতো না,গরীব,ধনি কিংবা মধ্যবিত্ত সকলের ই একটা ই বাহন পালকি।
ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্র নাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভূপেন হাজারিকার মাদল মাদক তানে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না- “পালকি চলে, পালকি চলে, আদুল গায়ে যাচ্ছে কারা — যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে”। দিনদিন যান্ত্রিক সভ্যতার উৎকর্ষে বিলুপ্ত প্রায় এ পালকি এখন নানা জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে।
নতুন প্রজন্ম তেমন একটা জানে ও না পালকির ইতিহাস।
বাংঙ্গালীর হাজার বছরের ইতিহাস ভূলতে বসেছে তরুন প্রজন্ম।
আজ যখন বিদেশীরা তাদের ঐতিহ্যকে আমাদের দেশে রুপান্তর করছে ঠিক তখন আমরা আমাদের সংস্কৃতি কে পর্দার অন্তরালে নিমর্জিত করছি।
হারিয়ে যাওয়া এই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনা আমার আপনার সকলের ই কাম্য।
কেনো ভূলে গেলে চলবে না,প্রযুক্তি যতই অগ্রগতি হোক না কেন, ইতিহাস সাক্ষী দেবে অতীতকে ভূলেনি বাঙ্গালী!