প্রতিনিধি
চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে চাঁদপুর শহরে পরপর দু’টি নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১১ এপ্রিল চাঁদপুর শহরের হাজী মহসিন রোডস্থ ডাঃ মোবারক হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রিমিয়ার হাসপাতাল সংলগ্ন ভাড়া বাসায় মৃত ইঞ্জিনিয়ার সফিকুর রহমান চৌধুরীর স্কুল পড়ুয়া ছেলে সাহেদ চৌধুরী নিজ বাসাতেই নির্মমভাবে পরিবারের লোকজনের হাতেই খুন হয়। ঐদিন সকালেই মৃত সাহেদের মেজো বোন চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যায়নরত হীরা চৌধুরীকে প্রেমে বাঁধা দেয়ায় সে তার আপন ছোট ভাই সাহেদকে নির্মমভাবে মাথা ও মুখমণ্ডলে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেজেতে ফেলে রেখে সাহেদের মা নাছরিন জাহান মিতা চৌধুরী ও মেয়ে মনোয়ারা চৌধুরী হীরা বাসা থেকে বের হয়ে চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন এলাকার এক আত্মীয়ের বাসায় চলে যায়। দীর্ঘ ৩ ঘন্টা ঐ বাসায় অবস্থানের পর দুপুর ১২টায় নিজ বাসায় ফিরে এসে মা ও মেয়ে সেদিন এক নাটক তৈরি করেন। তারা সেদিন বলেছিলো, সন্ত্রাসীরা বাসায় ঢুকে সাহেদকে হত্যা করেছে। ঘটনার দিন সাহেদকে প্রিমিয়ার হাসপাতালে যৎ সামান্য চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাহেদকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
সাহেদকে যখন ঢাকায় নেয়া হয়েছিল তখন মনোয়ারা চৌধুরী হীরার কথিত প্রেমিক চাঁদপুর শহরের পুরাতন আদালত পাড়ার বাসিন্দা আশ্রাফ আলী সিকদারের ছেলে কামরুল হাসান সিকাদর মুন সেদিন ঢাকার হাসপাতালে দেখতে যান। সাহেদের খালু ঢাকায় বসবাসকারী শাহেন শাহ্ কারচুপি করে নাছরিন জাহান চৌধুরী মিতা ও মনোয়ারা চৌধুরী হীরাকে ঢাকায় রেখে মৃত সাহেদের লাশ তার গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে এনে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে বলে গ্রামবাসীকে জানিয়ে পারিবারিক কবরে তাকে দাফন করে। সাহেদের হত্যার ২৬ দিন পর শাহেন শাহ্ ও মৃত সাহেদের পরিবারের অন্যান্য লোকদের সাথে পরামর্শ করে চাঁদপুর মডেল থানায় নাছরিন জাহান মিতা চৌধুরী খুনির নাম প্রকাশ না করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ১ মাস ২দিন পর আদালতের নির্দেশে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ ও ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ সাদিকের উপস্থিতিতে কবর থেকে গলিত লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ময়না তদন্ত শেষে পর দিন লাশ পুনরায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। ঐ দিনেই সাহেদের হত্যার সাথে জড়িত থাকার দায়ে তার মেঝো বোন মনোয়ারা চৌধুরী হীরাকে পুলিশ আটক করে। একই সময়ে কথিত প্রেমিক কামরুল হাসান সিকদার মুনাকে পুলিশ গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়। পরদিন সকালে পুনরায় মোবাইল ফোনে ডেকে এনে মুনকে আটক করা হয়। আদালতের নির্দেশে হীরা ও মুনকে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ ৩ দিনের রিমাণ্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে করে কেউ সাহেদ হত্যার বিষয়ে তথ্য পুলিশকে দেয়নি। পুলিশ বাধ্য হয়ে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে পুনরায় জেল হাজতে পাঠায়। কিন্তু একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, রোজা শুরুর পূর্বে সাহেদের প্রকৃত খুনী তার মেঝো বোন মনোয়ারা চৌধুরী হীরাকে জামিনে বের করা হয়েছে। হীরাকে জামিনে আনতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে নাকি মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করা হয়েছে, এমনও গুঞ্জন রয়েছে। আর এসব টাকা দিয়েছেন মৃত সাহেদের সম্পত্তি দখলের জন্য তারই খালু শাহেন শাহ্ ও তার আত্মীয়-স্বজনরা। অপর দিকে নিরীহ আশ্রাফ আলী সিকদারের ছেলে কামরুল হাসান সিকদার মুন খুনি না হয়েও দীর্ঘি ২মাস ৮দিন হাজত খেটে গতকাল রোববার জামিনে বের হয়ে আসে। তার অপরাধ ছিলো কেন সে মনোয়ারা চৌধুরী হীরার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়েছে।
অপরদিকে চাঁদপুর শহরের ২য় হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, চলতি বছরের ২০ মে রাতে। চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া রোডস্থ পাটওয়ারী বাড়িতে সম্পত্তিগত বিরোধকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল মালেক নান্নু পাটওয়ারীকে তারই আপন ছোট ভাই প্রবাসী রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারীর নেতৃত্বে। হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পূর্বে রফিক পাটওয়ারী প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসেন। পূর্ব থেকেই আব্দুল মালেক নান্নু পাটওয়ারীর সাথে রফিক পাটওয়ারীর সম্পত্তিগত বিরোধ চলে আসছিলো। আর ঐ বিরোধকে কেন্দ্র করেই রফিক পাটওয়ারী ভাড়াটে খুনি দিয়ে ২০মে রাতে আব্দুল মালেক নান্নু পাটওয়ারীকে হাত পা বেঁধে চোখ তুলে ও হাত পায়ের রগ কেঁটে নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৪ মে বুধবার আব্দুল মালেক নান্নু পাটওয়ারী ১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে। তার কোন ব্যাংক একাউন্ট না থাকায় ঐ টাকা ঘরে এনে রাখে। খুনিরা আব্দুল মালেক নান্নু পাটওয়ারীকে হত্যার পর ঘর থেকে ঐ টাকা নিয়ে যায়। নান্নু পাটওয়ারী হত্যার ঘটনায় তারই প্রবাসী বড় ভাই হানিফ পাটওয়ারী বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১০/১৫ দিন পূর্বে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম ও চাঁদপুর মডেল থানার এএসআই আহসানুজ্জামান লাবু তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে রফিক পাটওয়ারীকে আটকের জন্য ঢাকার সাভার, দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ে অভিযান চালায়। এ তিনটি জেলায় অবস্থান নিয়ে রফিক পাটওয়ারী তার নাম পরিবর্তন করে আব্দুর আজিজ ছদ্মনাম ব্যবহার করে নতুন ব্যাংক একাউন্ট খুলেন। ঐ একাউন্টে নান্নু পাওয়ারীকে হত্যার সময় লুট করে নেয়া সম্পত্তি বিক্রির ১৬ লাখ টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকা আব্দুল আজিজ পাটওয়ারীর একাউেন্টে জমা করা হয়। পুলিশের অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে রফিক পাটওয়ারী প্রকাশ আব্দুর আজিজ পালিয়ে যায়। ৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এ ২টি মামলার মধ্যে আব্দুল মালেক নান্নু পাটওয়ারীর হত্যাকারী এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৫ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।