চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
পরিচিত বিত্তশালীদের তালিকা ধরে মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় এনে মুক্তিপণ আদায় চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মঙ্গলবার ভোরে ও রাতে নগরীর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আজিজ নগর এলাকার শুক্কুর আলমের মেয়ে প্রতারক শারমিন আক্তার প্রিয়া (২২), চক্রের প্রধান চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩নং সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের বাগপুর গ্রামের বেপারী বাড়ির মৃত দুদু মিয়ার ছেলে মোঃ শাহাবুদ্দিন ওরফে বাচ্চু (৪৫) ও তার স্ত্রী শেলি আক্তার (৩৪)।
চট্টগ্রাম গোয়েন্দো পুলিশের এস আই রাজেশ বড়ুয়া জানান, পরিচিত বিত্তশালীদের টার্গেট করে তালিকা অনুযায়ী সুন্দরী মেয়েদের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে জোরপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করতো চক্রটি। বিভক্ত হয়ে চক্রটি নগরীর বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালাতো। এদের কাছ থেকে রক্ষা পেয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও অনেকে চক্ষু লজ্জায় তা করেননি। এ ধরনের অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামে।
তিনি জানান, গত কয়েক মাস আগে চট্টগ্রামের টেরি বাজারের ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদকে এ রকম প্রতারণার মাধ্যমে অপহরণ করা হয়। পাহাড়তলী থানায় এই সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সদস্য শারমিনকে কৌশলে প্রেমের ফাঁদ পেতে মঙ্গলবার রাতে চান্দগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে ভোররাতে পাঁচলাইশ থানার বেবি সুপার মার্কেট এলাকার সালাম ভিলার একটি ফ্ল্যাট থেকে এই চক্রের মূল হোতা শাহাবুদ্দিন ওরফে বাচ্চু (৪৫) ও তার স্ত্রী শেলি আক্তার (৩৪)কে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ আরো জানায়, নগরীতে এই চক্রের আরো ১৫-১৬ জন রয়েছে। তারা পরিচিত বিত্তশালীদের তালিকা তৈরি করে চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ফোন করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সুযোগ বুঝে তাদেরকে একটি বাসায় নিয়ে আসত চক্রটি। এরপর হাত-পা বেঁধে চালানো হতো নির্যাতন এবং করা হতো সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে ফটোসেশন। মুক্তিপণ হিসেবে পরিবারের কাছে দাবি করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা দিলে অপহৃতদের ছেড়ে দেয়া হতো এবং ঘটনাটি পুলিশকে জানালে ওই ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হতো ভুক্তভোগীদের। কেউ কেউ থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালেও বেশিরভাগই সম্মানের ভয়ে তা এড়িয়ে যেতো।
এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরো বলেন, এ চক্রের সদস্য শারমিন মূল হোতা শাহাবুদ্দীনের দেয়া তালিকা অনুযায়ী টার্গেট করা বিত্তশালীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজটি করতো। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার পর কোন রেস্টুরেন্টে দেখা করার পর পূর্ব নির্ধারিত বাসায় নিয়ে যাওয়া হতো সেই ব্যক্তিকে। এরপর সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর প্রকাশ পেতো তাদের আসল রূপ। শুরু হতো তাদের নির্যাতন ও প্রতারণার নানা কৌশল।
গ্রেপ্তার হওয়া শারমিনও বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করে বলেছে, সে তার মায়ের সঙ্গে নগরীর অলংকার মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো। এক বছর আগে ওই এলাকায় আনোয়ার রাজু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। চাকুরি দেয়ার কথা বলে রাজু তাকে এই পেশায় নিয়ে আসে। পরে এ পেশা থেকে বের হতে চেষ্টা করলেও রাজুর হুমকির কারণে পারেনি। এছাড়া পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে এ চক্রে থাকতে হয়েছে।
এদিকে আটককৃত ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩নং সুবিদপুর পুর্ব ইউনিয়নের বাগপুর গ্রামের বেপারী বাড়ির মৃত দুদু মিয়ার ছেলে মোঃ শাহাবুদ্দিন ওরফে বাচ্চু ও তার স্ত্রী শেলি আক্তার সর্ম্পকে স্থানীয় বাগপুর গ্রামে খোঁজ নিলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ বাচ্চু মিয়া জানান, পুলিশের হাতে আটক সস্ত্রীক শাহাবুদ্দিন ওরফে বাচ্চুর ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে কোন অভিযোগ না থাকলেও তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। সচরাচর সে বাড়িতে আসে না। কয়েক বছর পর পর বাড়িতে এসে স্ত্রী সন্তানদের ভরণ পোষণের জন্য টাকা দিয়ে যায়। ইতিপূর্বে কয়েক বছর পূর্বে তার বিরুদ্ধে এই ধরনের একটি অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম থেকে একটি পুলিশ রিপোর্ট চাওয়া হলে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট দেয়।