মনিরুজ্জামান বাবলু
চট্টগ্রাম বিভাগে গর্বিত মা হলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার শিক্ষিকা শিরিন আখতার খানম। তিনি শনিবার দুপুরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ স্লোগানকে সামনে রেখে তোমরাই বাংলাদেশের আলোকবর্তীকার তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন।
চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমীতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে গর্বিত মা হিসেবে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। ওইসময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান, চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কপোরেশনের পরিচালক জাফর আলম, চট্টগ্রাম সিটি কলেজের প্রফেসর ডা. হজরত আলী প্রমুখ।
একনজরে শিরিন আখতার খানমের জীবন বৃত্তান্ত ঃ
নাম শিরিন আখতার খানম। জন্ম ১ জানয়ারি, ১৯৫৬খ্রি.। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার খাঁকবাড়িয়া গ্রামের মরহুম সেকান্দর হায়াত খানের প্রথম সন্তান। হাজীগঞ্জ উপজেলার সুহিলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ৫ম শ্রেণী সমাপ্ত করে হাজীগঞ্জ আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭২সনে এস.এস.সি পাস করেন। তবে ১৪ বৎসর বয়সে অষ্টম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় শাহরাস্তি উপজেলার শোরসাক গ্রামের মরহুম ফজর আলীর ছোট ছেলে আব্দুল লতিফ (বি.এ.বি.এড) এর সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয়।
বিবাহের ৩ বৎসর পর মেয়ে সন্তান জন্ম হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১৯৭৬ সালে ২য় সন্তান (ছেলে), ১৯৭৮ সালে ৩য় সন্তান (ছেলে) এবং ১৯৮৫ সালে ৪র্থ সন্তান (ছেলে) জন্ম গ্রহন করে।
১৯৮৫ সালে অর্থাৎ বিবাহীত জীবনে ১৪ বৎসর পর ৪ সন্তান রেখে স্বামী মৃত্যুবরণ (০৭/০৩/১৯৮৫ইং) করেন। স্বামীর মৃত্যুর সময় বড় ছেলের বয়স ছিল ১২ বৎসর এবং ছোট সন্তানের বয়স ছিল মাত্র ২.৫০ মাস। স্বামী ছিলেন একজন বেসরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাই কোন পেনশান ছিলো না। ছিলো সামান্য কিছু জমি। যা পরিচর্যা করে অর্থ উপার্জনের কোন লোক ছিলো না। যার কারণে সন্তানদের ভরন-পোষন এবং লেখা পড়ার খরচ যোগাতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে তিনি ১৯৮৬-৮৭ শিক্ষা বর্ষে হাজীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হইতে সি.ইন.এড সমাপ্ত করে ১৯৮৮ সালে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য তার কাছে কোন যাতায়াত খরচ ছিলোনা। ৬ কি.মি পায়ে হেটে উপজেলায় গিয়ে নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে ১১৫০/- টাকা বেতনে চাকুরী শুরু করেন।
সুযোগ্য সন্তানরা ঃ
বড় সন্তান সালমা আক্তার শিল্পী। তিনি বি.এ পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলায় স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে চাকুরী করছেন।
দ্বিতীয় সন্তান মোহাম্মদ এ.টি.এম সাইফুল ইসলাম জুয়েল। তিনি বি.এস.সি, বি.এড, এম.এস.সি ও এম.এড পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর রঘুনাথপুর হাজী এ করিম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
তৃতীয় সন্তান এ.কে.এম জহিরুল ইসলাম সোহেল। তিনি বি.এস.এস (অনার্স), এম.এস.এস (ঢাবি) পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
চতুর্থ সন্তান মোঃ কামরুল আহসান সুয়েট। তিনি বি.এস.সি পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।
গর্বিত মা হিসেবে শিরিন আখতার খানম যা বললেন ঃ
‘আমার সফলতার পিছনে আমার ছোট ভাইদের অবদান সবচেয়ে বেশি এবং আমার এলাকার লোকজন, প্রতিবেশিগণ আমার সন্তানদের লেখা পড়ার বিষয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন। মানসিক এবং যে কোন বিষয়ে এমনকি আর্থিক সার্পোট ও দিয়েছেন। ফলে আমি একজন গর্বিত মা হিসাবে মনে করি। আমি চাই আমার মত মা ঘরে ঘরে জন্ম গ্রহণ করুক। যাতে যত বাধা বিপত্তি আসুক ধৈর্য্য ধরে সকল মা তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় পৌঁছে দেবার পথ সুগম করবে। এ প্রত্যাশায় আমি নিজেকে একজন সফল জননী হিসাবে মনে করি। ’
শিরোনাম:
বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।