চাঁদপুর নিউজ রির্পোট
উৎসব মানেই আনন্দ। উৎসব মানেই প্রিয়জনকে কিছু দেয়া। আর এ দেয়া-নেয়ার মাঝেই সেতু বন্ধনের দায়িত্বে রয়েছে ব্যবসায়ীবৃন্দ। উৎসবকে কেন্দ্র করে তরুণ-তরুণী, নারী পুরুষ থেকে শুরু করে সর্ব শ্রেণীর মানুষের মাঝেই দেখা দেয় বাড়তি উৎসাহের আমেজ। জমে উঠে সকল সামগ্রীর কেনা-বেচা। কিন্তু এবার এ চিত্র একটু ভিন্নতর। আর ক�দিন বাদেই অনুষ্ঠিত হবে দু সম্প্রদায় হিন্দু আর মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা আর শারদীয় দুর্গোৎসব। ইতিমধ্যে দুর্গোৎসবের আমেজ বইতে শুরু করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে। শহরের বিভিন্ন স্থানে চোখ বুলালেই চোখে পড়ে পূজা উদযাপনবে পূজা মণ্ডপের সুউচ্চ তোরণ নির্মাণের প্রস্তুতি। পূজা প্যান্ডেলে ব্যস্ত রয়েছে মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা নির্মাণে। উচ্ছ্বাসের আবেগে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছে হিন্দু পরিবারগুলো তাদের প্রিয় দেবী জগৎ জননী দুর্গাকে বরণ করার জন্য। পাশাপাশি সমান উৎসাহে অপেক্ষা করছে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধনী-দরিদ্র সকল বয়সের মানুষ। আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আযহা। এ দু উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা অনেকেই আশান্বিত হয়ে উঠেছিলেন অন্যান্য বছরের চেয়ে একটু বেশি বেচা বিক্রি করতে। কিন্তু তাদের সে আশা আকাক্সক্ষার এখনো তেমন প্রতিফলন না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা।
মঙ্গলবার চাঁদপুর শহরের নিউ মার্কেটের নিউ মামণি, অর্পিতা বস্ত্রালয়, ন্যাশনাল ক্লথ, আশা ক্লথ, হকার্স মার্কেটের সোহান বস্ত্র বিতান, বেনারসী চয়েজ, ফিজা ফ্যাশন, আমিন প্লাজার অঙ্গনা ক্লথ, মাস্টার ক্লথ, হাকিম প্লাজার নবরূপা ফ্যাশন, এ ওয়ান, ৭রং বুটিকস, তাজ ম্যানসনের বধূয়া বস্ত্রালয়, মিজানুর রহমান চৌধুরী সড়ক (কুমিল্লা রোড) কালী বাড়ি মোড়ের সোনালী বস্ত্রালয়, হোসেন ক্লথ, ময়ূরী ফ্রেব্রিক্স, বস্ত্রপুরী, বিভিন্ন মার্কেটের কাপড়সহ পোশাকের দোকানে তেমন আশানুরূপ ক্রেতা চোখে পড়েনি। কিন্তু দোকানদারদের নিত্য নতুন কাপড়ের সংগ্রহ রয়েছে প্রচুর। চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানিতে দোকানের লাবণ্য চোখে পড়লেও ক্রেতা সাধারণের আশানুরূপ উপস্থিতি না থাকায় ঈদ ও পূজার বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি।
তাজ ম্যানসনের বধূয়া বস্ত্রালয়ের আঃ কুদ্দুছ জানান, গত বছর ঈদুল আযহার এ দিনে বেচাকেনা অনেক ভালো ছিলো। আমাদের ধারণা ছিলো এবারো হয়তো সে রকম বেচাকেনা হবে। সে লক্ষ্যেই নতুন নতুন ডিজাইনের মালামাল তোলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হওয়ার পথে। গতবারের এ দিনে যে রকম বেচা কেনা হয়েছে তার অর্ধেকও এবার নেই। আলাপ হয় হাকিম প্লাজার নবরূপা ফ্যাশনের মোঃ হোসেন মোল্লার সাথে। তিনি জানান, বেচা-বিক্রি একদম খারাপ, যা বলার মতো নয়। ঈদ আর পূজাকে কেন্দ্র করে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক আশা নিয়ে বসে থাকি একটু ভালো বেচা-বিক্রির জন্য। কিন্তু বেচা-বিক্রি একেবারেই খারাপ। এ খারাপ হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৃষ্টি বাদল, হরতাল, মানুষের মাঝে হতাশা। দ্বিতীয়ত এক শ্রেণীর মানুষের হাতে প্রচুর পরিমাণ পয়সা হয়ে যাওয়ায় তারা ঢাকাসহ বিদেশ থেকেই কেনাকাটা করতে উৎসাহিত হন। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ এ সকল মার্কেটে কেনাকাটা করেন। এ মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে এখন পয়সা নেই।
গত কয়েক মাস আগে পবিত্র ঈদুল ফিতরে যে পাখি ড্রেস নিয়ে বাজারে ছিলো রমণীদের মাঝে আলোড়ন। সে পাখিও এখন আর উড়ছে না। অবস্থাদৃষ্টে পাখী ড্রেসের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে উঠতি বয়সী তরুণীরা। এর মূল কারণ পোশাক বিক্রেতাগণ। জানা যায়, পাখি ড্রেসের চাহিদা থাকায় কোনো রমণী দোকানে ঢুকলেই প্রায় ড্রেসই পাখি ড্রেস হয়ে যায়। গত ঈদুল ফিতরে অনেকেই পাখি ভেবে অন্য ড্রেস কিনে নিয়ে যাওয়ায় দেখা দেয় অনেকের পরিবারে সাংসারিক অশান্তি। তাই এবার অশান্তির পাখি নিয়ে তরুণীদের মাঝে নেই বাড়তি তেমন উত্তাপ। শহরের অভিজাত জুতার দোকান এসএস ফুট ওয়ার, রূপালী এম্পোরিয়াম, জনতা সু, তারুণ্য সুজ গ্যালারীসহ অধিকাংশ জুতার দোকানে ক্রেতা চোখে পড়লেও বেচাকেনা তেমন নেই বলে অনেকেই জানান। তবে তাদের ধারণা, হয়তো দু-একদিনের মধ্যে বেচা-বিক্রি শুরু হতে পারে। অন্যান্য দোকানের তুলনায় স্বর্ণের দোকানেও একই ভাব পরিলক্ষিত হয়। আজ কয়েক মাস যাবতই স্বর্ণ ব্যবসায়ে মন্দাভাব দেখা যায়। আর দিন দিনই একটু একটু করে কমছে স্বর্ণের দাম। তাই আর একটু কমতে পারে আশায় অনেক ক্রেতাই বিশেষ প্রয়োজন না হলে স্বর্ণের দোকানমুখি হচ্ছে না। তবে সেলাই মেশিনের চাহিদা রয়েছে। মঙ্গলবার রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের পপি সেলাই মেশিনের দোকানে গিয়ে দেখা যায় কিছু ব্যস্ততা। দোকানের পরিচালক আবদুল মোমেন খান জানান, আশানুরূপ বেচা-বিক্রি নেই। গতবার এ দিনে অনেক বেচা-বিক্রি ছিলো। গ্রামের অনেক নারীই এখন হাতে কলমে শিক্ষা নিয়ে সেলাই মেশিন কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তার দোকানে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা দামের সেলাই মেশিন পাওয়া যায়।
তেল-চিনি, আটা-ময়দা-সেমাইসহ মশল্লার দোকানের বেচা-বিক্রি ভালো হলেও অন্যান্য বারের চেয়ে এবার এসব মালামালের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় ক্রেতা-সাধারণের মাঝে সন্তুষ্টি থাকলেও লোকসানের মুখোমুখি হওয়ায় ব্যবসায়ীগণ কিছুটা বিব্রতবোধ করছেন।