মিজানুর রহমান রানা
চাঁদপুরের অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি ডাক্তার বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের হাতে এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছেন। তারা তাই নানা উপঢৌকন পেয়ে অখ্যাত ঔষধ কোম্পানির অচল ঔষধগুলোও প্রেসক্রাইব করেন।
সরেজমিনে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডাক্তারদের চেম্বার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই বাংলাদেশের বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভদের মহড়া। তারা দলবেঁধে প্রতিটি ডাক্তারের চেম্বারের আশেপাশে ঘুর ঘুর করে এবং একজন একজন করে ডাক্তারের সাথে দেখা করে প্রতিটি কোম্পানির ঔষধ স্যাম্পল দিয়ে থাকে। সাদামাটা চোখে এটি একটি সাধারণ চিত্র। এতে কারো কিছুই বলা নেই। কিন্তু ভেতরের খবর হচ্ছে। এসব ঔষধ ডাক্তাররা প্রেসক্রাইব করার পেছনে রয়েছে আরো ভিন্ন চিত্র যা সাধারণ চোখে কখনই চোখে পড়ে না।
ঔষধ কোম্পানির সাধারণ ঔষধগুলো একজন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের গুণে হয়ে যায় অদ্বিতীয় ও অনন্য। এর চেয়ে ভালো ঔষধ বাজারে থাকলেও তা পড়ে থাকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের বাইরে। নগদ নারায়ণ পেয়ে অধিকাংশ ডাক্তার বিভিন্ন কোম্পানির আজেবাজে ঔষধ প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে বাজারে রমরমা অবস্থার সৃষ্টি করেন।
বিশ্বস্ত বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, অখ্যাত এসব ঔষধ বাজারজাত করার জন্যে ঔষধ কোম্পানির এসব এমআর বা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ একজন ডাক্তারকে সাবান, তোয়ালে থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহারের সবকিছুই এমনকি রেফ্রিজারেটর থেকে টিভি পর্যন্ত কোম্পানি থেকে উপহার দিয়ে থাকেন। তাছাড়া যে ডাক্তার যে কোম্পানির অখ্যাত ঔষধগুলো বেশি প্রেসক্রাইব করেন সেই ডাক্তারের জন্য মাস শেষে প্রচুর স্যাম্পল ঔষধ এবং নগদ টাকা-পয়সা উপহার দিয়ে থাকেন। ফলে চাঁদপুরের বেশিরভাগ ডাক্তার বলা যায় এক প্রকার জিম্মিই হয়ে আছেন এসব ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাছে।
বর্তমানে চাঁদপুরের বাজারে যে সব ঔষধের রমরমা অবস্থা যেমন রেনেটার ম্যাক্সপ্রো, রোলাক, জি-থ্রিন, বিগমেট, নরমেন্স, এলজিন, নোরী, রেনজিট, ইজেল, ফিউরিসেপ, স্কয়ারের এলাকট্রল, সেফথ্রি, জিপ, জিপ এসআই, এফানভিটি, ইনসেপটার পেনট্রনিক্স, কিলব্যাক, জেনারেলের ডিলেটা সহ আরো অনেক ঔষধ রয়েছে এসব ঔষধের অত্যাধিক চাহিদার মূলে রয়েছে এসব দৈনিক, মাসিক নানা উপঢৌকন ও উপহার। নগদ নারায়ণের লোভে ডাক্তাররাও দেদারছে এসব ঔষধ রোগীদের জন্যে প্রেসক্রাইব করছেন। ফলে বাজারে কিছু কিছু কোম্পানির ঔষধের রয়েছে যেমন রমরমা ব্যবসা পান্তরে অন্য কোম্পানির ভালো ঔষধও ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের আওতার বাইরে থেকে তা হয়ে পড়ছে মূল্যহীন।
দীর্ঘ পর্যবেণে সরজমিনে দেখা গেছে, চাঁদপুরে ডাক্তারদের কাছে ভিজিট করার জন্যে ঔষধ কোম্পানির এমআর বা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছে। ঢাকা থেকে তাদেরকে ঔষধ বিক্রির জন্যে যে বাধ্যবাধকতা বা মাসিক ঔষধ সেলসের যে ল্যমাত্রা দেয়া হয় তা পূরণ করতে গিয়ে তারা রীতিমতো ডাক্তারদের চেম্বারকে নিজেদের চেম্বার বানিয়ে ফেলে এবং ডাক্তারদের সাথে বিভিন্ন অজুহাতে সম্পর্ক স্থাপন করে সেইসব ঔষধ প্রেসক্রিপশনের লেখার জন্যে চাতক পাখির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে ডাক্তাররা উপহার, নগদ অর্থ প্রাপ্তি এবং ঔষধ কোম্পানির এসব এমআর বা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ঘ্যানঘ্যান উপো করতে না পেরে এবং তাদের মুখরা করতে গিয়েই অখ্যাত ও অপ্রয়োজনীয় ঔষধগুলোও রোগীদের জন্যে প্রেসক্রাইব করেন। এসব ঔষধ রোগীদের তো কোনো মঙ্গল বয়ে আনেই না বরং এসব ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীদের অন্য রোগের সৃষ্টি হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে আরো জানা গেছে, অনেক ডাক্তার আছেন যারা প্রাথমিকভাবে রোগীদের এমন ঔষধ প্রেসক্রাইব করেন, যাতে করে রোগীর রোগ না সারে বরং অযোগ্য অখ্যাত এসব ঔষধ খেয়ে রোগীর রোগ আরো বেড়ে যায়। ফলে ডাক্তারদের পোয়া বারো। রোগীরা আবারও ছুটেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার ভিজিট পায়, কোম্পানির দণিা পায় রোগীও ডাক্তারের বাধ্যগত হয়ে যায়। এভাবেই একের পর এক চলতে থাকে ডাক্তার রোগীর খেলা। তবে যে সব রোগী চাঁদপুরের ডাক্তারদের এসব অপচিকিৎসা সহ্য করে থাকতে পারে শেষ পর্যন্ত তাদের কপালে ভালো প্রেসক্রিপশন হয়তো জোটে। কিন্তু ততোদিনে রোগীর পকেটের অবস্থা সর্বনাশ হয়ে যায়। এভাবেই চলছে চাঁদপুরে অধিকাংশ ডাক্তার-রিপ্রেজেন্টেটিভ আর রোগীর জীবন-মরণ খেলা। এসব দেখার দায়িত্ব কার? যারা এসব দেখভাল করবেন তারা তো নিজেরাই কুম্ভকর্ণের ঘুমে অচেতন!
শিরোনাম:
বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।